ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের মুখে স্বদেশ ফেরার প্রত্যয়

সুজাউদ্দিন রুবেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২৮, ২৯ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের মুখে স্বদেশ ফেরার প্রত্যয়

অন্য রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মোহাম্মদ ‍মুসলিম

কক্সবাজার প্রতিনিধি : মোহাম্মদ মুসলিম, বয়স অনুমানিক ৪০ এর কাছাকাছি। মিয়ানমারের মরিচ্যা নামের এলাকার এ বাসিন্দা ডিসেম্বরে মিয়ানমারের সেনা বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হন।

এখন অনেকটা পঙ্গু এ ব্যক্তি চলাচল করেন ক্রাচের ওপর ভর দিয়ে। মিয়ানমার বাহিনীর গুলিতে পায়ে আঘাত পাওয়া এ ব্যক্তি কথা বলেছেন বাংলাদেশ সফরে আসা আনান কমিশনের প্রতিনিধি দলের সদস্যদের সঙ্গে।

প্রতিনিধিদলটি রোববার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে উখিয়া উপজেলার বালুখালীতে নতুন করে গড়ে ওঠা রোহিঙ্গা বস্তিতে যান। ওখানে প্রায় এক ঘণ্টা আলাপ করেন ১০ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুর সঙ্গে। অনেকটা গোপনে করা আলাপে কি কথা হলো তা বলেননি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে থাকা সংশ্লিষ্টরা। তাদের সঙ্গে আলাপ করা মোহাম্মদ মুসলিমের সঙ্গে আলাপ হয় রাইজিংবিডির এই প্রতিবেদকের।

এই প্রসঙ্গে তিনি রাইজিংবিডিকে জানান, কিভাবে, কি কারণে তার ওপর নির্যাতন হয়েছে তা জানতে চাওয়া হয়। এর উত্তরে তিনি জানিয়েছেন মিয়ানমারের সেনা বাহিনীর একটি দল তাকে ধরে নিয়ে নির্যাতনের পর গুলি করে কৃষি জমিতে ফেলে দেয়। পরে কিভাবে কষ্ট করে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন তাও তিনি জানিয়েছেন প্রতিনিধি দলকে। তবে কি কারণে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে তা তিনি জানেন না।

মুসলিম জানান, মিয়ানমারের তার বসত ভিটা, জমি রয়েছে। তিনি স্বদেশে ফিরে যেতে চান।

প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলাপ করা মিয়ানমারের নইট্যং এলাকার ইয়াসমিন নামের আরেক নারী জানান, তিনিও নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন প্রতিনিধিদলকে। একই সঙ্গে তিনিও আগ্রহী, পরিবেশ ভাল হলে ফিরে যাবেন মিয়ানমারে।

রেহেনা নামের এক বয়স্ক নারী জানান, প্রতিনিধি দলের লোকজন তিনিসহ তার ৩ শিশু সন্তানের সঙ্গে আলাপ করেছে। আলাপের মূল বিষয় ছিল কি ধরনের নির্যাতন হয়েছে, কারা করেছে, কিভাবে করেছে এসব। তিনি যা সত্য তা বলেছেন।

মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে নতুন অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের অবস্থা জানতে উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা বস্তিগুলো পরিদর্শন করতে রোববার কক্সবাজার আসেন আনান কমিশনের ৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলটি রোববার বালুখালী ছাড়াও টেকনাফের নয়াপাড়া, লেদা এবং শামলাপুরের রোহিঙ্গা শরণার্থী বস্তিগুলো পরিদর্শন করেছেন।

কফি আনান কমিশনের প্রতিনিধি দলে রয়েছেন মিয়ানমারের নাগরিক উইন স্রো ও আই লুইন এবং লেবাননের নাগরিক ঘাশান সালামে। প্রতিনিধি দলটির সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব বাকী বিল্লাহ, ইউএনএইচসিআর ও আইওএমের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত রয়েছেন।

আগামীকাল সোমবার সকালে উখিয়ার কুতুপালং এলাকার রোহিঙ্গা শরণার্থী বস্তি পরিদর্শন শেষে প্রতিনিধি দলটি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এরপর বিকেলেই ঢাকায় ফিরবেন।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জনগণের কল্যাণে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে সুপারিশ তৈরির জন্য মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সু চি গত বছর জাতিসংঘের প্রাক্তন মহাসচিব কফি আনানকে প্রধান করে একটি কমিশন গঠন করেন। কফি আনান ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় মিয়ানমারের ছয় নাগরিক ও তিন বিদেশি বিশেষজ্ঞকে নিয়ে গঠিত কমিশন এই বছরের দ্বিতীয়ার্ধে সুপারিশ জমা দেবে। রাখাইন রাজ্যের সব নাগরিকের মানবিক উন্নয়ন, নাগরিকত্ব, মৌলিক অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উপাদানগুলোকে নিয়ে কমিশন সুপারিশ তৈরি করবে। কমিশনটি এ লক্ষ্যে কাজ করছে।

জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ৯ অক্টোবর থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠীর অন্তত ৬৬ হাজার শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।



রাইজিংবিডি/কক্সবাজার/২৯ জানুয়ারি ২০১৭/সুজাউদ্দিন রুবেল/রুহুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়