ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

নেই পুলিশ ক্যাম্প, বাড়ছে উত্তেজনা

সুজাউদ্দিন রুবেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫৪, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নেই পুলিশ ক্যাম্প, বাড়ছে উত্তেজনা

কক্সবাজার প্রতিনিধি : জেলার টেকনাফ উপজেলার রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরগুলোতে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেই কোনো পুলিশ ক্যাম্প। ফলে দিন দিন এসব আশ্রয় শিবিরগুলোতে বাড়ছে খুন, অপহরণ, ডাকাতি ও সংঘাতের ঘটনা। আর স্থানীয় ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

গত ২২ আগস্ট রাতে টেকনাফের জাদিমুরা এলাকার যুবলীগ নেতা ওমর ফারুককে নিজ বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে পাহাড়ের পাশে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এর পরদিন স্থানীয় যুবলীগ কর্মীরা কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক ব্যারিকেড, এনজিও’র গাড়ি ভাংচুর ও কয়েকটি রোহিঙ্গাদের দোকানপাট ভাংচুর করে। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে নিরাপত্তা ইস্যুতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ইউএনএইচসিআর সম্মতি গ্রহণের কার্যক্রম স্থগিত করে দেয়। যা আদৌ শুরু করা সম্ভব হয়নি। এছাড়াও ২৪ আগস্ট টেকনাফ জাদিমুরা পাহাড়ি এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় আরও দুই রোহিঙ্গা। এরপর থেকে টেকনাফের রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবির ও স্থানীয়দের মাঝে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

এদিকে স্থানীয়রা দাবি করছেন, পুলিশ ক্যাম্প করার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করতে দ্রুত সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করতে হবে। টেকনাফের জাদিমুরা, শালবাগান, লেদা, নয়াপাড়া ও আলীখালী রোহিঙ্গা শিবিরগুলো দিন দিন ভয়ানক হয়ে উঠছে। এসব শিবিরের আশপাশে থাকা স্থানীয় লোকজন নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন।

টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আলম বলেন, সম্প্রতি যুবলীগ নেতা ওমর ফারুককে রোহিঙ্গারা গুলি করে হত্যা করেছে। যা কাম্য ছিল না। এরপর পুলিশের একটি দল জাদিমুরা এলাকায় পরিদর্শনে আসেন। আমরা ওইসময় বার বার দাবি জানিয়েছি যাতে টেকনাফের রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরগুলোতে দ্রুত পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন এবং নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।

তার প্রেক্ষিতে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম টেকনাফ রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরগুলো ঘুরে দেখেন। তার সঙ্গে ছিলেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের প্রতিনিধি ও টেকনাফের জাদিমুরা শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জ মোহাম্মদ খালেদ হোসেন, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এর কক্সবাজার সিনিয়র লিঁয়াজো অফিসার মোহাম্মদ বায়েজিদ, টেকনাফ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এবিএমএস দোহা।

এদিকে এসব বিষয় নিয়ে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অনেক সমস্যা রয়েছে। কারণ ক্যাম্পের এদিকে পাহাড় অন্যদিকে স্থানীয় জনগণের পাশে ক্যাম্পগুলো গড়ে উঠেছে। কিন্তু ওইসব এলাকায় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশের কোন ক্যাম্প নেই। এ কারণে টেকনাফে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে অনেক কষ্ট হয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, পুলিশ সদস্য পর্যাপ্ত রয়েছে; কিন্তু থানা থেকে গিয়ে ক্যাম্পে দায়িত্বপালন করতে হয়। যার দূরত্ব অনেক। কিন্তু ক্যাম্পে থাকার মত স্থাপনা নেই। আশ্রয় শিবির এলাকায় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সবসময় নিয়ন্ত্রণে না থাকার একমাত্র কারণ হচ্ছে এটি। আমরা বার বার বলছি; যেখানে ক্যাম্প আছে সেখানে পুলিশ ক্যাম্প তৈরি করে দেয়া জন্য। কিন্তু এখনো তেমন কোন সাড়া পায়নি। এখন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে; জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনএইচসিআর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে টেকনাফ এলাকায় তারা ৩টি পুলিশ ক্যাম্প তৈরি করে দিবে। আমরা ইতিমধ্যে জায়গা নির্বাচন করেছি। আশা করি অচিরেই এই ক্যাম্পগুলো প্রতিষ্ঠিত হবে। এগুলো প্রতিষ্ঠিত হলে টেকনাফ এলাকায় রোহিঙ্গারা যেসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায় বিশেষ করে পুরাতন রোহিঙ্গারা তাদের দমন করা আমাদের পক্ষে সহজ হবে।

উল্লেখ্য টেকনাফের জাদিমুরা, শালবাগান, নয়াপাড়া, আলীখালী ও লেদা আশ্রয় শিবিরগুলোতে প্রায় ২ লাখের অধিক রোহিঙ্গা বসবাস করছে। কিন্তু শুধুমাত্র নয়াপাড়া আশ্রয় শিবিরে ছোট একটি পুলিশ ফাঁড়ি থাকলেও অন্য আশ্রয় শিবিরগুলোতে কোন ধরণের পুলিশ ক্যাম্প নেই।

 

রাইজিংবিডি/কক্সবাজার/১ সেপ্টেম্বর ২০১৯/সুজাউদ্দিন রুবেল/বুলাকী

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়