ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

পছন্দের প্রার্থী না হওয়ায় হয়রানি!

আবু বকর ইয়ামিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১০, ৬ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পছন্দের প্রার্থী না হওয়ায় হয়রানি!

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংগীত বিভাগের এক কর্মকর্তাকে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করাসহ নানা হয়রানি করা হচ্ছে বলে বিভাগীয় চেয়ারম্যানেরে বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন ওই বিভাগে দায়িত্বরত এক কর্মকর্তা।

নিজেদের পছন্দের বাইরে সংগীত বিভাগে প্রভাষক পদে আবেদন করায় এমন চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তার। সংগীত বিভাগের বর্তমান চেয়ারম্যান টুম্পা সমাদ্দারের সঙ্গে মিলে ওই বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মহসীনা আক্তার খানমও একইরকম চাপ প্রয়োগ করছেন বলে অভিযোগ তোলেন তিনি। 

অভিযোগকারী কর্মকর্তার নাম জাকির হোসেন। তিনি ওই বিভাগে তিন বছর খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বলে জানা যায়।

জাকির অভিযোগ করেন, লীনা তাপসী ও টুম্পা সমাদ্দার তাকে বিভিন্ন ধরণের হুমকি দিয়েছেন এবং বিভাগের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করেছেন। তাকে ফাঁসানোর জন্য ‘অপরিচিত লোকজনের’ মাধ্যমে পকেটে মাদক দ্রব্য রাখা ও ব্যবহৃত মোবাইল ফোন চুরি করার চেষ্টাও হয়েছে বলে জানান তিনি।

‘মানসিক নির্যাতনের’ শিকার হয়ে সম্প্রতি চাকরি থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে অব্যাহতি পত্র জমা দেন জাকির হোসেন। অব্যাহতির প্রেক্ষাপট নিয়ে সাবেক ও বর্তমান বিভাগীয় চেয়ারম্যানদ্বয়ের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বরাবর অভিযোগ করেন জাকির হোসেন।

জাকিরের দাবি, ওই পদের বিজ্ঞপ্তির সব শর্ত মেনেই তাকে চাকরি দেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে সিন্ডিকেট তাকে চূড়ান্ত নিয়োগ দেয়। তিনি ডেমোনেস্ট্রেটর পদে ৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৭ সালে সংগীত বিভাগে প্রভাষক পদের একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলে জাকির হোসেন পদটিতে আবেদন করার জন্য চেয়ারম্যানের মাধ্যমে রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদন করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সংশ্লিষ্ট পদে বিভাগের তৎকালীন চেয়ারম্যান লীনা তাপসীর পছন্দের প্রার্থী ছিলেন স্বরূপ হোসেন। স্বরূপ হোসেনের বিপরীতে জাকির হোসেন ওই পদে আবদেন করায় লীনা তাপসী তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন বলে অভিযোগ জাকিরের।

তার অভিযোগ, পদটিতে আবেদন করার জের ধরে একই বছরের ২০ এপ্রিল লীনা তাপসী তার ডেমনস্ট্রেটর পদে নিয়োগ যথাযথভাবে হয়নি বলে তাকে জানান। একের পর এক নতুন পদ্ধতিতে তার উপর আসতে থাকে নানাধরণের হয়রানি। লীনা তাপসী চাকরি বাঁচাতে তাকে মানববন্ধন করার পরামর্শ দেন। প্রভাষক হিসবে নিয়োগ পেয়ে স্বরূপ হোসেনও এসব নির্যাতনে যোগ দেন।

সর্বশেষ এ বছরের জুন মাসে টুম্পা সমদ্দার জাকির হোসেনকে স্বেচ্ছায় চাকরি না ছাড়লে বরখাস্ত করার হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেন জাকির।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক বিভাগ থেকে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, জাকির হোসেন হয়রানি ও চাকরি ছাড়তে বাধ্য করার পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগের বিভিন্ন অনিয়ম, শিক্ষকদের লেখা চুরি এবং বিভাগের সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে উপাচার্য বরাবর রেজিস্ট্রারের কাছে এ বছরের ১৫ জুলাই অভিযোগ জমা দেন। প্রশাসনিক কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা এসব অভিযোগের বিষয়টি টুম্পা সমাদ্দারকে জানান।

তখন টুম্পা সমাদ্দার এবং লীনা তাপসী তাদের বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগ যেন উপাচার্য পর্যন্ত না পোঁছায় সেজন্য প্রশাসনিক বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তাদের হাতকরার চেষ্টা করেন। কিন্তু বিষয়টি জানাজানি হয়ে যাওয়ায় তা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে বিভাগের চেয়ারম্যান টুম্পা সমাদ্দার বলেন, জাকির হোসেনকে কোনোরকম হয়রানি করা হয়নি। আমাদের বিভাগে অনেক শিক্ষকেরই বসার কক্ষ নেই, তারও ছিল না। সে কেন চলে গেছে তা আমি জানি না। তাকে নিয়ে আসার জন্য আমাদের কয়েকজন শিক্ষক তার বাড়িতে গিয়েছিলেন, তার মোবাইলে বারবার ফোন দেয়া হয়েছে কিন্তু সে ধরেনি। যেহেতু সে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েছে বাকিটা তারা দেখবে।

বিষয়টি নিয়ে সাবেক চেয়ারম্যান ড. মহসীনা আক্তার খানম বলেন, তার মাস্টার্স নেই। সে ভারত থেকে একটা ডিপ্লোমা করেছে। তাকে আমরা বারবার এটা করতে বলেছি সে করেনি। সে এমফিল করতে চেয়েছিল। তাই সার্টিফিকেট চেয়েছিলাম।

তিনি বলেন, আমরা ওকে সেভ করতে চেয়েছি। ওর চাকরি খাওয়ার ইচ্ছে থাকলে প্রথম থেকেই আমরা ওর পিছনে লাগতাম। কিন্তু আমাদের কোনো ইচ্ছে নেই।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান এখনো কোনো অভিযোগের বিষয়ে জানেন না বলে জানান। তিনি বলেন, এগুলো খুবই গুরুতর অভিযোগ। আমার কাছে পৌঁছালে আমি দেখব। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী এগুলোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/০৬ আগস্ট ২০১৯/ইয়ামিন/নবীন হোসেন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়