ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

নোবেলের যত কাণ্ড

আমিনুল ইসলাম শান্ত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:১৫, ২৬ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
নোবেলের যত কাণ্ড

মাইনুল আহসান নোবেল

বর্তমানে বহুল চর্চিত নাম মাইনুল আহসান নোবেল। ভারতের জি-বাংলার রিয়েলিটি শো ‘সারেগামাপা ২০১৯’ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সংগীতাঙ্গনে পা রাখেন তিনি। এই শোয়ে অন্যের গাওয়া গান কাভার করে খুব অল্প সময়ের মধ্যে শ্রোতাপ্রিয়তা লাভ করেন তিনি।

কিন্তু সংগীত ক্যারিয়ারের শুরুতেই বিতর্কে জড়ান নোবেল। শুরুতে তার ভক্তরা নোবেলের পক্ষে দাঁড়ালেও সময়ের সঙ্গে তারাও সরে যান। নোবেলের কাণ্ডজ্ঞানহীম কর্ম এজন্য দায়ী! খুব অল্প সময়ের ক্যারিয়ারে অনেক বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন তিনি। তার বিতর্কিত ঘটনা নিয়ে সাজানো হয়েছে এই প্রতিবেদন।

প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে বিতর্ক

প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে বিতর্কের মুখে পড়েন নোবেল। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে নোবেলের বেশকিছু আপত্তিকর ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এক কিশোরীর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ছড়ানো হয় ছবিগুলো। নোবেলের বিরুদ্ধে প্রেম ও সর্বস্ব লুটের অভিযোগ তুলেছিলেন ১৬ বছর বয়সি ওই ছাত্রী। ছাত্রীটি অভিযোগ করেছিলেন, গোপালগঞ্জে থাকার সময় নোবেলের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে নোবেল তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কেও জড়িয়েছিল। শুধু তাই নয়, মাতাল অবস্থায় গোপালগঞ্জের যেখানে সেখানে পড়ে থাকতো নোবেল। এভাবে অনেক মেয়ের জীবন সে নষ্ট করেছে বলেও মেয়েটি অভিযোগ করেন।

জাতীয় সংগীত অবমাননার অভিযোগ

২০১৯ সালের আগস্টের শুরুতে এক সাক্ষাৎকারে প্রিন্স মাহমুদের লেখা ‘বাংলাদেশ’ গানটিকে নোবেল বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের সঙ্গে তুলনা করেন। এ ভিডিও সাক্ষাৎকারে নোবেল বলেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথের লেখা জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’ যতটা না দেশকে (বাংলাদেশ) এক্সপ্লেইন করে, তারচেয়ে কয়েক হাজার গুণ বেশি এক্সপ্লেইন করে প্রিন্স মাহমুদ স্যারের লেখা ‘বাংলাদেশ’ গানটা।’’ জাতীয় সংগীত নিয়ে নোবেলের এমন মন্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয়। তাকে তুলোধুনো করেন সব শ্রেণির শ্রোতা-দর্শক। এ নিয়ে কলকাতার বেশ ক’জন শিল্পীও কড়া মন্তব্য করেছিলেন। নোবেলের এমন কাণ্ডে তার ভক্তরাও বেশ বেকায়দায় পড়ে যান। শুধু তাই নয়, তার কাণ্ডজ্ঞান নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেন।

গান চুরির অভিযোগ

গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর নোবেল তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ ও ইউটিউবে ‘দেশ’ শিরোনামে একটি গান প্রকাশ করেন। গানটির কথা ও সুর নিজের বলে দাবি করেন। এরপর নোবেলের বিরুদ্ধে এই গান চুরির অভিযোগ তুলেন ব্যান্ডদল ‘অ্যাবাউট ডার্ক’। ২০১৮ সালেও নোবেল এই গানটি নিজের দাবি করে প্রকাশ করেছিল। তখন সমালোচনার মুখে পড়ে গানটি সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। শুধু তাই নয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে নোবেল ক্ষমা চেয়েছিল বলেও জানান ‘অ্যাবাউট ডার্ক’ ব্যান্ডের সদস্য পূর্ণ।

দেশের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে বিরূপ মন্তব্য

গত ১৯ মে দেশের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিকে প্রায় চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন নোবেল। তার দাবি গত ১০ বছরে এই দেশের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি দাঁড়াতেই পারেনি। নিজের ফেসবুক পেজে নোবেল লিখেছিলেন—‌‘বাংলাদেশে তো গত ১০ বছরে ভালো করে কেউ মিউজিকই করেননি। দাঁড়াও তোমার লেজেন্ডদের না হয় আমিই শিখাবো, কীভাবে ২০২০ সালে মিউজিক করতে হয়।’ তারপর শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। দেশের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির কেউ কেউ নোবেলের এমন মন্তব্যকে ‘পাগলের প্রলাপ’ বলেছেন। এতে নোবেল ভক্তদের বিব্রত হতে দেখা গেছে। যদিও পরবর্তীতে নোবেল জানান, এসবই তার পরবর্তী একটি গানের প্রচারণার জন্য করেছেন তিনি। কাউকে আঘাত দেওয়া তার উদ্দেশ্য ছিল না।

নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে কটাক্ষ

কয়েকদিন আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে কটাক্ষ করা স্ট্যাটাস দেন নোবেল। এতে তিনি লিখেছিলেন—‘স্ক্যান্ডাল আমার হবে না তো হবে কার? চায়ের দোকানদার নরেন্দ্র মোদির? কে দেখবে চা-ওয়ালার স্ক্যান্ডাল? অন্যদিকে আমাকে নগ্ন দেখার মধ্যে তো বিরাট তৃপ্তি তাই না? নাহলে কি স্ক্যান্ডাল এত ভাইরাল হয়?’ এমন পোস্টের পর নেটিজেনদের সমালোচনার মুখে পড়েন নোবেল। বিষয়টি নিয়ে ভারতীয় কয়েকটি সংবাদমাধ্যম খবরও প্রকাশ করে।

বিতর্কের মুখে পড়ে গত ২৪ মে এ শিল্পী তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে ভুল স্বীকার করে লিখেন—‘মোদিজির প্রেমে এখন ইন্ডিয়া মাতাল। মোদিজি জানতে পারলে আমাকে নোবেল পুরস্কার দিতেন। যে মোদিজিকে ক’দিন আগে সবাই গণহারে গালি দিত, সেই মোদিজির আজ কত শুভাকাঙ্ক্ষী। এসব কার অবদান, তোমরা বলো? বাই দা রাস্তা, সরি মেরে ইন্ডিয়ান ভাই ও বেহেনরা। আমার স্ট্যাটাসটা দেওয়া উচিত হয়নি। মাঝে মধ্যে ভুলে যাই আমি তো ইন্ডিয়ান নই। ক্ষমা করে দিও।’

নোবেলের গোপন বিয়ে

গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশ্যে আসে নোবেলের গোপন বিয়ের খবর। তার বিয়ের কাবিননামাকে কেন্দ্র করে এ খবর চাউর হয়। কাবিননামা থেকে জানা যায়, নোবেলের স্ত্রীর নাম মেহরুবা সালসাবিল। ২০১৯ সালের ১৫ নভেম্বর তারা বিয়ে করেন। বিয়ের দেনমোহর ধার্য করা হয়েছে ৫ লাখ টাকা। আরো জানা যায়—নগরীর নিকেতন এলাকায় একটি ফ্ল্যাটে স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করছেন নোবেল। তবে কিছু গণমাধ্যম নোবেলের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়র বরাত দিয়ে জানায়, এটি নোবেলের তৃতীয় বিয়ে। এর আগেও তিনি আরো দুইবার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। গতকাল সারাদিন নানা সমালোচনার পর রাতে বিয়ের কথা স্বীকার করেন নোবেল। এও জানান, এটি তার তৃতীয় নয়, প্রথম বিয়ে।

 

ঢাকা/শান্ত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়