ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

দ্বিতীয় বছরে ‘ক্যাস্টাওয়ে অন দ্য মুন’

গোলাম মোর্শেদ সীমান্ত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩৯, ১৩ এপ্রিল ২০২১  
দ্বিতীয় বছরে ‘ক্যাস্টাওয়ে অন দ্য মুন’

‘ক্যাস্টাওয়ে অন দ্য মুন’ একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কেন্দ্রিক গ্রুপ। এখানে নানা বয়সের মানুষ প্রকাশ করছেন নিজেদের সৃজনশীল কর্মকাণ্ড। ইতোমধ্যে চার লাখের অধিক সদস্য যুক্ত হয়েছে এই গ্রুপে। গতকাল ১২ এপ্রিল এক বছরে পা দিয়েছে গ্রুপটি। এক বছরের পথচলার গল্প জানাচ্ছেন গোলাম মোর্শেদ সীমান্ত। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে ভিন্ন কিছু করা সম্ভব তার উদাহরণ একদল তরুণের এই উদ্যোগ। ২০২০ সালের ১২ এপ্রিল হুট করেই শুরু হয় গ্রুপটি। সবাই নিজের গাওয়া গান, আঁকা ছবি, নাচের ভিডিও, মনোমুগ্ধকর তোলা ছবি কিংবা ভিডিও প্রকাশ করার সুযোগ পাবে এই গ্রুপে। যেমন ভাবনা তেমনই কাজ, বর্তমানে সবার প্রতিভাগুলো পৌঁছে যাচ্ছে লক্ষাধিক মানুষের কাছে ‘ক্যাস্টএওয়ে অন দ্যা মুন’ এর মাধ্যমে। বর্তমানে সারা বাংলাদেশ থেকে এক হাজারের অধিক প্রতিনিধি কাজ করছে এই প্ল্যাটফর্মটির সঙ্গে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ভারত, ভুটান, পাকিস্তানসহ প্রায় বিশ্বের বহু দেশের মানুষ যুক্ত রয়েছেন এই চমৎকার উদ্যোগের সঙ্গে। 

বিভিন্ন সময়ে নানা প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হচ্ছে গ্রুপটিতে। বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকেই অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাচ্ছে প্রতিযোগীরা। বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম আন্তর্জাতিক মেগা ইভেন্ট চলছে গ্রুপটিত্ ‘Aakar-আকার Presents  COTM MEGA FEST 2021’ আয়োজনটি মূলত অনলাইনভিত্তিক। প্রতিযোগিতাটিতে দেশের স্বনামধন্য বিচারকদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বিচারকেরাও রয়েছেন প্রতিভাগুলোকে খুঁজে বের করার জন্য। পুরো আয়োজনটা ১০টা সেগমেন্টে ভাগ করা হয়েছে। আয়োজনটি শুরু হয়েছে গত ১৭ মার্চ থেকে। বিজয়ীদের জন্য রয়েছে ৫০ হাজার টাকার সম্মাননা। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য প্রয়োজন নেই রেজিস্ট্রেশন ফি, জানায় আয়োজকেরা। 

বিশাল এই প্ল্যাটফর্মের পেছনের মানুষটা আরিফা শবনম। বর্তমানে ভিকারুননিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ছে। ছোটবেলা থেকেই সহশিক্ষা কার্যক্রমগুলোতে আনাগোনা আরিফার। ছবি তোলার প্রতি রয়েছে ভীষণ ঝোঁক। বিশাল এই প্ল্যাটফর্মের পেছনে আরেকজন শাহ্ জালাল আলিফ। বর্তমানে তিনি আহসানুল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইইই নিয়ে পড়াশোনা করছেন। ফটোগ্রাফি ভালোবাসেন, বিশেষত স্ট্রিট এবং লাইফস্টাইলে রয়েছে বেশি ঝোঁক। সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে রয়েছে ঔশি শেখ। সিলেট কলেজে প্রথম বর্ষে পড়ছে সে। ক্যালিগ্রাফি করতে ভালেবাসে ভীষণ। 

প্রতিষ্ঠাতা আরিফা শবনামের কাছে প্রশ্ন করা হয়েছিল, অন্য অনেক গ্রুপ রয়েছে, তার মধ্যে থেকে আপনাদের গ্রুপের ভিন্নতা কী। সে বলে, আমাদের গ্রুপের প্রতিটা সেগমেন্টের জন্য আলাদা টিম রয়েছে। তারা সবাই প্রতিনিয়ত গ্রুপগুলো মনিটরিং করে থাকে। ফটোগ্রাফি ডিপার্টমেন্ট সামলাচ্ছেন শাহ জালাল আলিফ, নাহিম মাশরুর, শাহরুখ সাজিদ এবং সাফিন হায়দার। 

নাচের ডিপার্টমেন্টে রয়েছেন ইমামা আসমি এবং সুপ্রভাত বেলা। আর্ট ডিপার্টমেন্ট  পুরোটাই দেখছেন মাকসুদুল আমিন রয়াল। ডিজিটাল আর্ট ডিপার্টমেন্ট দেখছেন দেবজ্যোতি কথা। গান ডিপার্টমেন্ট সামলাচ্ছে জারিন তাসনিম রাত্রি, রাইসা রিয়াজ। ফেইসআর্ট ডিপার্টমেন্টে রয়েছেন মালিহা মমতাজ আনন্দি, নাফীসা তাসনিম দিয়া এবং সায়মা তামান্না। ম্যানুপুলেশনের দায়িত্বে আছেন তানভির হোসেন তুর্জো। 

এদিকে ম্যানেজমেন্ট এবং মার্কেটিংয়ের হেড হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন রাকিবুল ইসলাম এবং সাব হেড হিসেবে আছেন আনিসা ইসলাম। এছাড়াও ইভেন্ট অর্গানাইজার হেড হিসেবে আছেন সুমাইয়া আহমেদ, আফিয়া তাবাসসুম রুপালি, আনিকা তাবাসসুম সোনালি। আমাদের প্ল্যাটফর্মের অন্যতম আকর্ষণ উইকলি লাইভ শো, সেই সম্পূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন সামিয়ান আহমাদ। 

এছাড়াও আমাদের সঙ্গে রয়েছেন রুপম আক্তার, আদনান রাহমান, ফাইরুজ নাওয়ার। আমরা সবাই মিলে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করি গ্রুপের কোয়ালিটি মেইটেইন করার! কারণ আমাদের কাছে কোয়ানটিটির থেকেও কোয়ালিটি বেশি ম্যাটার করে। 

আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি কাজটা ছোট ছোট করে ভাগ করে আমাদের জায়গা থেকে সঠিক প্রতিভাটাকে সবার মধ্যে তুলে ধরতে। আপনাদের গ্রুপ নিয়ে অনেক সময় সমালোচনা দেখা যায়, এই বিষয়টা কীভাবে দেখছেন? উত্তরে আরিফা বলেন, গ্রুপ বড় হচ্ছে। ভিন্ন বয়সের মানুষ রয়েছে গ্রুপে। তাদের সবার মানসিকতা এক রকম নয়। আমরা সমস্যাগুলো সমাধান করার চেষ্টা করি। কিন্ত আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে আর্টিস্টদের নিরাপত্তা। সেটা আমরা দেওয়ার চেষ্টা করি। 

বর্তমান সময়ে এধরনের আরও অনেক প্ল্যাটফর্মের আত্নপ্রকাশ হয়েছে, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্য এটি খুব পজেটিভ একটি বিষয়। আমরা মানুষের জন্য কাজ করছি, কোনো দ্বিধা ছাড়া সময় দিয়েছি এই প্লাটফর্মটি গুছিয়ে সুন্দর করে তুলতে। তার বিনিময় মানুষ আমাদের ভালোবেসেছে, অনেক অনেক ভালোবেসা পেয়েছি বিগত ১ বছর। আবার অনেক ঘৃণাও পেয়েছি। তবে আমরা কৃতজ্ঞ সবার প্রতি। এত বড় একটা প্ল্যাটফর্মের মেইনটেনেন্স একটা চ্যালেঞ্জ আমাদের জন্য, যেটি আমাদের প্রতিনিয়ত ফেস করতে হচ্ছে। এই কাজটিকে সহজ করতে প্রতিনিয়ত সাহায্য করে যাচ্ছেন আমাদের ডেডিকেটেড প্যানেল মেম্বাররাই। 

সে আরও বলে, আমাদের কাছে পজিটিভ বিষয় মনে হয় সোশ্যাল মিডিয়া কেন্দ্রিক প্রতিভা প্রকাশের একটা মাধ্যম তৈরি হয়েছে। আগে মানুষ নিজের অ্যাকাউন্টে পোস্ট করতো, যেখামে কিনা ফ্রেন্ডলিস্টের বাইরে কেউ দেখতে পেত না। প্রতিভা প্রকাশটা বন্ধু মহল পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এখন গ্রুপে পোস্ট করার মধ্যে সে তার, প্রতিভা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য একটা প্ল্যাটফর্ম পেয়েছে, যেখানে দেশের মানুষ ছাড়াও বাইরের হাজারো মানুষ দেখছেন। 

আমাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনার মধ্যে প্রথমটি হলো এই প্ল্যাটফর্মটি আরও বড় করা এবং আর্টিস্টদের নির্ভরতার একটি জায়গায় নিয়ে যাওয়া। ২০২১ সালের শেষের দিকে ঢাকায় বিশাল পরিসরে অফলাইন ইভেন্ট আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। 

প্রথম বছর পূর্তি উপলক্ষে করোনা মহামারির কারণে অনলাইনে উৎযাপন করা হচ্ছে ভিন্নভাবে। সাত দিনব্যাপী এক প্রাণবন্ত আড্ডার আয়োজন করা হয়েছে ভার্চুয়াল মাধ্যমে। এই আয়োজনে যুক্ত হবেন নির্মাতা মাবরুর রশীদ বান্নাহ, অভিনেতা খাইরুল বাশার, সাদাত রাহমান, মনোজ প্রামাণিক৷ গায়ক জোহাদ রেজা, রাহুল আনন্দ এবং শেষ দিন যুক্ত হবেন গুণী নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

ঢাকা/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়