ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

নৈসর্গিক পরিবেশে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা

আবু বকর ইয়ামিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৩, ১৫ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নৈসর্গিক পরিবেশে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা

স্বচ্ছল অনেক অভিভাবকই লেখাপড়ার জন্য সন্তানদের লন্ডন, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পাঠান। তবে বিদেশ নয়, স্কুলপর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে দেশেই গড়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক মানের একটি বোর্ডিং স্কুল। ইতোধ্যেই প্রতিষ্ঠার এক বছর পার করেছে স্কুলটি।

মেঘালয় পর্বতমালার সান্নিধ্যে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার শ্রীপুরে নৈসর্গিক পরিবেশে ‘জাফলং ভ্যালি বোর্ডিং স্কুল’ নামে এই আবাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জাফলংয়েরই পাহাড়, টিলা আর সবুজের সমারোহে ১৫০ একর জায়গাজুড়ে গড়ে উঠেছে এই বোর্ডিং স্কুল।

স্কুলটিতে রয়েছে ৬৫টি ক্লাসরুম, চারটি অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরির্য়িটি খেলার মাঠ, তিনটি হোস্টেল ব্লক, ইনডোর গেমসের ব্যবস্থা, স্টাফ কোয়ার্টার, মসজিদসহ নানা স্থাপনা। এখানে পাঠদান করছেন দেশি-বিদেশি শিক্ষক।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে গুণগত শিক্ষাদানের পাশাপাশি ভবিৎষতে নেতৃত্বদানের গুণাবলি সম্পন্ন, দক্ষ, দেশপ্রেমী এবং আলোকিত ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তোলাই এই স্কুলের মূল লক্ষ্য। এছাড়া অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উজ্জীবিত হৃদয়ে লালন করে সংগীত ও শরীরচর্চাসহ বিভিন্ন সহ-শিক্ষামূলক কার্যক্রমও চালু রয়েছে স্কুলটিতে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশে ভালো মানের শিক্ষা প্রতিষ্টানের অভাবে অনেকেই বিদেশে গিয়ে লেখাপড়া করে। এক্ষেত্রে অভিভাবকদের লাখ লাখ টাকা গুণতে হয়। অনেকের ইচ্ছে থাকে, কিন্তু এত টাকা ব্যায় করে সন্তানকে লেখাপড়া করানোর সামর্থ্য থাকে না। বিষয়টি মাথায় রেখে দেশের ১৪ জন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী-শিক্ষাবিদ মিলে এই আবাসিক স্কুলটি গড়ে তুলেছেন।

২০১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে স্কুলের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ষষ্ট থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় পাঠ্যক্রম অনুসরণ করে বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে পাঠদান করা হয়।

জানা যায়, অভিজ্ঞ দেশি-বিদেশি শিক্ষক দ্বারা এই প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীভেদে এ স্কুলে মাসে সর্বসাকুল্যে ২০ হাজার টাকা দিতে হয়। বছরে এককালীন সেশন ফি দিতে হয় ৬০ হাজার টাকা।

স্বাস্থ্য ও পরিবেশবান্ধব আবাসন ব্যবস্থার পাশাপাশি নিয়মিত মানসম্পন্ন ও পুষ্টিকর খাবার পরিবেশন করা হয় শিক্ষার্থীদের। যোগাযোগশৈলী ও নেতৃত্ব বিকাশে এখানে শিক্ষার্থীদের বিশেষ যত্ন নেওয়া হয়।

বর্তমানে এ স্কুলে ১১৯ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। প্রায় ৯৫০ জন শিক্ষার্থীর আবাসন সুবিধা রয়েছে এখানে। শিক্ষক রয়েছেন ২১ জন। এদের মধ্যে অধ্যক্ষসহ তিন জন ভারতীয় শিক্ষক রয়েছেন।

স্কুলটিতে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের সুবিধা রয়েছে। আইসিটি ল্যাব ও সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার নিয়মিত ব্যবহার করা শিক্ষার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলক।

শিক্ষার মান আর সহপাঠমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে এরই মধ্যে দেশবাসীর দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হয়েছে ভিন্নধর্মী এই শিক্ষালয়টি। খ্যাতনামা শিক্ষানুরাগী কয়েকজন ব্যবসায়ীর সার্বিক প্রচেষ্টায় হাঁটি হাঁটি পা পা করে চলতে শুরু করা জাফলং ভ্যালি বোর্ডিং স্কুল পরিচালিত হচ্ছে দেশি শিক্ষাক্রমে।

এখানে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি ভার্সনেও শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হয়। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে রয়েছেন সুদক্ষ শিক্ষক মণ্ডলী।

জাফলং ভ্যালি বোর্ডিং স্কুলের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে রয়েছেন সিলেট-৫ আসনের সংসদ সদস্য আইনজীবী হাফিজ আহমেদ মজুমদার, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদ, স্কয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী, হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে. আজাদ, প্যারাগন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান, ওপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. আর. সিনহা, নিট এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মতিন চৌধুরী, শারমিন গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইসমাইল হোসেন, মাহিন গ্রুপ অব কোম্পানিজের চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, রেশানুর চৌধুরী (ঢাকা ব্যাংক), জনসংখ্যা কাউন্সিলের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. উবায়দুর রব, সাফওয়ান চৌধুরী (এম. আহমেদ গ্রুপ), কবির ইয়াকুব (পূবালী ব্যাংক), জকিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান লুকমানুদ্দিন চৌধুরী এবং শিক্ষাবিদ ড. কবির চৌধুরী।

স্কুলটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন সিলেট-৫ আসনের সংসদ সদস্য হাফিজ আহমেদ মজুমদার।

২০১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে যাত্রা শুরু করা এ স্কুলের অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিয়েছেন ভারতের খ্যাতিমান শিক্ষক বিরাজ কিশোর ভরদ্বাজ।

তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থী দেশের বাইরে বিভিন্ন বোর্ডিং স্কুলে পড়তে যায়। বিশেষ করে দার্জিলিংয়েই বেশি যায়। আমাদের লক্ষ্য এসব শিক্ষার্থীদের এদেশেই ধরে রাখা। আমার বিশ্বাস, কোনো অভিভাবক যদি একবার এ স্কুল পরিদর্শন করেন, তা হলে তিনি আর অন্য কোথাও যাবেন না। এখানে ন্যাশনাল কারিকুলামে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। সন্তান দেশে থাকায় অভিভাবকরাও নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন।’

অধ্যক্ষ বলেন, ‘এখানে ক্যাডেট কলেজের মতোই নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয়। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ও নাশতা পায় শিক্ষার্থীরা। ছয়টি খেলার মাঠে পর্যাপ্ত খেলাধুলার সুযোগ রয়েছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে জগিং করতে হয়। ক্লাসের পাশাপাশি স্পেশাল ক্লাস, কোচিং ও সাংস্কৃতিক চর্চার ব্যবস্থা রয়েছে। সব সময় শিক্ষকদের সাহায্য পায় শিক্ষার্থীরা।’

শিক্ষকদের দক্ষতা বাড়াতে হাফিজ মজুমদার ট্রাস্টের রিসোর্স সেন্টারে তাদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।


ঢাকা/ইয়ামিন/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়