ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

নিজের বাল্যবিবাহ ঠেকাল নিজেই

তানভীর হাসান তানু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪২, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নিজের বাল্যবিবাহ ঠেকাল নিজেই

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : তসলিমা আক্তার। নবম শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থী। ক্লাসে রোল নম্বর ১। নিম্ন মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করেছে। উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে সমাজের অবহেলিত নারীদের জন্য কাজ করাই তার ইচ্ছা।

কিন্তু হঠাৎ তসলিমার জীবনে অন্ধকার নেমে আসে যেন। কারণ তার বাবা তার বিয়ে ঠিক করে ফেলে। বিয়ের জন্য তসলিমার কোনো মতামত গ্রহণ করেনি বাবা। বিয়ে ঠিক করার কথা আড়াল থেকে শুনে চৌদ্দ বছরের কিশোরী মেধাবী ছাত্রী তসলিমা।

পরের দিন বাল্যবিবাহ বন্ধে বান্ধবীদের ও স্কুলের শিক্ষকদের পরামর্শ চায় তসলিমা। তাদের পরামর্শে নিজেই অভিযোগ করে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে। অভিযোগ শুনে তসলিমার বাবাকে ডেকে মুচলেকা নিয়ে বাল্যবিবাহ বন্ধ করেন ইউএনও। মঙ্গলবার বিয়ে বন্ধের ঘটনাটি ঘটে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায়।

জানা যায়, গত রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুওসুও বিদ্যালী পাড়া গ্রামের আবুল কাশেম কিশোরী মেয়ে তসলিমা আক্তারের বিয়ে ঠিক করা নিয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন। বিয়ের দিন ধার্য করা হয় ১৮ সেপ্টেম্বর সোমবার। এ সময় পাশের ঘর থেকে কথাগুলো শুনে ফেলে তসলিমা।



তসলিমা পরদিন স্কুলের বান্ধবী সুমনা ও নীলাকে বিস্তারিত খুলে বলে এবং ওই রাতে (সোমবার) সুমনাদের বাড়িতেই থেকে যায়।

আজ মঙ্গলবার সকালে স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক সোলাইমান আলীকে ঘটনাটি জানায় তসলিমা । পরে প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশীদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আ. মান্নান ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমানকে মুঠোফোনে বাল্যবিবাহের ঘটনা অবগত করেন । পরে তসলিমার বাবাকে ডেকে বাল্যবিবাহ বন্ধ করে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

তসলিমা আক্তার বলেন, বর্তমানে আমাদের সমাজের নারীরা সচেতন। আমি বাল্যবিবাহের কুফল আগেই জেনেছি। ফলে আমার বিয়ের বয়স না হওয়ায় বান্ধবী, শিক্ষক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সহযোগিতায় নিজের বাল্যবিবাহ বন্ধ করেছি। সমাজে বাল্যবিবাহ বন্ধে সব কিশোরী যদি ঐক্যবদ্ধ হয় তাহলে এক সময় বাল্যবিবাহ বলতে কিছুই থাকবে না। আমি ভবিষ্যতে অবহেলিত নারীদের জন্য কাজ করতে চাই।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আ. মান্নান বলেন, নারীরাই আগামীতে বিশ্বকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সব অসঙ্গতিকে মোকাবিলা করার জন্য প্রতিবাদী হয়েছে নারীরা। যার উদাহরণ তসলিমা আক্তার। বাল্যবিবাহের কুফল বুঝতে পেরে সে নিজেই তার বিয়ে বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছে। উপজেলার ৬০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাড়ে আট হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে বাল্যবিবাহসহ আরো ১১টি সমস্যার মোকাবিলার জন্য বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে নিজ নিজ বিদ্যালয়ে পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীরা ভবিষ্যৎ জীবনে তা কাজে লাগিয়ে খুব সহজেই তাদের নিজ নিজ সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম হবে। তারই ফল হিসেবে তসলিমা আজ নিজের বাল্যবিবাহ ঠেকাতে সক্ষম হয়েছে। এ অঞ্চলে বাল্যবিবাহ রোধে তসলিমা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।



রাইজিংবিডি/ঠাকুরগাঁও/১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭/তানভীর হাসান তানু/রুহুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়