ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

নিভৃতে আলো ছড়াচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ের একতা প্রতিবন্ধী স্কুল

তানভীর হাসান তানু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৪২, ৩০ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নিভৃতে আলো ছড়াচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ের একতা প্রতিবন্ধী স্কুল

তানভীর হাসান তানু, ঠাকুরগাঁও : নিভৃতে আলো ছড়াচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ের একতা প্রতিবন্ধী স্কুল। কেউ বাক, কেউ দৃষ্টি, কেউ শারীরিক আবার কেউবা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। বয়স ৫ থেকে ১৫ কিংবা আরও বেশি, সবাই একসঙ্গে বসে শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে পড়ালেখা শিখছে।

ওরা সবাই দুঃস্থ ও গরীব পরিবারের প্রতিবন্ধী সন্তান। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মোলানী একতা প্রতিবন্ধী স্কুল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে প্রতিবন্ধীদের যুথবদ্ধতা যে কারোর মনেই মুগ্ধতা ছড়াবে।

ঠাকুরগাঁও জেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার পশ্চিমে মোলানী চুনিহাড়ি নামক এক নিভৃত গ্রামে প্রতিবন্ধীদের এই স্কুলটি। স্কুল বলতে দুটি আধাপাকা টিনের ছাউনি। আর বাকি ঘরগুলো বাঁশের বেড়া তাও ভেঙ্গে গেছে বেশিরভাগ। রুমের ভেতরে রয়েছে কয়েকটি টেবিল ও চেয়ার।

স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আমিনুল ইসলাম। ১৫ জন প্রতিবন্ধী শিশু নিয়ে ২০০৮ সালে নিজ উদ্যোগে এই প্রতিবন্ধী স্কুল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রটি চালু করেন। এখন এই কেন্দ্রে প্রায় ৩৫০ জন শিক্ষার্থী। ১৬ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়ে এই সকল শিক্ষার্থীদের পাঠ দান করে আসছেন কর্তৃপক্ষ। তারা বিনা পারিশ্রমিকে প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষাদান করে আসছেন। মাঝে মাঝে স্থানীয় ব্যক্তিদের যে দান সহায়তা পাওয়া যায় তা চক, ডাস্টার, পেন্সিলসহ শিক্ষা উপকরণে ব্যয় করছেন।

জানা গেছে, ঠাকুরগাঁওয়ের আশে-পাশের ৩টি উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের প্রতিবন্ধী শিশুরা এই পুনর্বাসন কেন্দ্রে লেখাপড়া করার সুযোগ পাচ্ছে। বিদ্যালয়ের পরিচালক নিজ উদ্যোগে দুটি পিকআপ গাড়ি কিনে প্রতিবন্ধী শিশুদের বাড়ি থেকে নিয়ে এসে আবার ক্লাস শেষে পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছে। অনেক সময় গাড়ি বিকল হয়ে পড়লে দূরের অনেক শিক্ষার্থী নিয়মিত ক্লাসে আসতে পারে না।

অন্যদিকে পরিচালক নিজ উদ্যোগে সম্প্রতি প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসার জন্য একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রও চালু করেছেন। কিন্তু স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পর্যাপ্ত ওষুধের যোগান দিতে না পারায় যথার্থ চিকিৎসা সেবা দিতে পারছেন না।

 


শিক্ষার্থী সাবিনা ইয়াসমিন স্কুলে আসতে পেরে খুবই খুশি। ‘স্কুলে আসতে আমার অনেক ভালো লাগে। আমি পড়ালিখা করে ডাক্তার হতে চাই। স্কুলে আমার অনেক বন্ধু ও বান্ধবী আছে। শিক্ষকরা আমাদের সুন্দরভাবে পড়ালিখা শেখায়’ জানায় সাবিনা।

স্কুলের শিক্ষক গোলাম সারোয়ার বাবু বলেন, ‘আমরা নিজ উদ্যেগে ও নিজ খরচে স্কুলটি পরিচালনা করছি। সমাজের বিত্তবান দানশীল মানুষ এবং সরকারি-বেসরকারি দাতা সংস্থার সহযোগিতা পেলে স্কুলটি আরো ভালভাবে প্রতিষ্ঠা পেত।

শিক্ষিকা সৃষ্টি রানী বলেন, ‘এই স্কুলে অনেক দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিবন্ধী ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়েছে। কিন্তু এখনো অনেক শিক্ষার্থীর ভর্তিই বাকি রয়েছে। স্কুলের কক্ষ কম থাকার জন্য সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের চলাফেরার জায়গারও সংকট। কষ্ট করে হলেও আমরা তাদেরকে শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছি। নিজে খরচ দিয়ে স্কুলটি পরিচালনা করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় সরকারের সহযোগিতা খুবই জরুরী।

পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি চালাতে আমাকে অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। পুণর্বাসন কেন্দ্রে বেশি ছাত্র-ছাত্রী রাখার ব্যবস্থা নেই। আমার নিজ বাসভবনে ৩৫ জন ছাত্র-ছাত্রীকে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী অনুযায়ী শ্রেণিকক্ষ, টেবিল-চেয়ার, স্কুলের সীমানা প্রাচীর অর্থের অভাবে এখনো করতে পারিনি।

তিনি বলেন, ‘প্রতিবন্ধী শিশুদের পাঠদানের জন্য প্রতিষ্ঠানে কোন প্রজেক্টর ও কম্পিউটার নেই। শিশুদের চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র থাকলেও ডাক্তার ও ওষুধের অভাবে চিকিৎসা ব্যহত হচ্ছে।’

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘আমিনুল ইসলাম নিজ উদ্যেগে প্রতিবন্ধীদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, এটি একটি দৃষ্টান্ত। তার মতো সমাজের সকল মানুষ যদি অসহায় প্রতিবন্ধীদের পাশে এসে দাঁড়ায় তাহলে আলোকিত হয়ে উঠবে আমাদের সমাজ। আমরা একতা প্রতিবন্ধী স্কুল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রটিকে সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছি।’  

 

 

রাইজিংবিডি/ঠাকুরগাঁও/৩০ জানুয়ারি ২০১৭/তানভীর হাসান তানু/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়