ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

পঞ্চম পর্ব || টোকিও ট্যুর

শাকুর মজিদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৩৩, ১৩ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পঞ্চম পর্ব || টোকিও ট্যুর

গাড়িতে বসে আমরা টোকিও’র প্রায় সব গল্প শুনে ফেলি। এদের রেল লাইন, স্টেশন, বুলেট ট্রেন, এদের স্কাই ট্রি, টোকিও টাওয়ার, দ্রুততম লিফট, পুরনো প্যাগোডা, নতুন দালান- সব। সময় পেলে সেগুলো একে একে দেখা যাবে। আপাতত নেমে যাবো বাস থেকে। আমাদের নিয়ে যাচ্ছে তাদের সদরঘাট, সেখান থকে রিভার ক্রুজে নদীর দুই পাড় দেখবো। কিন্তু সদরঘাটে না নামিয়ে আমাদের নামালো জনসন রোডের মাথায়। কারণ বাস থামার জায়গা ওটাই। যেখানে বাস থামার জায়গা নয় সেখানে বাস থামবে না, জায়গা খালি থাকলেও না। আমাদের বলা হলো এখান থেকে ৪০০ মিটার হেঁটে যেতে হবে নদীর পাড়ে, সেখানে কোনো একটা ব্রিজের নিচে আমাদের ফেরি আছে। ১৫ মিনিট পর ফেরি ছাড়বে। কিন্তু আমাদের দেরী করিয়ে দিলো কতোগুলো রিকশা। দেখি দুই-তিনটা টানা রিকশার উপর দুজন দুজন করে কতোগুলো পশ্চিমা তরুণ-তরুণী বসে ভিক্টোরি সাইন দেখাচ্ছে, তাঁদের সামনে থাকা হাফ প্যান্ট পরা কতোগুলো জাপানী তরুণের দিকে, যাদের হাতে মোবাইল ফোন। এই ফোন দিয়ে তাঁদের ছবি তোলা হচ্ছে। আরব দেশে গেলে যেমন উটের পিঠে চড়ে আমরা ছবি তুলি, এদের কাছে বিষয়টা তাই।

ছবি তোলা শেষ হলে টানা রিকশায় বসিয়ে এই দুই যুগলকে নিয়ে দুই স্মার্ট তরুণ রিকশাওয়ালা ছুটে চললো। তারা কোথায় যাবে জানি না, তবে যে অবশিষ্ট আরো দুটি রিকশা সেখানে দাঁড়িয়ে তার এক মালিককে বললাম- রিকশা ?

ফেরি থেকে দেখা টোকিওর স্কাই লাইন

চমকে উঠল তরুণ! তবে খুশি হলো। বলল, ইয়েস ইয়েস, রিকশা, ইউ গো? কাম কাম, অয়ান থাউজ্যান্ড ইয়েন- টুয়েন্টি মিনিটস, কাম অ্যান্ড গো।

তারে বলি, ভাইরে, আমার সময় নাই। তবে এই জিনিসটা আমরা চিনি, এরে আমরাও ‘রিকশা’ বলি। যদিও, আমাদের রিকশা তিন চাকার, এই ডিজাইনের রিকশা আমাদের পড়শি কলকাতায় আছে, একে ‘টানা রিকশা’ বলে।

খুবই খুশি হয় তরুণ।

আসলেই বাংলা ‘রিকশা’ শব্দটি এসেছে জাপানি ‘জিনরিকিশা’ (জিন = মানুষ, রিকি = শক্তি, শা = বাহন) শব্দটি থেকে, যার আভিধানিক অর্থ হলো ‘মনুষ্যবাহিত বাহন’। পালকির বিকল্প হিসেবে জোনাথন স্কোবি নামে একজন মার্কিন মিশনারি ১৮৬৯ সালে রিকশা উদ্ভাবন করেন। স্কোবি থাকতেন জাপানের সিমলায়। ১৮৬৮ সালে এই টোকিওতে মেইজি বংশের রাজারা রাজত্ব শুরু করে নিশ্চয়ই এ ধরনের যানবাহনে চড়েছেন, তখন এটাই ছিলো তাঁদের কাছে মার্সিডিজ বেঞ্চ। আমরা ঠেকায় পড়লে চড়ি, আমাদের গাও গেরামের লোকেরা চড়ে। অবশ্য আমাদের দেশে প্রথম রিকশা আসে চট্টগ্রামে, মিয়ানমার থেকে ১৯১৯ সালে, ঢাকায় আসে আরো পরে, কলকাতা থেকে।

পর্যটকদের নিয়ে বয়ে বেড়ানো ফেরি

রিকশাওয়ালার সঙ্গে গল্প করতে করতে, তার ছবি তুলতে তুলতে অবস্থা যা দাঁড়ালো; আমি আমাদের পুরো দল থেকেই হারিয়ে যাই! আমাদের বলেছিল কোনো এক ব্রিজের তলায় জেটি থাকবে, এমন ব্রিজ এখানে অনেকগুলো। যে নদী টোকিও শহর দুই ভাগ করেছে তার উপর ২৬খানা ব্রিজ। আমি বাম দিকের একটা ব্রিজের কাছাকাছি গিয়ে দেখি সেখানে কোনো জেটি নাই। এরকম অবস্থায় পরেছিলাম ২০০৩ সালে বার্লিনে, তখন দল থেকে হারিয়ে সারাদিন মাটি হয়েছিল আমার। এবার হারানোর সুযোগ নাই। আমাদের সবার হাতে ফোন। ক্ষণিক পরে ভাইবারে আওয়াজ পাই। লাভলু ভাই ফোন করেছেন। আমি বুঝলাম, একটা টি বরাবর গিয়ে যেখান দিয়ে বামে গিয়েছিলাম সেখান থেকে ডান দিকে যেতে হবে। কথা ছিলো ৪০০ মিটার হাঁটবো, আমার হাঁটা হলো প্রায় ১ কিলোমিটার এবং এরপর যখন ঘাটে পৌঁছালাম, সবগুলো চোখ আমার দিকে ধাবমান। আমি ওঠা মাত্রই ফেরি ছেড়ে দিলো।

আমরা ৪০ মিনিট ধরে নদীর দুই পাড় দেখে একটা ঘাটে ভিড়লাম। সেখানে একটা বাগান আছে। জাপানি বাগান। কিন্তু দেখার সুযোগ হলো না। বৃষ্টি। কোনো মতো দৌঁড়ে ও-পাড়ে গিয়ে বাসে উঠলাম। আমরা যাবো টোকিও’র বায়তুল মোকাররম মার্কেট আকিহারাবা। তার আগে বাস আমাদের নামিয়ে দেবে মিজি বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমার সঙ্গী লাভলু ভাই। তিনি ছবি তুলতে খুব আনন্দ পাচ্ছেন। আমি তার হাতেও একটা ক্যামেরা ধরিয়ে দিয়েছি।

মেইজি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুরু গাদাই ক্যাম্পাস থেকে দুই মিনিট হাঁটার দূরত্বে ওচানোমিজু স্টেশন। সেখান থেকে মেট্রোতে বারো মিনিটের পথ আকিহাবারা। জনপ্রতি টিকিট ১৬০ ইয়েন। মেট্রো ধরে নামলাম স্বপ্নের আকিহাবারায়। আন্ডার গ্রাউন্ড স্টেশনের দিক নির্দেশনা দেয়া আছে কোন দিকে গেলে মিলবে ইলেকট্রনিক জগত। সেইদিকে এগিয়ে মাটি ফুরে যখন উপরে উঠলাম, মনে হলো অন্য কোনো গ্রহে এসে পড়িলাম!

রিকশা, ১৮৬৫ সালে জাপানের উদ্ভাবিত দুই চাকার হাতে টানা বাহন

বড় রাস্তাজুড়ে বড় বড় দশ বারো তালা দোকান তো আছেই, সেগুলোর দুই পাশে যত ছোট রাস্তা আছে, সবগুলোতেই ছোট ছোট দোকান ঠাসা। একজন বললো, একেক রাস্তা একেক কারণে বিখ্যাত। আপনার পুরনো ক্যাসেট প্লেয়ারের মাদারবোর্ড নষ্ট হয়েছে? বা পুলি ভেঙ্গে গেছে? তো এই রাস্তায় যান। ক্যামেরার স্পেশাল লেন্স চাই? তো সেই রাস্তা। নতুন আইটেম চাই? তো ঐদিকে! আপনার ইলেকট্রনিক কোনো চাওয়াই ফিরিয়ে দিবে না আকিহাবারা। (চলবে)

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৩ জুলাই ২০১৯/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়