ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

নলকূপ থেকে বের হয় ফুটন্ত পানি

রুমন চক্রবর্তী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ১২ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নলকূপ থেকে বের হয় ফুটন্ত পানি

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি : নলকূপ চাপলেই বের হচ্ছে গরম পানি। তাও আবার এক দুই দিন ধরে নয়। এলাকাবাসীর মতে ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এভাবে নলকূপ থেকে গরম পানি বের হচ্ছে।

এই পানি পরীক্ষার পর পাওয়া গেছে বিষাক্ত রাসায়ানিকের উপস্থিতি, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর মনে করছেন চিকিৎসকেরা। অভাবিত এই ঘটনাটি ঘটছে কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার ধলা ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামের প্রায় ২০০ নলকূপে।

কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার ধলা ইউনিয়নের কাওয়াখালী, ভেইয়ারকোনা, সিকদারপাড়া, নয়াপাড়া ও আজবপুর গ্রামের নলকূপগুলি চাপলেই বের হয়ে আসছে স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে বেশি গরম পানি। যত চাপা যায় ততই বাড়তে থাকে তাপমাত্রা। স্বাভাবিক ক্ষেত্রে একটি নলকূপে যেখানে পানির তাপমাত্রা থাকে ২৪ থেকে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সেখানে জেলা জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা এসব এলাকার নলকূপের পানির তাপমাত্রা রেকর্ড করেছেন সর্বোচ্চ ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

গ্রামবাসীরা জানান, নলকূপ থেকে বের হওয়া পানি শুরুতে সহনীয় থাকলেও ধীরে ধীরে এতটাই ফুটন্ত হয়ে পড়ে যে, হাতে বা শরীরে লাগালে অনেক সময় ফোসকা পড়ে যায়। তাই পানি ব্যবহার করতে হয় ঠান্ডা করে।

অস্বাভাবিক তাপমাত্রার পাশাপাশি এই নলকূপগুলির পানির আরেকটি বৈশিষ্ট সাবানের পানির মতো পানি অনেকটা পিচ্ছিল এবং গন্ধটাও অন্য রকম। এমনকি ফুটন্ত এ পানি সোনা বা রুপায় ব্যবহার করলে রঙ নষ্ট হয়ে কালচে হয়ে যায়।

ঠিক কত বছর আগে থেকে এখানকার নলকূপ থেকে এ রকম বিরল বৈশিষ্টের পানি বের হচ্ছে তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না গ্রামবাসী। এলাকার প্রবীণ ও বৃদ্ধরা তাদের ছোট বেলা থেকেই এমনটি দেখে আসছেন বলে জানিয়েছেন। এ থেকে রেহাই পেতে ও স্বাভাবিক পানি পাওয়ার জন্য অনেকেই নলকূপ উঠিয়ে একাধিকবার স্থান পরিবর্তন করে নতুন করে বসালেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। ফলে পানীয় জলের সমস্যায় ভূগছেন স্থানীয় জনগণ।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কিশোরগঞ্জ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তোজাম্মেল হক বলেন, খবর পেয়ে জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা ওই এলাকায় এসে পানির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেন। পরীক্ষায় দেখা যায় ওই এলাকার পানিতে মিথেন গ্যাসের অস্তিত্ব রয়েছে। এ কারণে উৎকট গন্ধ পাওয়া পানিতে। এ ছাড়া পরীক্ষার পর পানিতে পাওয়া যায় ক্ষতিকর ম্যাঙ্গানিজ পদার্থের উপস্থিতি। স্বাভাবিক পানিতে যেখানে শূন্য দশমমিক ১ মিলিগ্রাম ম্যাঙ্গানিজ সহনীয়, সেখানে ওই এলাকার পানিতে পাওয়া গেছে ১ দশমিক ৫ মিলিগ্রাম ম্যাঙ্গানিজের উপস্থিতি। এ ছাড়া স্বাভাবিক পানিতে যেখানে ৬ দশমিক ৮ থেকে ৭ দশমিক ৫ মিলিগ্রাম পিএইচ সহনীয়, সেখানে ওই এলাকার পানিতে পাওয়া গেছে ৯ দশমিক ৮ মিলিগ্রাম পিএইচ এর উপস্থিতি। তা ছাড়া সেখানে গ্যাস থাকার কারণেই পানির তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হতে পারে। এ নিয়ে আরো ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর পুরো বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।

জেলার সিভিল সার্জন মো. হাবিবুর রহমান জানালেন, নলকূপ থেকে যদি ফুটন্ত পানি বের হয় এবং সেটা যদি স্বাভাবিক পানির মতো স্বাদ বা গন্ধ বিশিষ্ট না হয়, তাহলে সেই পানি ব্যবহার না করাই মঙ্গল। স্বাভাবিকের চেয়ে অধিক মাত্রায় রাসায়ানিক পদার্থের উপস্থিতির কারণে এই পানি ব্যবহার করে মানুষ আক্রান্ত হতে পারেন চর্ম, নিউরোলজিক্যাল, প্যারালাইসিস, লিভারের রোগসহ বিভিন্ন জটিল ব্যাধিতে।

এই অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে ওই পানি ব্যবহার না করে বিকল্প উৎস থেকে পানি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন সিভিল সার্জন। না হলে স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা থাকে।



রাইজিংবিডি/কিশোরগঞ্জ/১২ মে ২০১৭/রুমন চক্রবর্তী/এসএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়