ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

নৌযান শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি চলছে

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৪২, ৩০ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নৌযান শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি চলছে

১১ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ‌্যে বরিশালে অনির্দিস্টকালের কর্মবিরতি চলছে।

শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে অনির্দিস্টকালের কর্মবিরতিতে  যান নৌযোন শ্রমিকরা।

নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র প্রদান, দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, ভারতগামী জাহাজের শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাশ প্রদান, নৌপথে নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ ১১ দফা দাবির পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন কর্মবিরতি আহ্বানকারী সংগঠন নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের বরিশাল অঞ্চল সভাপতি আবুল হাসেম মাস্টার।

তিনি জানান, এর আগে ৩ দফা কর্মবিরতিকালে মালিক এবং সরকার পক্ষ শুধু তাদের কাছ থেকে সময় নিয়েছে। এমনকি লিখিত প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা শ্রমিকদের একটি দাবিও পূরণ করেননি। যতক্ষণ পর্যন্ত দাবি আদায় না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত নৌ শ্রমিকরা তাদের কর্মবিরতি চালিয়ে যাবেন।

নৌযান শ্রমিক সরোয়ার হোসেন জানান, তিনি এক জাহাজে কর্মরত আছেন। কিন্তু মালিক কর্তৃপক্ষ তাকে কোন পর্যন্ত নিয়োগপত্র কিংবা পরিচয়পত্র দেননি। নেই কোন প্রভিডেন্টফান্ড। তাই এই অনিশ্চিত চাকরি আর করতে চাচ্ছেন তিনি।

স্থানীয় রুটের এক লঞ্চের কেরানী দেলোয়ার হোসেন খান জানান, তিনি লঞ্চে চাকরি করছেন এই মর্মে কোন কাগজপত্র তার কাছে নেই।  আজ আছেন কাল মালিক ঘাড় ধরে নামিয়ে দিলে কিছুই বলার থাকবে না। তাই এখন থেকে চাকরির নিশ্চয়তা চান তিনি।

বরিশাল-ঢাকা রুটের এমভি সুরভীর-৮ লঞ্চের ড্রাইভার আবু তালেব খান জানান, নৌ দুর্ঘটনা কিংবা দায়িত্বরত অবস্থায় এক শ্রমিক মারা গেলে তার মরদেহ বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে মালিক দায় শেষে করেন।  এখন পর্যন্ত কোন মালিক নিহত শ্রমিকের পরিবারকে কোন ক্ষতিপূরণ দেননি। এখন থেকে দুর্ঘটনা কিংবা দায়িত্বরত অবস্থায় কোন শ্রমিক মারা গেলে তার পরিবারকে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

বরিশাল-ঢাকা রুটের এমভি কুয়াকাটা-২ লঞ্চের ইনচার্জ মাস্টার জালাল আহমেদ জানান, ১১ দাবির সবগুলোই যৌক্তিক। এর কোনটি বাদ দেয়ার মতো নয়।

সাধারণ মানুষ বলছেন, নৌ শ্রমিকদের কর্মবিরতি মানেই জনদুর্ভোগ এবং নিত্যপণ‌্যের মূল্য আরেক দফা বৃদ্ধি পাওয়া। তারা মানুষকে জিন্মি না করে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে পারেন। শ্রমিকদের দাবি ন্যায্য হলে সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তারা।

জনগণকে বেকায়দায় ফেলে কেন আন্দোলন জানতে চাইলে বরিশাল-ঢাকা রুটের এমভি সুন্দরবন-১১ লঞ্চের প্রধান মাস্টার মো. আলমগীর হোসেন জানান, তারাও জনদুর্ভোগ চান না। কিন্তু তাদেরও বাঁচতে হবে। ১১ দফা তাদের প্রাণের দাবি। সরকার এবং মালিক পক্ষ শ্রমিকদের দাবি গ্রাহ্য করছে না। কর্তৃপক্ষ দ্রুত সময়ের মধ্যে নৌযান শ্রমিকদের দাবি পূরণ করলে কর্মবিরতিতে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না।

উল্লেখ্য, ১১ দফা দাবিতে ২০১৫ সালের জুলাইতে প্রথম আন্দোলন শুরু করে নৌযান শ্রমিকরা। এক বছর পর ২০১৬ সালের আগস্টে শ্রমিকদের কঠোর আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ওই সময় সরকার শ্রমিকদের দাবি মেনে নিয়ে গেজেট প্রকাশ করে। কিন্তু ওই গেজেট বাস্তবায়ন না হওয়ায় চলতি বছর ২৩ জুলাই থেকে টানা ৩ দিন কর্মবিরতি করেন তারা। ওই সময় দাবি মেনে নেওয়ার জন্য ১ মাসের সময় নিলেও পর্যন্ত নৌযান শ্রমিকদের দাবি পূরণ হয়নি।



বরিশাল/স্বপন/বুলাকী

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়