ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ধর্ষণের অভিযোগ বাড়ছে, প্রমাণ মিলছে কম

জে.খান স্বপন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫২, ৭ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ধর্ষণের অভিযোগ বাড়ছে, প্রমাণ মিলছে কম

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: বরিশালে প্রতি মাসেই বাড়ছে ধর্ষণের অভিযোগকারী নারী ও শিশুর সংখ্যা। কিন্তু সে অনুযায়ী প্রমাণ মিলছে না।

চলতি বছরের ৬ মাসে বিভিন্ন থানায় মামলা দায়েরের পর বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে ধর্ষণের মেডিকেল পরীক্ষা করিয়েছেন ১৫৩ নারী ও শিশু। আর চলতি মাসের ৭ দিনে এসেছেন ৭ জন।

এদিকে ধর্ষণের পর অসচেতনতায় আলামত নষ্ট করায় ফরেনসিক রিপোর্টে ধর্ষণ প্রমাণিত হয়েছে মাত্র ৩০ ভাগ। তবে ১৮ বছরের নিচে শিশু ও কিশোরি ধর্ষণের অভিযোগকারীদের ক্ষেত্রে ধর্ষণ প্রমানিত হয়েছে ৬০ ভাগ।

দেখা যায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ধর্ষণ প্রমাণিত না হওয়ায় প্রাপ্য বিচার বঞ্চিত হচ্ছেন অভিযোগকারীরা। তাই ধর্ষণের পর আলামত নষ্ট হওয়ার আগেই দ্রুত নিকটতম থানা পুলিশকে অবহিত করার পরামর্শ দিয়েছে ফরেনসিক বিভাগ।

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, চলতি বছরে বরিশাল বিভাগ জুড়ে যৌন হয়রানি কিংবা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এমন অভিযোগকারী নারী ও শিশুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার বিভিন্ন থানায় মামলা দায়েরের পর গত ৬ মাসে পুলিশের মাধ্যমে ফরেনসিক বিভাগে ধর্ষণের মেডিকেল পরীক্ষা করিয়েছেন ১৫৩ নারী ও শিশু। এ ছাড়া চলতি মাসের ৭ দিনে এসেছেন ৭ জন। ২০১৮ সালের ১২ মাসে এর সংখ্যা ছিলো ২৪২ জন।

প্রতি মাসেই ভিকটিমের সংখ্যা বাড়ছে বলে নিশ্চিত করেছেন ফরেনসিক বিভাগ। চলতি বছরের জুন মাসে ৩০,  মে মাসে ৩৯ জন, এপ্রিলে ২৬ জন, মার্চে ২৫ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৬ জন ও জানুয়ারিতে ১৭ নারী- শিশু ফরেনসিক বিভাগ থেকে ধর্ষণের মেডিকেল পরীক্ষা করিয়েছেন।

চলতি বছরে বরিশাল মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে ধর্ষণের মেডিকেল পরীক্ষা করাতে আসা ১৬০ জন নারী-শিশুর মধ্যে বরিশাল জেলার ১২২ জন ও বরগুনার জেলার ২২ জন। এছাড়া ৪ জন করে পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালী ও ঝালকাঠী জেলা থেকে এসেছেন।

বরিশাল জেলার ওই ১২২ জনের মধ্যে বরিশাল মেট্রোপলিটনের চার থানা পুলিশের মাধ্যমে এসেছেন ৩৯ জন। এরপর গৌরনদী থানা থেকে ২২ জন, বাকেরগঞ্জ থানা থেকে ১২ জন, হিজলা ও উজিরপুর থানা থেকে ৯ জন, মুলাদী, বানারীপাড়া ও মেহেন্দিগঞ্জ থানা থেকে ৭ জন করে, আগৈলঝাড়া থানা থেকে ৬জন ও বাবুগঞ্জ থানা থেকে ৪ জন ফরেনসিক বিভাগে ধর্ষণের মেডিকেল পরীক্ষা করিয়েছেন।

এছাড়া ওই ১৬০ জনের মধ্যে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি হয়ে বিভিন্ন থানায় মামলা দায়েরের পর ফরেনসিক বিভাগে ধর্ষণ ও বয়স নির্ধারণ পরীক্ষা করিয়েছেন ৫৯ জন।

চলতি বছর ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে পরীক্ষা করতে আসা ১৬০ জনের মধ্যে ১৮ বছরের শিশু ও কিশোরির সংখ্যাই বেশি।

এদিকে ফরেনসিক বিভাগে ধর্ষণের মেডিকেল পরীক্ষায় অধিকাংশ ধর্ষণ প্রমাণিত হচ্ছে না। এর অন্যতম কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সেখানকার সহকারী অধ্যাপক ডাঃ এবিএম নাজমুল হুদা বলেন, ‘ধর্ষণের পর ধর্ষিতার অসচেতনতা এর অন্যতম কারণ। যৌন হয়রানি কিংবা নির্যাতনের শিকার অধিকাংশ নারী ও শিশুর অসচেতনতায় আলামত নষ্ট করেন। যেমন- ধর্ষণের পর গোসল করা কিংবা কাপড়-চোপড় ধোয়া বা থানায় অভিযোগ করতে দেরি করা। সে ক্ষেত্রে ধর্ষণের পর ধর্ষকের শাস্তি নিশ্চিত করতে হলে ধর্ষিতাকে অবশ্যই দ্রুততার সাথে নিকতম থানা পুলিশকে অবহিত করতে হবে।’

বরিশাল ফরেনসিক বিভাগের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় যৌন নির্যাতন বা হয়রানির আইন কঠোর হওয়ায় কোন কোন ক্ষেত্রে এটি প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে ব্যবহার করা হচ্ছে। যার প্রমাণ মিলেছে ধর্ষিত হয়েছেন বলে দাবী করে পুলিশের মাধ্যমে ফরেনসিক বিভাগে ধর্ষণ পরীক্ষা করাতে আসা একাধিক নারীর সাক্ষাতকারের মাধ্যমে। এমনকি তাদের ধর্ষণ প্রমাণিত হয়নি।’

 

রাইজিংবিডি / বরিশাল/ ৭ জুলাই ২০১৯/ জে. খান স্বপন/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়