ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেনা হচ্ছে নতুন যন্ত্র

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩১, ৬ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কেনা হচ্ছে নতুন যন্ত্র

কেএমএ হাসনাত: জাতীয় নিরাপত্তা আরো সুসংহত ও নিশ্চিত করতে এবং যে কোন ধরনের নাশকতা দমনে সক্ষমতা বাড়াতে একটি ভেহিক্যাল মাউন্টেড মোবাইল ইন্টারসেপ্টর সংগ্রহ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য সরকারের প্রায় দুইশ’ কোটি টাকা ব্যয় হবে।  সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে এই সিস্টেমটি সংগ্রহ করা হবে।

এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদনের জন্য বুধবার অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন, ২০০৬ এর ধারা ৬৮(১) অনুযায়ী জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে সর্বোচ্চ গোপনীয়তা বজায় রাখার জন্য এনটিএমসি’র একটি ভেহিক্যাল মাউন্টেড মোবাইল ইন্টারসেপ্টর ক্রয়ে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮ এর বিধি ৭৬(২)-এ উল্লেখিত আর্থিক সীমা শিথিল করাসহ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণের জন্য প্রস্তাবটি বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।

সূত্র জানায়, দ্রুত স্থানান্তরযোগ্য যন্ত্রটি ভেন্যু ভিত্তিক ভিভিআইপি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজে, চরমপন্থী ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মাধ্যমে জাতীয় নিরাপত্তা বিঘিœত হতে পারে এ জাতীয় গোলযোগময় পরিস্থিতিতে মাঠ পর্যায়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে নিয়ন্ত্রণ স্থাপনের জন্য ব্যবহৃত হবে। এছাড়াও জাতীয় স্বার্থ বিঘœকারী অপরাধমূলক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ে মনিটরিংয়ের জন্য, এনটিএমসি’র মনিটরিংয়ের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত পরিচালনার ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে কারিগরি ও সরঞ্জাম সহায়তা দেবে। জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কাজে নিয়োজিতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার ক্ষেত্রে যন্ত্রটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে কারিগরি সহায়তা দেবে। এতে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।  

সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাপী অবাধ তথ্য প্রবাহের কারণে সংবেদনশীল তথ্যের প্রকাশ নিয়ন্ত্রণ, প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে, সম্ভাব্য জঙ্গি তৎপরতা রোধে ও বাস্তবিক প্রয়োজনে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি)- এর অপারেশনাল কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য  ভেহিক্যাল মাউন্টেড মোবাইল ইন্টারসেপ্টরটি সংগ্রহ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের আওতাধীন ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার- এর অনুক’লে টিওঅ্যান্ডইভুক্ত একটি ভেহিক্যাল মাউন্টেড মোবাইল ইন্টারসেপ্টর ক্রয় কার্যক্রমের বিষয়ে জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে সর্বোচ্চ গোপনীয়তা বজায় রাখার জন্য পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন, ২০০৬ এর ধারা ৬৮(২)- এর আলোকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি (ডিপিএম) অনুসরণ করে ক্রয়ের অনুমতি দেয়ার জন্য এনটিএমসি থেকে প্রস্তাব করা হয়।

এনটিএমসি’র অপারেশনাল কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ২০১৫ সালে দুটি ভেহিক্যাল মাউন্টেড ইন্টারসেপ্টরসহ ৪৯টি সরঞ্জাম এনটিএমসি’র টিওঅ্যান্ডই’তে অন্তর্ভূক্ত হয়। এরমধ্যে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন অনুযায়ী ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে একটি ভেহিক্যাল মাউন্টেড ডাটা ইন্টারসেপ্টর ক্রয়ের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়। প্রস্তাবিত দ্বিতীয় ভেহিক্যাল মাউন্টেড ডাটা ইন্টারসেপ্টর ক্রয়ের জন্য গত ৩ ফেব্রুয়ারি প্রশাসনিক অনুমোদন দেয়া হয়। 

প্রস্তাবিত যন্ত্রটি ক্রয়ের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে এনটিএমসি থেকে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার ছিল প্রতি সেকেন্ডে ৩০০ গিগাবাইট যা ২০১৮ সালের শেষে বৃদ্ধি পেয়ে  প্রতি সেকেন্ডে ৯০০ গিগাবাইট অতিক্রম করেছে। এছাড়াও বর্তমানে বিভিন্ন টেকনোলজিভিত্তিক অপরাধ বৃদ্ধি পাওয়ায় একটি মাত্র সিস্টেম দ্বারা সব আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থাকে সঠিক সময়ে কারিগরি সহায়তা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে আরো একটি ভেহিক্যাল মাউন্টেড ডাটা ইন্টারসেপ্টর ক্রয় করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি (ডিপিএম) অনুসরণের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে এনটিএমসি থেকে বলা হয়েছে, এ ক্রয় কার্যক্রম ডিপিএম  ছাড়া অন্য কোন ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণে পরিচালিত হলে এর গোপনীয়তা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর গোপনীয়তা না থাকলে স্বার্থান্বেষী মহল/সন্ত্রাসবাদী/অপরাধী চক্র নিজেদেরকে সুরক্ষার সবরকম কার্যক্রম গ্রহণ করার সুযোগ পাবে। সে ক্ষেত্রে কারিগরি নির্দেশনা তাদের হস্তগত হতে পারে এবং এনটিএমসি’র ক্ষমতা ও কার্যকারিতা সম্পর্কে অপরাধী চক্র ধারণা লাভ করে অন্য যে কোন পন্থা অবলম্বন করে অপরাধ কার্যক্রম সংগঠিত করবে। ফলে অপরাধী সনাক্তকরণ ও অপরাধ প্রতিহত করে দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তিশৃংখলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রে ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে।

সূত্র জানায়, দেশের আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রযুক্তিগত দিক থেকে আগের চেয়ে অনেক বেশি সক্ষমতা অর্জন করেছে। আর তার প্রমাণও বিভিন্ন সময়ে তারা নানাভাবে দিয়েছে। সম্প্রতি তুরস্ক থেকে ফেরত আইএস-এর এক জঙ্গিকে উত্তরা থেকে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী আটক করেছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে সে সৌদি আরব হয়ে দেশে আসে। দেশের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা জঙ্গিদের সংগঠিত করে নাশকতা করার পরিকল্পনা করছিল সে। তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জনের ফলেই আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। 

এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ভেহিক্যাল মাউন্টেড মোবাইল ইন্টারসেপ্টরটি দ্রুত ক্রয়ের জন্য অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির নীতিগত অনুমোদনের জন্য এর আগেও উপস্থাপন করা হয়েছিল। রাষ্ট্রীয় জরুরি কাজে ব্যস্ত থাকায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠকে উপস্থিত হতে না পারায় বিধি অনুযায়ী ওই বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে কোন আলোচনা হয়নি। বুধবার আবার বিষয়টি উপস্থাপন করা হচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ আগস্ট ২০১৯/হাসনাত/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়