ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ধন ধান্য পুষ্প ভরা গানের অমর রচয়িতা

রুহুল আমিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ১৯ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ধন ধান্য পুষ্প ভরা গানের অমর রচয়িতা

রুহুল আমিন : ধন ধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা/তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা/ও সে যে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা/এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি/সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি/সে যে আমার জন্মভূমি, সে যে আমার জন্মভূমি।

দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, যিনি ডি এল রায় নামেও পরিচিত ছিলেন।তিনি একাধারে কবি, নাট্যকার ও সংগীতস্রষ্টা। ১৮৬৩ সালের ১৯ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে জন্মগ্রহণ করেন।

দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের বাবা কার্তিকেয়চন্দ্র রায় ছিলেন কৃষ্ণনগর রাজবংশের দেওয়ান। তার বাড়িতে বহু গুণীজনের সমাবেশ হত। কার্তিকেয়চন্দ্র নিজেও ছিলেন একজন বিশিষ্ট খেয়াল গায়ক ও সাহিত্যিক। আর সাংস্কৃতিক পরিবেশ দ্বিজেন্দ্রলালের প্রতিভার বিকাশে বিশেষ সহায়ক হয়। তার মায়ের নাম প্রসন্নময়ী দেবী। দ্বিজেন্দ্রলালের দুই ভাই রাজেন্দ্রলাল ও হরেন্দ্রলাল এবং এক ভাবি মোহিনী দেবীও ছিলেন বিশিষ্ট সাহিত্যস্রষ্টা।

১৮৭৮ সালে দ্বিজেন্দ্রলাল  প্রবেশিকা পরীক্ষায় বৃত্তি লাভ করেন। এফ. এ. পাস করেন কৃষ্ণনগর কলেজ থেকে। পরে হুগলি কলেজ থেকে বি.এ. এবং ১৮৮৪ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এম.এ. পাস করেন। এরপর কিছুদিন ছাপরার রেভেলগঞ্জ মুখার্জ্জি সেমিনারীতে শিক্ষকতা করেন।পরে সরকারি বৃত্তি নিয়ে ইংল্যান্ড যান কৃষিবিদ্যা শিক্ষা করার জন্য। রয়াল এগ্রিকালচারাল কলেজ ও এগ্রিকালচারাল সোসাইটি হতে কৃষিবিদ্যায় FRAS এবং MRAC ও MRAS ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৮৮৬ সালে ইংল্যান্ডে থাকাকালীন প্রকাশিত হয় তার একমাত্র ইংরেজি কাব্যগ্রন্থ Lyrics of India । এই বছরই দেশে প্রত্যাবর্তন করে সরকারি কর্মে নিযুক্ত হন দ্বিজেন্দ্রলাল।

তিনি জরিপ ও কর মূল্যায়ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন এবং মধ্যপ্রদেশে সরকারি দপ্তরে যোগ দেন । পরে তিনি দিনাজপুরে সহকারী ম্যাজিস্ট্রেট পদে নিয়োগ পান । তিনি ১৮৮৭ সালে প্রখ্যাত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক প্রতাপচন্দ্র মজুমদারের মেয়ে সুরবালা দেবীকে বিবাহ করেন ।

১৮৯০ সালে বর্ধমান এস্টেটের সুজামুতা পরগনায় সেটেলমেন্ট অফিসার হিসেবে কর্মরত অবস্থায় কৃষকদের অধিকার বিষয়ে তার সঙ্গে বাংলার ইংরেজ গভর্নরের বিবাদ ঘটে । ১৯১৩ সালে শারীরিক অসুস্থতার কারণে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেন ।

দ্বিজেন্দ্রলাল সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে উঠেছেন।তাদের বাড়িতে  ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, দীনবন্ধু মিত্র প্রমুখের যাতায়াত ছিল। এই রকম পরিবেশে কৈশোরেই তিনি কবিতা রচনা শুরু করেন ।  ১৯০৫ সালে তিনি কলকাতায় ‘পূর্ণিমা সম্মেলন’ নামে একটি সাহিত্য সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন ।

১৯১৩ সালে তিনি ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব নেন ।  এই পত্রিকা প্রকাশের ভার নিয়েছিলেন গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় অ্যান্ড সন্স। এই পত্রিকার জন্য তিনি সহকারী হিসেবে নিয়েছিলেন অমূল্যচরণ বিদ্যাভূষণকে। কিন্তু পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হওয়ার আগেই ১৯১৩ সালের  ১৭ মে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় মারা যান।

অল্প বয়স থেকেই কাব্য রচনার প্রতি তার ঝোঁক ছিল। তিনি প্রায়  ৫০০ গান রচনা করেন। এই গানগুলি বাংলা সংগীত জগতে দ্বিজেন্দ্রগীতি নামে পরিচিত। তার বিখ্যাত গান  ‘ধনধান্যে পুষ্পে ভরা’, ‘বঙ্গ আমার! জননী আমার!’ আজো সমান জনপ্রিয়। তিনি অনেকগুলি নাটক রচনা করেছেন। বিখ্যাত নাটকগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য একঘরে, কল্কি-অবতার, বিরহ, সীতা, তারাবাঈ, দুর্গাদাস, রাণা প্রতাপসিংহ, মেবার-পতন, নূরজাহান, সাজাহান, চন্দ্রগুপ্ত, সিংহল-বিজয় ইত্যাদি। আর তার রচিত কাব্যগ্রন্থগুলির মধ্যে জীবদ্দশায় প্রকাশিত আর্যগাথা (১ম ও ২য় ভাগ) ও মন্দ্র বিখ্যাত।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ জুলাই ২০১৭/রুহুল/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়