ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ধর্ষকের মামলায় হয়রান ধর্ষিতার পরিবার

আহমদ নূর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪৬, ৯ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ধর্ষকের মামলায় হয়রান ধর্ষিতার পরিবার

ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত বাচ্চু মিয়া

ঘটনার দেড় বছর পেরিয়ে গেছে। বাক প্রতিবন্ধি মেয়ের ধর্ষণের বিচার পাননি চা বিক্রেতা বাবা। মামলার আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে এলাকায় স্বদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে। শুধু তাই নয়, পাল্টা নির্যাতনের শিকার ওই তরুণীর বাবাকে মাদক ও ফৌজদারি মামলার আসামি করে হয়রানি করা হচ্ছে।

পুলিশ বলছে, এ ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে।

ঘটনার সূত্রপাত ২০১৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর থানার বাসুদেব গ্রামে। পাশের বাড়ি থেকে দুধ আনতে গিয়ে প্রতিবেশী আব্দুস সাত্তারের ছেলে বাচ্চু মিয়ার (৫২) লালসার শিকার হন ২০ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী তরুণী।

পরদিন তরুণীর মা বাদী হয়ে তিনজনকে আসামি করে ব্রাহ্মবাড়িয়া সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রধান অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয়া হয়। আসামি ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করেন বলে আদালতকে জানান তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই ধর্মজিত সিংহ।

ওই সময় তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতকে বলেন, ‘অভিযুক্ত প্রতিবন্ধী তরুণীকে ধর্ষণের বিষয়টি আমার কাছে স্বীকার করলেও আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার সময় বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান। আসামি নারী লোভী প্রকৃতির লোক বলে এলাকায় সুপরিচিত। আগেও অনেক নারী তার মাধ্যমে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।’

জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ধর্ষক বাচ্চু মিয়া আদালত থেকে জামিন নিয়ে ছাড়া পেয়েছেন। যদিও তার জামিনের বিরুদ্ধে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি আপিল করেছে ভুক্তভোগী পরিবার।

ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, জামিনে মুক্ত হওয়ার পর বাচ্চু মিয়া তাদেরকে নানা রকমের হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছে। এছাড়া স্বাক্ষীদের আদালতে সাক্ষ‌্য না দিতে আসামি ও তার ভাইয়েরা চাপ দিচ্ছে।

নিপিড়নের শিকার তরুণীর বাবা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ওই ঘটনার পর আমার মেয়ে ঘর থেকে বের হয় না। বাচ্চু মিয়া জামিনে বের হওয়ার পর থেকে সে আরো বেশি ভীত। তারা হয়রানিমূলক মামলাসহ নানাভাবে আমাদের হয়রানি করছে। আমি সরকারের কাছে এর বিচার চাই।’

তিনি বলেন, ‘ধর্ষক বাচ্চু মিয়া ও তার পরিবার অনেক বিত্তশালী। গ্রামের কিছু লোক দিয়ে সাক্ষীদের হুমকি দেয় তারা। তাদের কারণে বাড়িতে আমার পরিবার ভয়ে দিন কাটায়।’

এদিকে ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর বাচ্চু মিয়ার ছেলে বিল্লাল মিয়া এবং ৫ ডিসেম্বর বাচ্চু মিয়ার ভাই বাহার মিয়া আদালতে আলাদা দুটি মামলা দায়ের করেন।

বিল্লাল মিয়ার মামলার অভিযোগ বলা হয়, ভুক্তভোগীর পরিবার হত্যার উদ্দেশ্যে তার বাবা ও চাচার উপর হামলা করেছে। হত্যার উদ্দেশ্যে যখম, শ্লীলতাহানী ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ আনেন বাহার মিয়া।

আদালত দুটি মামলার তদন্ত করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন।

মামলার বিষয়ে তরুণীর বাবা বলেন, ‘আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ২৫ বছরের বেশি সময় ধরে চা বিক্রি করি। বাড়িতে কম যাওয়া হয়। তারা আমাকে ও আমার পরিবারকে হয়রানি করার জন্য মিথ্যা মামলা দিয়েছে।’

মামলা দুটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ১ ডিসেম্বর দায়ের করা মামলায় বলা হয়েছে, ২৯ নভেম্বর রাত ৮টায় হামলা হয়েছে। হামলাকারী ছিলেন পাঁচ জন। ৫ ডিসেম্বর দায়ের করা মামলায় বলা হয়েছে ৩০ নভেম্বর ভোর ৫টায় হামলা হয়েছে। হামলাকারী ছিলেন ওই পাঁচ জন।

বক্তব্য জানতে বাহার মিয়ার মোবাইলে নাম্বারে ফোন দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

উপ-পরিদর্শক ধর্মজিত সিংহ বলেন, ‘ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় বাচ্চু মিয়ার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে। মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। তবে শুনেছি, আসামি উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছে।’

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ‌্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের প্রতিবাদে ধর্ষক মজনুর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গত চার দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন চলছে। বৃহস্পতিবার সাধারণ শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে রাজু ভাস্কর্যে মানববন্ধন করেছে। সেই মানববন্ধনে যোগ দেন টিএসসির সেই পরিচিত চা বিক্রেতা।

মানববন্ধনে তাকে প্ল্যাকার্ড হাতে দেখা গেছে। এসময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীসহ তার প্রতিবন্ধী মেয়ের ধর্ষণের বিচার চান। বিচার চেয়ে দেওয়া বক্তব্যের মাঝে তিনি কেঁদে ফেলেন।


ঢাকা/নূর/ইয়ামিন/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়