নিষ্প্রভ শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ
সাংগঠনিক তৎপরতায় এগিয়ে থাকার কথা থাকলেও আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন শ্রমিক লীগে সেই তেজী ভাব আর নেই। অন্যতম সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগের কর্মকাণ্ডও চলছে নামমাত্র।
দুটি সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তৃণমূলের যোগাযোগ প্রায় নেই বললেই চলে। বিভিন্ন দিবসভিত্তিক কর্মসূচি ছাড়া দেখা মেলে না দলীয় কর্মকাণ্ডের। আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকা যত দীর্ঘয়িত হয়েছে, কৃষক লীগ ও শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক শক্তিও তত কমেছে- এমন পর্যবেক্ষণ সংগঠন দুটির নেতাকর্মীদের।
তাদের অভিযোগ, কৃষক লীগ ও শ্রমিক লীগে সংশ্লিষ্ট পেশার চেয়ে অন্য পেশার লোকজন বেশি। পেশাসংশ্লিষ্ট লোকজন যত বেশি সংগঠনে যুক্ত হবে, আওয়ামী লীগের অন্য সংগঠনের মতো এই দুটি সংগঠনের সাংগঠনিক শক্তিও তত বৃদ্ধি পাবে। এজন্য পেশাসংশ্লিষ্ট লোকদের হাতেই কৃষক ও শ্রমিক লীগের নেতৃত্বভার দেয়ার দাবি তাদের।
২০১২ সালের ১৯ জুলাই কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন হয়। এই কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে ২০১৫ সালের জুলাইয়ে। চার বছর আগে কমিটির মেয়াদ চলে গেলেও নতুন কমিটি আসেনি। এমনকি সম্মেলনের কোনো উদ্যোগও নেয়া হয়নি। একই বছর হয়েছিল শ্রমিক লীগেরও সম্মেলন। সে হিসেবে চার বছর আগেই মেয়াদ ফুরিয়েছে এই সংগঠনেরও।
সংগঠন দুটির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, কৃষক লীগ ও শ্রমিক লীগের শীর্ষ নেতারা নিয়মিত সাংগঠনিক বৈঠক করেন না। গত চার বছরে হাতেগোনা কয়েকটি বৈঠক হয়েছে। সাত বছরে দায়িত্ব থাকা অবস্থায় তারা সব সাংগঠনিক জেলায়ও কমিটি করতে পারেনি। এখনো অনেক জায়গায় কমিটি করা বাকি। কৃষক লীগের অর্ধশতাধিক জেলা ইউনিটে সম্মেলন বাকি। শ্রমিক লীগেও ৪০টির মতো জেলা কমিটিতে সম্মেলন হয়নি।
সংগঠন দুটির একাধিক সূত্র বলছে, কৃষক লীগে কৃষি পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির চেয়ে অন্য পেশা থেকে আসা ব্যক্তির সংখ্যাই বেশি। কোনোকালে কৃষির সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন না, এমন ব্যক্তিদেরও আনাগোনা রয়েছে এই সংগঠনে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে অর্ধশতাধিক আইনজীবীও রয়েছেন বলে অভিযোগ নেতাকর্মীদের। বিষয়টি নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভও আছে। আইনজীবীদের কৃষক লীগে পদ দেয়ার অভিযোগ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খন্দকার শামসুল হক রেজার বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে, শ্রমিক লীগের শীর্ষ দুই নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ বিভিন্ন পদে তারা নতুন নতুন নেতাকে পদায়ন করেন এবং সংগঠনটির বৈঠকগুলোতে তাদের পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। ইচ্ছেমতো অনেক নেতাকে পদ থেকে বাদ দেয়া হয়। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদ করেছেন বিভিন্নভাবে। তবে সাংগঠনিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ভয়ে কেউই এই বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি।
নেতাকর্মীরা বলছেন, কৃষক লীগ ও শ্রমিক লীগের অনুপ্রবেশকারীর হার সবচেয়ে বেশি। দল ও সহযোগী সংগঠনগুলোতে অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে আওয়ামী লীগ যে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে, তার অংশ হিসেবে এই দুটি সংগঠনের দিকে বাড়তি নজর দেয়ার দাবি তাদের।
আগামী ২০-২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের আগে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সম্মেলন করতে পৃথকভাবে কৃষক লীগ ও শ্রমিক লীগকে এরই মধ্যে চিঠি দেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছে সংগঠন দুটি। সম্মেলনের কারণে সংগঠন দুটির কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের আনাগোনা বেড়েছে চোখে পড়ার মতো। বড় বড় ব্যানার, ফেস্টুনে ছেয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের সর্বত্র।
সম্মেলনের প্রস্ততি নিয়ে জানতে চাইলে কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খন্দকার শামসুল হক রেজা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমরা সম্মেলনের জন্য চিঠি পেয়েছি। সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে আগামী ৯ অক্টোবর বৈঠক ডেকেছি। সেখানেই কাউন্সিলের তারিখ, পোস্টার, লিফলেট সবকিছু চূড়ান্ত হবে। এরই মধ্যে আমরা ২ নভেম্বর একটি সম্ভাব্য তারিখ ভেবে রেখেছি। তবে নেত্রীর (আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা) সঙ্গে কথা বলে সব চূড়ান্ত করা হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের বেশ কিছু জেলায় সম্মেলন বাকি আছে। সেগুলোর তারিখ দেয়া আছে। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে সবগুলো করে ফেলতে।’
শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ সিরাজুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘সম্মেলন আয়োজনের চিঠি পাওয়ার পর এখনো আমরা বৈঠকের তারিখ দিতে পারিনি। তবে খুব শিগগিরই আমরা বসব। আমাদের ২৫টির মতো জেলা সম্মেলন বাকি আছে, সেগুলো যদি সম্ভব হয় সম্মেলনের আগেই করে ফেলার পরিকল্পনা রয়েছে।
ঢাকা/পারভেজ/রফিক
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন