ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

নতুন নেতৃত্ব খুঁজতে সম্মেলনে আ.লীগ

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৩৯, ২০ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নতুন নেতৃত্ব খুঁজতে সম্মেলনে আ.লীগ

ইতিহাস, ঐতিহ্য আর গর্বের সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে আগামীর জন্য নতুন নেতৃত্ব খুঁজতে ২১তম জাতীয় সম্মেলনে বসছে আজ।

‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে গড়তে সোনার দেশ, এগিয়ে চলেছি দুর্বার, আমরাই তো বাংলাদেশ’-এই স্লোগানকে ধারণ করে শুক্রবার বিকেল ৩টায় দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলন শুরু হবে।

সম্মেলন ঘিরে এরই মধ্যে সারাদেশ থেকে কাউন্সিলর ও ডেলিগেটররা রাজধানীতে এসে পৌঁছেছেন। তাদের কাছে আমন্ত্রণপত্রসহ পৌঁছে দেয়া হয়েছে উপহার সামগ্রী। সম্মেলনকে সামনে রেখে নেতাকর্মীদের কাছে দুটি বিষয় সবচেয়ে বেশি আলোচনা আসছে। এর মধ্যে একটি- আগামী দিনের সম্ভাব্য নেতৃত্ব সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সায়মা ওয়াজেদ পুতুল কি এবার আসছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে? অন্যটি দলের সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন কে?

এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে শুক্রবার ২১তম সম্মেলন উদ্বোধন করবেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করে সম্মেলন উদ্বোধন করবেন তিনি। সম্মেলনে প্রায় সাত হাজার কাউন্সিল ও সাড়ে সাত হাজার ডেলিগেটসহ অর্ধ লক্ষাধিক নেতাকর্মী অংশ নেবেন বলে জানা গেছে। সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশন ২১ ডিসেম্বর শনিবার সকাল ১০ টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হবে।

যে প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে নেতাকর্মীরা

নেতাকর্মীদের কাছে তুমুল জনপ্রিয়তা এবং দলে তার অপরিহার্যতার কারণে রেকর্ড নবমবারের মতো আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পাচ্ছেন শেখ হাসিনা। বিষয়টি নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই।

গত কয়েকদিন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এবং দলের কার্যালয় ঘুরে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, প্রতি সম্মেলনের আগে সাধারণ সম্পাদক কে হচ্ছে সেটি নিয়ে কিছুটা ধারনা পাওয়া গেলেও এবার সেই সুযোগ নেই।

সাধারণ সম্পাদক পদে যাদের নাম আলোচনায় আছে, তারা তো বটেই নীতি নির্ধারণী পর্যায়েরও কারো কাছে কোনো তথ্য নেই। কেউ কেউ বিভিন্ন নেতার পক্ষে নিজের মতো করে যুক্তি দাঁড় করিয়ে পদটির জন্য যোগ্য হিসেবে মূল্যায়ন করছেন। তবে সাধারণ সম্পাদক পদটি এবার সবচেয়ে বড় চমক হিসেবে রাখছেন শেখ হাসিনা। বিষয়টি নিয়ে সম্মেলনে নিয়ে নেতাকর্মীদের আগ্রহ বাড়িয়ে দিয়েছে শতগুণ।

সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য এবার আলোচনায় আছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বিএম মোজাম্মেল হক, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ, কেন্দ্রীয় সদস্য আজমত উল্লাহ খান।

এই প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কাউন্সিলরদের মাইন্ড সেট আমাদের নেত্রী ভালো করেই জানেন। আমাদের কাউন্সিলররাও তাকিয়ে থাকবে আমাদের নেত্রী কাকে চান কীভাবে চান। কীভাবে নেতৃত্ব থাকবে। নতুন নেতৃত্বকে কোন মডেলে সাজাবেন তার টিম। এ ব্যপারে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। একুশ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। সেটা আল্লাহ পাক জানেন জানে, আর নেত্রী জানে। আমি কিছু জানি না।’

সম্মেলনের লক্ষ্যের কথা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের এই সম্মেলনের মূল লক্ষ্য হবে গত নির্বাচনে আমাদের নেত্রী দেশ ও জাতির কাছে যে এজেন্ডা দিয়েছেন, যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সেই প্রতিশ্রুতি পালনে, আমাদের নেত্রীর ভিশন বাস্তবায়নের উপযোগী শক্তি হিসেবে আমরা আওয়ামী লীগের নতুন-পুরাতন মিলিয়ে ঐতিহ্য এবং প্রযুক্তি মিলিয়ে, একটা ফাইন ব্যালেন্স করে আওয়ামী লীগকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।’

এদিকে গত সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার দুই সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে নিয়ে আগের সম্মেলনেও আলোচনা ছিল। যদিও শেষ পর্ন্ত তাদের কমিটিতে দেখা মেলেনি। এবার একই ধরনের আলোচনা আছে। তবে এই প্রসঙ্গে দলের নেতারা বলছেন, এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।

কেমন পরিবর্তন আসছে

দলীয় সূত্র বলছে, নেতৃত্ব বাছাইয়ের এই ঘুর্ণিতে বর্তমান কমিটিতে আছেন এমন অনেক নেতা পদ হারাবেন। আবার প্রথমবারের মতো নতুন করে কমিটিতে জায়গা পাচ্ছেন কেউ কেউ। দলের শীর্ষ পর্যায়ের দায়িত্বশীল পদগুলোতেও দায়িত্বের পদবণ্টন হবে। এতে গত তিন বছরে এসব নেতাদের খতিয়ানের হিসাব-নিকাশের মূল্যায়নে ঘটবে উত্থান-পতন। আর এই পুরো প্রক্রিয়া নজরদারি করবেন একজন, তিনি নেতাকর্মীদের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল এবং দলের একমাত্র অপরিহার্য নেতা শেখ হাসিনা।

এবারের সম্মেলনের আবহ অন্যরকম। দলের মধ্যে ‘অপরাধের’ বিরুদ্ধে চলমান শুদ্ধি অভিযানের ঢেউ লাগবে এই সম্মেলনেও। বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে এমন নেতা কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে ছিটকে পড়বেন। পদ হারাবেন সাংগঠনিকভাবে নিস্ক্রিয় এমন নেতাও। আওয়ামী লীগের প্রতিটি সম্মেলনেই নেতা-কর্মীদের চমকে দেওয়ার মতো কিছু না কিছু ঘটে থাকে। এবার আরো বড় চমক উপহার দেবেন দলের হাইকমান্ড।

নেতৃত্বের বাছাইয়ের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে জননেত্রী শেখ হাসিনা সব সময় দুরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন। এবারের কমিটিতেও সৎ, যোগ্য এবং পরীক্ষিতদেরই আনবেন তিনি।’

নতুন নেতৃত্ব বেছে নেয়ার এই প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন হতে পারে সভাপতিমণ্ডলী, সম্পাদকমণ্ডলী ও কেন্দ্রীয় বেশ কিছু সদস্য পদে। সংযোজন-বিয়োজনের এই প্রক্রিয়া বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ নেতা বাদ পড়তে পারেন। তরুণ প্রতিশ্রুতিশীল সাবেক ছাত্র নেতারা স্থান পাবেন এবারের কেন্দ্রীয় কমিটিতে। বিভিন্ন জেলার ক‌্যারিশমেটিক অনেক নেতা ঠাঁই পেতে পারেন কেন্দ্রীয় কমিটিতে।

প্রস্তুত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান

এরই মধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের এলাকায় ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড লাগানো হয়েছে। মৎস্যভবন থেকে শাহবাগ পর্যন্ত রাস্তাজুড়ে শোভা পাচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। পাশাপাশি লাগানো হচ্ছে আওয়ামী লীগের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিত্রসংবলিত ফেস্টুন।

মঞ্চ এমনভাবে তৈরি করা হচ্ছে যেন দেখে মনে হবে পদ্মা নদীর মাঝে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর পাশে ভাসমান পাল তোলা নৌকায় বসে সম্মেলন হচ্ছে। নিচের জলরাশিতে ভাসমান বিশাল পাল তোলা নৌকা। সেই নৌকায় লেখা ২১তম জাতীয় সম্মেলন-২০১৯। এর ঠিক পেছনেই আছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশাল ছবি। আরো আছে জাতীয় চার নেতা ও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর ছবি।

আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের মূল মঞ্চ এভাবেই তৈরি করা হয়েছে। মূল মঞ্চের পেছনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ছবি ছাড়াও ঠাঁই পেয়েছে জাতীয় চার নেতা- তাজউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন এম এ মনসুর আলী এবং এএইচ এম কামারুজ্জামানের ছবি।

এছাড়া আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম চার নেতা- মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শামসুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশের ছবি আছে।

কেমন হচ্ছে সম্মেলনস্থল

আওয়ামী লীগের ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির চারটি পদ খালি থাকায় মূল মঞ্চে চেয়ার থাকবে ৭৭টি। মঞ্চের সামনে নেতাকর্মীদের জন্য চেয়ার থাকবে ৩০ হাজার। এছাড়া সম্প্রসারিত মঞ্চে চেয়ার দেয়া হবে ১৫ হাজার। ২৮টি এলইডি পর্দায় দেখানো হবে সম্মেলনের পুরো অনুষ্ঠান। উদ্বোধনের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এসব আলোর ঝলকানি উপস্থিত সবাইকে মুগ্ধ করবে।

গঠনতন্ত্রে যেসব পরিবর্তন আসছে

এবারের কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে মৌলিক কোনো পরিবর্তন না এলেও বহুল আলোচিত সহ-সম্পাদক পদ বাতিল হচ্ছে। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সংখ্যা ৪১ থেকে ৫১ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এসব বিষয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

শনিবারের কাউন্সিল অধিবেশনে অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব দুটি উত্থাপন করা হবে। এছাড়া আওয়ামী লীগের ঘোষণাপত্রে দুটি বিষয় নতুন সংযোজন করা হয়েছে। সেগুলো হলো- বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন। এছাড়া এবারের কাউন্সিলে বিদেশি কূটনীতিকদের জন্য পৃথক আসন ও ‘ইংরেজি ভাষা অনুবাদক হেডফোন’ থাকছে।

নির্বাচন কমিশন গঠন

শনিবার আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত করা হবে। নির্বাচন পরিচালনায় বুধবার দলটির কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছেন দলের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। অপর দুই সদস্য হলেন- উপদেষ্টা সদস্য ড. সাইদুর রহমার ও ড. মশিউর রহমান। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ৫২(ক) ধারা মোতাবেক কমিটি গঠন করেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।

কাউন্সিল অধিবেশনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নাম প্রস্তাব ও সমর্থন করে থাকেন জ্যেষ্ঠ নেতারা। আর এতে কণ্ঠভোটে সমর্থন দেন উপস্থিত কাউন্সিলররা। পরে গঠনতন্ত্র মোতাবেক পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করেন নতুন সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক।

বাড়ছে নারী নেতৃত্ব

নারীর ক্ষমতায়নে বাড়াতে সরকারে এসে নানা পদক্ষেপ নেয়া আওয়ামী লীগ নিবন্ধন শর্ত অনুযায়ী, দলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারীর পদায়নে এবারের সম্মেলনকে বেছে নিচ্ছে। ২০০৮ সালে হওয়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, ২০২০ সালের মধ্যে ৩৩ শতাংশ নারী কোটা পূরণের ক্ষেত্রে আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

দলের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২০ সালের মধ্যে নারী নেতৃত্ব ৩৩ শতাংশ রাখার যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তাতে এবারের সম্মেলনেই এই কোটা পূরণ করতে চাইছে আওয়ামী লীগ। অর্থাৎ এবারের কেন্দ্রীয় কমিটিতে দেখা যেতে পারে নতুন কিছু মুখ। দলের সভাপতিমণ্ডলীসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে আসতে পারে নারী প্রতিনিধি।

সম্মেলনের ডিজিটাল ছোঁয়া

সম্মেলনে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে নয়নাভিরাম দৃশ্যপটের অবতারণা করা হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কাউন্সিল স্থল। পদ্মা সেতুর আদলে সম্মেলন মঞ্চ নির্মাণের কাজ শেষ। পদ্মা সেতুর নিচে প্রাকৃতিক দৃশ্য। নদীতে থাকছে অসংখ্য ছোট নৌকা। এর মধ্যে একটি বড় আকৃতির নৌকায় সম্মেলন মঞ্চটি দেখানো হবে।

মঞ্চটি করা হয়েছে ডিজিটাল। এর উচ্চতা ২৮ ফুট। দৈর্ঘ্য দেড়শ’ ফুট। প্রস্থ ১৪০ ফুট। ২৮টি এলইডি পর্দায় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান তুলে ধরা হবে। উদ্যান এলাকায় থাকছে ওয়াইফাই। সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ফেইসবুক ও ইউটিউবে লাইভ করবে সিআরআই।

‘স্বর্ণোজ্জ্বল অতীত/অদম্য উন্নয়নের বর্তমান/বিশ্ব জয়ের লক্ষ্যে আগামী’-স্লোগান লেখা সম্মেলন মঞ্চে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ছবিও শোভা পাবে। আওয়ামী লীগের পতাকাও থাকবে মঞ্চের ডিজিটাল ব্যানারে। সম্মেলন অঙ্গনেও থাকবে আওয়ামী লীগের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্মারক। সচিত্র বিবরণের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হবে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড।

নিয়ম-কানুন

সকাল ১০টায় কাউন্সিল স্থলের প্রবেশ পথগুলো খুলে দেয়া হবে। সম্মেলন স্থলে নেতাকর্মীদের প্রবেশের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গেট থাকবে পাঁচটি। একটি গেট ভিআইপিদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। সম্মেলনের প্রথম দিন শুক্রবার হওয়ার কারণে মুসল্লিদের জুমার নামাজ আদায়ের দিকটি মাথায় রেখে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নামাজ পড়ার বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। জুমার নামাজে যেন বিঘ্ন না ঘটে সেজন্য আলাদা একটি প্যান্ডেলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা

দেশের সার্বিক পরিস্থিতি মাথায় রেখে সম্মেলনকে নির্বিঘ্ন করতে ঢেলে সাজানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবকরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে সম্মেলনস্থল, প্রবেশপথসহ চারপাশে দলীয় স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন সম্মেলনের শৃঙ্খলা ও স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য সচিব আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।

কী আছে উপহার সামগ্রীতে

সম্মেলনে কাউন্সিলর ও ডেলিগেটরদের পাটের ব্যাগে বিভিন্ন ধরনের উপহার সামগ্রী দেয়া হবে। এতে আছে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যে উন্নয়ন হয়েছে, তার একটি কার্ড। একই সঙ্গে আছে দুটি সিডি। একটিতে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন এবং অন্যটিতে বিএনপির নেতিবাচক রাজনীতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে সেগুলোতে। এগুলোর সঙ্গে একটি প্যাড ও একটি করে কলম দেয়া হবে। আর থাকবে চকলেট।

এদিকে সম্মেলন উপলক্ষে ১০০ চিকিৎসক নিয়ে ১২টির মতো প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র প্রস্তুত করছে স্বাস্থ্য উপকমিটি। দুপুরে ৫০ হাজার নেতাকর্মীকে খাবার দেয়া হবে। খাবারে মোরগ-পোলাওয়ের সঙ্গে ডিম, ফিরনি ও পানির বোতল থাকবে।

আন্তর্জাতিক উপকমিটির পক্ষ থেকে সম্মেলন স্থানে কূটনীতিকদের জন্য বিশেষ স্টল স্থাপনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সংস্কৃতিবিষয়ক উপকমিটি সম্মেলনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে।

ফিরে দেখা

প্রতিষ্ঠা লাভের পর থেকে এখন পর্যন্ত ২০টি জাতীয় সম্মেলন হয়েছে আওয়ামী লীগের। এসব সসেম্মলনে এখন পর্যন্ত সভাপতি হয়েছেন সাতজন। এর মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী তিনবার করে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।

বর্তমান সভাপতি শেখ হাসিনা সর্বোচ্চ আটবার, আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ দুইবার এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও আবদুল মালেক উকিল একবার করে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। আর সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দিন একবার দলের আহ্বায়ক নির্বাচিত হয়েছেন।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ১০ জন। সবচেয়ে বেশি চারবার করে হয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জিল্লুর রহমান। এছাড়া তাজউদ্দিন আহমেদ তিনবার, আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী দুইবার করে, প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক, আবদুল জলিল এবং ওবায়দুল কাদের একবার করে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

 

ঢাকা/পারভেজ/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়