নাক দিয়ে হারমোনিকা বাজান সোহম (ভিডিও)
সোহম মুখোপাধ্যায়
নাক দিয়ে হারমোনিকায় সুর তোলা—এক প্রকার ভাবনাতীত ব্যাপার। কিন্তু মাত্র দশ বছর বয়সে নাক দিয়ে হারমোনিকা বাজিয়ে যন্ত্রসংগীত শিল্পীদের অবাক করে দিয়েছিলেন ভারতের বর্ধমানের ছেলে সোহম মুখোপাধ্যায়।
ইউএসের বিশ্বরেকর্ড সংস্থা তার এই বিস্ময়কর প্রতিভাকে রেকর্ড বুকে নথিভুক্ত করেছে। নাক দিয়ে নানা যন্ত্রসংগীত বাজিয়ে দেশ-বিদেশে ১৬টি রেকর্ড গড়েছেন তিনি। এই বিস্ময়কর প্রক্রিয়াকে অলটারনেটিভ মিউজিক নামে অভিহিত করা হয়েছে। আর এইভাবে বাজানোর প্রক্রিয়া আজ থেকে প্রায় তেইশ বছর আগে আবিষ্কার করার জন্য সোহম মুখোপাধ্যায়কে ইউআরএফ রেকর্ড রিসার্চ সংস্থা ‘দ্য ফাদার অব নোজ হারমোনিকা’ উপাধিতে ভূষিত করেন।
সোহমের নাসাবাদন শুধু হারমোনিকায় বা মাউথ অর্গানেই থেমে থাকেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় শ্বাসের নিয়ন্ত্রণে বাজানো যন্ত্রগুলোকে একে একে বাজিয়েছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। তারপর একে একে আসতে থাকে তার সাফল্য। মেলোডিকা, বাঁশিতেও গড়েন বিশ্ব রেকর্ড। সম্প্রতি দিল্লি থেকে গ্রহণ করেছেন রাষ্ট্রীয় যুব গৌরব সম্মান। এই রাষ্ট্রীয় সম্মান সোহমের হাতে তুলে দেন মন্ত্রী শ্রী বিজয় গোয়েল এবং রামদাস অটোলে। পাশাপাশি তারা এই অভিনব প্রতিভাধারী সোহমের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
কিন্তু নাক দিয়ে কীভাবে বাজান বাদ্যযন্ত্র? সোহমের ভাষায়, ‘এটা ভারতীয় যোগের মধ্যে লুকায়িত আছে। শ্বাস-প্রশ্বাস সংক্রান্ত ব্যায়ামগুলো মেনে চললে এমনটা সম্ভব।’
ভবিষ্যতে ভারতীয় যোগের সঙ্গে সংগীতকে নিয়ে গবেষণা ও প্রচার করতে চান সোহম। বর্তমান সময়ে নতুন প্রজন্মের মধ্যে হারমোনিকাকে নতুনভাবে ছড়িয়ে দিতে চান। সোহম বলেন, ‘বর্তমান প্রজন্ম এক অদ্ভুত ব্যাধির শিকার, পনেরো থেকে পঁয়ষট্টি এই মুঠোফোন, ভিডিও গেমস, ল্যাপটপ তথা ভার্চুয়াল দুনিয়ার ঘেরাটোপে আচ্ছন্ন। যন্ত্রসংগীত দিয়ে যদি যন্ত্রকে কিছুটা হলেও দূরে সরিয়ে রাখা যায়, তাহলেও বুঝে নিব আমার প্রচেষ্টা সফল হতে চলেছে। কিছুটা সাড়া মিলছে।’
ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রামে সোহমের অগনিত শ্রোতা-বন্ধুদের কাছে সোহম ছড়িয়ে দিচ্ছেন সেই বার্তা। নানাভাবে মানুষকে সচেতন করে চলেছেন তিনি। তার আরেকটি লক্ষ্য—ভারতকে নন স্মোকিং জোন করা। লাখ লাখ মানুষ চাপের মুখে হাতে সিগারেট তুলে নেয়। এই মানুষগুলোর পকেটে সিগারেটের পরিবর্তে মাউথ অর্গান দেখতে চান সোহম। তার এই প্রয়াস সুদূর বিশাখাপত্তমের জনগণকে আলোড়িত করেছে। ভারতের একটি স্বনামধন্য সংবাদমাধ্যমে সোহম এই বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন। সোহমের কর্মকাণ্ডকে অভিনন্দন জানিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে তাকে ‘ভারত শিরোমণি’ সম্মান দেওয়া হয়েছে।
সোহমের এই কাজে পরিবারের কাছ থেকে তেমন সহায়তা মেলেনি। লাজুক স্বভাবের এই শিল্পীর পারিবারিক স্বচ্ছলতা থাকলেও যন্ত্র কেনা, যন্ত্রসংগীত শিক্ষা ইত্যাদিতে কেউ নূন্যতম সহায়তা করেনি। পরিচিত মানুষ ঘরের ছেলের বিশ্বব্যাপী সাফল্য দেখে এখন তাকে সংবর্ধনা দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। রাজ্যের নেতা মন্ত্রীদের কাছে প্রশংসিত হয়ে সোহমের স্বীকারোক্তি, ‘চলার পথে একলা চলতে হয়—এটা আমি জানি। তবে কাছের মানুষের সমর্থন পেলে পথ চলার ক্লান্তি লাঘব করে।’
যদিও এসব নিয়ে বিন্দুমাত্র হতাশ নন সোহম। বরং কলকাতা ও বাংলার বাইরের বেশ কিছু অগ্রণী রেকর্ড কোম্পানি উৎসাহ নিয়ে এগিয়ে এসেছেন। পাশাপাশি ডাক পাচ্ছেন দেশ-বিদেশের অনুষ্ঠানে। কিন্তু চ্যারিটি ইভেন্ট আর সরকারি অনুষ্ঠান ছাড়া আর কোনো অনুষ্ঠান করছেন না তিনি। তবে ভবিষ্যতে একক অনুষ্ঠান করার কথা ভাবছেন বলে জানিয়েছেন সোহম।
দেখুন:
ঢাকা/শান্ত
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন