ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

পরিবহণ ব্যবসায়ী ও যাত্রী সাধার‌ণ মুখোমুখি

আব্দুল্লাহ আল নোমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ২২ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পরিবহণ ব্যবসায়ী ও যাত্রী সাধার‌ণ মুখোমুখি

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট: সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে বিআরটিসির বাস চালু হওয়ায় যাত্রীদের মুখে হাসি ফুটেছিল। এ সড়কে চলাচল অনেকটাই স্বস্তির হয়ে উঠেছিল।

স্থানীয় পরিবহণ ব্যবসায়ীদের কারণে এই আঞ্চলিক সড়কের যাত্রীদের সেই সুবিধাটুকু হারিয়ে যেতে বসেছে। তারা এই সড়কটিতে বিআরটিসির বাস বন্ধে এবার সরাসরি আন্দোলনে নেমেছে।

বিআরটিসির বাস প্রত্যাহারসহ পাঁচদফা দাবিতে প্রশাসনকে আল্টিমেটাম দিয়েছে সিলেট বিভাগ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সড়ক পরিবহণ মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। এজন্য তারা পহেলা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ও বেঁধে দিয়েছে। বেঁধে দেয়া সময়ে দাবি না মানলে ২ সেপ্টেম্বর থেকে সিলেট বিভাগ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট পালনের হুমকিও দিয়েছে তারা।

পরিবহণ মালিক-শ্রমিকদের ধর্মঘটের হুমকিকে ‘অযৌক্তিক’বলছেন সুনামগঞ্জের সচেতন নাগরিক মহল। তাদের মতে, এমন ধর্মঘটের ডাক যাত্রী সাধারণকে ‘জিম্মি’করার শামিল। অযৌক্তিক এ আল্টিমেটামের বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জের যাত্রী সাধারণ অবস্থান নেবেন বলেও জানান তারা।

সিলেট থেকে সুনামগঞ্জের দূরত্ব ৬৮ কিলোমিটার। শহরতলীর কুমারগাঁও বাস স্টেশন থেকেই এ অঞ্চলের লোকজন যাতায়াত করেন। কিন্তু এ সড়ক দিয়ে চলাচলকারী বেশিরভাগ বাসই পুরাতন এবং ফিটনেসবিহীন। ফলে সড়কে মানসম্মত বাস সার্ভিসের দাবি জানিয়ে আসছিলেন সুনামগঞ্জবাসী।

এর পরিপ্রেক্ষিতে সড়কে গেটলক সার্ভিস চালু হলেও সেবার মান সেই আগের মতোই ছিল। যে কারণে সড়কে বিআরটিসির বাস সার্ভিস চালুর দাবি জানান তারা। যাত্রী সাধারণের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ৩ জুন থেকে এ সড়কে বাস চলাচল শুরু হয়। শুরুর দিকে প্রতিদিন চারটি নন-এসি এবং দুটি এসি বাস চলাচল করছিল।

তবে পরিবহন শ্রমিকদের চাপের মুখে চলতি মাসের শুরুর দিকে বিআরটিসির দুটি বাস তুলে নেয়া হয়। এ কারণে যাত্রী সাধারণের মাঝে এখন ক্ষোভ বিরাজ করছে।

যাত্রীরা বলছেন, বিআরটিসির উন্নত বাস সেবা চালু করায় তারা খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু পরিবহন শ্রমিকদের অপতৎপরতায় দুটি বাস সরিয়ে নেয়া হয়েছে। যেখানে যাত্রীদের দাবি ছিল, বিআরটিসির আরও বাস এ সড়কে নামানো। সেখানে উল্টা আরো দুটি বাস তুলে নেয়া হয়েছে।

সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক সড়ক যাত্রী কল্যাণ সমিতির আহবায়ক অ্যাডভোকেট রাজ উদ্দিন বলেন, ‘এ সড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা বাস মালিকদের কাছে জিম্মি ছিল। বিআরটিসি বাস চালু হওয়ায় এর অবসান হয়। তবে বাস চলাচলের পর থেকে এ চক্রটি তা বন্ধের জন্য নানা অপতৎপরতা শুরু করে। এর অংশ হিসেবে তারা কয়েকবার ধর্মঘটও আহবান করে। কিন্তু সাধারণ যাত্রীদের প্রতিবাদের মুখে তারা পিছু হটলেও বাস বন্ধে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগসহ সড়কে চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে।’

হাওর বাঁচাও-সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট বজলুল মজিদ চৌধুরী বলেন, ‘যাত্রী সাধারণকে জিম্মি করে এমন আন্দোলন ঠিক নয়। একই সাথে দুটি বাস সড়ক থেকে তুলে নেয়াও ঠিক হয়নি।’ তিনি বিআরটিসি কর্তৃপক্ষকে নজর দেয়ার অনুরোধ করেন।

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) সুনামগঞ্জের সহ-সভাপতি খলিল রহমান বলেন, ‘মালিক সমিতির আল্টিমেটাম অন্যায়, অযৌক্তিক। মানুষের সেবায় সরকারি বাস চলবে, এতে পরিবহন মালিকরা কেন বাধা দেবে।’

এদিকে বিআরটিসি বন্ধ ছাড়াও পাঁচ দফা দাবিতে গত রোববার সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান এবং সিলেট রেঞ্জের উপ-মহা পুলিশ পরিদর্শক কামরুল আহসান বরাবরে পৃথক স্মারকলিপি দেন পরিবহন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সিলেট বিভাগীয় কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সেলিম আহমদ ফলিক বলেন, ‘বিআরটিসি বাস চালুর মাধ্যমে শ্রমিকদের সাথে অমানবিক কাজ করা হয়েছে। এতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’

তিনি বলেন. ‘সুনামগঞ্জ-সিলেট রোডে চালুকৃত বিআরটিসি বাস সার্ভিস বন্ধে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসকের সাথে সমঝোতা বৈঠক হয়েছিলো। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় এ রুটে লোকাল মালিক সমিতির সাথে সমন্বয় করে বিআরটিসির নির্দিষ্ট চালক দিয়ে সুনির্দিষ্ট ৪টি গাড়ী চলাচল করতে পারবে। এছাড়া বিআরটিসি বাস জেলায় নিজস্ব ডিপো হতে এবং যেখানে ডিপো নেই স্থানীয় বাস টার্মিনাল হতে লোকাল মালিক সমিতির সাথে সমন্বয় করে বাস চলাচল করবে। কিন্তু বিআরটিসি সিলেট ডিপো ম্যানেজার এ সিদ্ধান্তকে তোয়াক্কা না করে সুনামগঞ্জ-সিলেট রোডে বিআরটিসি গাড়ী পরিচালনা করে আসছেন। এজন্য তারা এর বিরোধীতা করছেন।’

 

রাইজিংবিডি/ সিলেট/ ২২ আগস্ট ২০১৯/ আব্দুল্লাহ আল নোমান/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়