ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

নতুন ভবিষ্যৎ গড়ার প্রত্যয়ে উদ্দীপ্ত হোক সবাই

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:৫৫, ১৪ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নতুন ভবিষ্যৎ গড়ার প্রত্যয়ে উদ্দীপ্ত হোক সবাই

পয়লা বৈশাখ বাংলা সনের প্রথম দিন, বাংলা নববর্ষ। এটি বাঙালিদের একটি সর্বজনীন লোকউৎসব। নতুন বছরের উৎসবের সঙ্গে গ্রামীণ জনগোষ্টীর কৃষ্টি ও সংস্কৃতির নিবিড় যোগাযোগ। বাংলা নববর্ষে সারা বিশ্বের বাঙালিরা এ দিনে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়, ভুলে যাবার চেষ্টা করে অতীত বছরের সব দুঃখ-গ্লানি। জীর্ণ পুরাতন ভেসে যায়। আসে নতুনের আবাহন। চিরায়ত বাঙালীর জীবনের এক প্রাণস্পর্শী দিনের শুরু হয়েছে আজ ভোরের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে। বিদায় নিয়েছে পুরনো বছর ১৪২৩। এসেছে নতুন বছর ১৪২৪। বাঙালির নববর্ষ।

পয়লা বৈশাখ তার বিশালতায়, পরিধি দিয়ে বাঙালির আনন্দ-বেদনা, দুঃখ-কষ্টকে ভুলিয়ে দিয়ে নব আনন্দে জাগ্রত করে। বাঙালির আত্মপরিচয় সুদৃঢ় ও বহুপ্রাচীন। পুরনো বছরের অবসানের মধ্য দিয়ে আগমন ঘটে নতুন বছর। এর সাথে রয়েছে বাঙালির সুদীর্ঘ কালের সাংস্কৃতিক বন্ধন। তাই পয়লা বৈশাখ আমাদের নিজস্ব সাংস্কৃতিক চেতনার প্রতিষ্ঠার দিন। সংকীর্ণতা ও ধর্মীয় গোড়ামির কাছে বাঙালির সাংস্কৃতিক চেতনা কখনো পরাজিত হয়নি। নিজস্ব প্রাণ শক্তিতেই এ চেতনা বিকশিত হয়েছে।

বৈশাখ বাঙালির জীবনে কী গ্রামে কী শহরে এক নতুন সমারোহ নিয়ে আসে। পয়লা বৈশাখকে কেন্দ্র করে গ্রাম-গঞ্জে নানা উৎসব-পার্বণ পালিত হয়। বৈশাখের এসব উৎসব-পার্বণ মানুষকে নানাভাবে সমৃদ্ধ করে। একে অন্যের সাথে আত্মীয়তা তৈরি হয়, সংস্কৃতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়।

বাংলা নববর্ষ পালনের সূচনা হয় মূলত আকবরের সময় থেকেই। সে সময় বাংলার কৃষকরা চৈত্রমাসের শেষদিন পর্যন্ত জমিদার, তালুকদার এবং অন্যান্য ভূ-স্বামীর খাজনা পরিশোধ করত। পরদিন নববর্ষে ভূস্বামীরা তাদের মিষ্টিমুখ করাতেন। এ উপলক্ষে তখন মেলা এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। ক্রমান্বয়ে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিশে পয়লা বৈশাখ আনন্দময় ও উৎসবমুখী হয়ে ওঠে এবং বাংলা নববর্ষ শুভদিন হিসেবে পালিত হতে থাকে।

এর ধারাবাহিকতায় নববর্ষে হালখাতার প্রচলন হয়। গ্রামে-গঞ্জে-নগরে ব্যবসায়ীরা নববর্ষের প্রারম্ভে তাঁদের পুরনো হিসাব সম্পন্ন করে হিসাবের নতুন খাতা খোলেন। এ উপলক্ষে তাঁরা নতুন-পুরাতন ক্রেতাকে আমন্ত্রণ করে মিষ্টি বিতরণ এবং নতুনভাবে তাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক যোগসূত্র স্থাপন করেন।

বাঙালির প্রাণের উৎসব পয়লা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা ইউনেসকোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। জাতিসংঘের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানবিষয়ক এই সংস্থা গত ৩০ নভেম্বরআনুষ্ঠানিকভাবে এই স্বীকৃতির কথা জানিয়েছে। যেহেতু এটি ধর্ম-বর্ণ-জাতিনির্বিশেষে সব বাঙালির উৎসব। বাঙালির একমাত্র অসাম্প্রদায়িক এই উৎসব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হলো।

নতুন বছরে পদার্পণ। এর অর্থ হলো নতুনের সঙ্গী হওয়া। অর্থাৎ সামনের দিনগুলোকে বিনির্মাণের তাগিদ। আমাদের উদ্যম, আমাদের অধ্যবসায় সব নিয়োজিত হোক জাতীয় উন্নয়নের লক্ষ্যে। উৎসবের আনন্দ নতুন সঙ্কল্পে দীক্ষিত জাতির ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় নতুন শক্তির প্রেরণা হোক। নতুন বছরে জঙ্গীবাদ সন্ত্রাসবাদ হোক নির্মূল। নাশকতা, সহিংসতা হোক বন্ধ, দেশ হোক নৈরাজ্যমুক্ত।

শুভ নববর্ষে আমাদের প্রত্যাশা নতুন বছর সুন্দর হোক, শুভ হোক। সবাই উদ্দীপ্ত হোক নতুন ভবিষ্যৎ গড়ার প্রত্যয়ে। ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র সবার জন্য হোক কল্যাণকর। সবার মধ্যে গড়ে উঠুক সহযোগিতা ও সহমর্মিতা। সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ এপ্রিল ২০১৭/আলী নওশের

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়