ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

পর্দা নামল অমর একুশে গ্রন্থমেলার

অহ নওরোজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩৫, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পর্দা নামল অমর একুশে গ্রন্থমেলার

সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক : শেষ হলো মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা, ২০১৮। আজ সন্ধ্যা ৬টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সমাপনী ঘোষণার মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে এবারের বইমেলার।

সমাপনী অনুষ্ঠান শুরু হয় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খানের স্বাগত ভাষণের মধ্য দিয়ে। এরপর মাসব্যাপী চলা বইমেলার ওপর প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন অমর একুশে গ্রন্থমেলার সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইব্রাহীম হোসেন খান। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।

স্বাগত ভাষণে অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, এবারের মেলা সার্বিক অর্থেই সর্বাঙ্গসুন্দর একটি মেলা হয়েছে। এর মাধ্যমে আমাদের সাংস্কৃতিক জাগরণ যে বেগবান হচ্ছে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

প্রতিবেদনে ড. জালাল আহমেদ বলেন, ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলা একাডেমি ১ কোটি ৫১ লাখ ২৪ হাজার  টাকার বই বিক্রি করেছে। ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্টল মালিকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য এবং আজকের সম্ভাব্য বিক্রি যুক্ত করলে বলা যায় যে, এবার বইমেলায় মোট ৭০ কোটি ৫০ লাখ টাকার বই বিক্রি হয়েছে।

প্রধান অতিথি আসাদুজ্জামান নূর বলেন, বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্প্রসারণের সিদ্ধান্তটি যে সঠিক ছিল তা এবারের মেলাতেও প্রমাণিত হয়েছে। এ বছরের ভুলত্রুটিগুলো হয়তো আগামী মেলায় কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।

বিশেষ অতিথি মো. ইব্রাহীম হোসেন খান বলেন, অমর একুশে গ্রন্থমেলা পৃথিবীর অন্যতম বইমেলা। প্রযুক্তির এই যুগে পাঠক যে বই থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়নি, এটা অত্যন্ত আশাব্যাঞ্জক।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, আমাদের দেশে উচ্চ শিক্ষাস্তরে বাংলায় পাঠ্যপুস্তক কম প্রকাশিত হয়। এ ধরনের বই আরো প্রকাশিত হওয়া জরুরি।

তিনি আরো বলেন, এবারের গ্রন্থমেলায় শিশু ও অভিভাবকসহ প্রচুর দর্শনার্থীর আগমন ছিল বিশেষভাবে লক্ষণীয়।

সমাপনী অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি প্রবর্তিত চারটি গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হয়। ২০১৭ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য প্রথমা প্রকাশনকে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার-২০১৮, ২০১৭ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে গুণমান ও শৈল্পিক বিচারে সেরা গ্রন্থের জন্য অলকানন্দা প্যাটেল রচিত ‘পৃথিবীর পথে হেঁটে’ গ্রন্থের জন্য বেঙ্গল পাবলিকেশন্স, সুফি মুস্তাফিজুর রহমান রচিত ‘বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক উত্তরাধিকার’ গ্রন্থের জন্য জার্নিম্যান বুকস, মঈন আহমেদ সম্পাদিত ‘মিনি বিশ্বকোষ পাখি’ গ্রন্থের জন্য সময় প্রকাশনকে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার-২০১৮, ২০১৭ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য চন্দ্রাবতী একাডেমিকে রোকুনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার-২০১৮ এবং ২০১৮ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে থেকে নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে কথাপ্রকাশকে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার-২০১৮ প্রদান করা হয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত সকলকে ২৫ হাজার টাকার চেক, সনদ ও ক্রেস্ট দেওয়া হয়।

শেষ দিনে বইমেলায় নতুন বই এসেছে ২৫৫টি। এ নিয়ে মাসব্যাপী প্রকাশিত নতুন বইয়ের সংখ্যা ৪ হাজার ৫৯১।

সমাপনী অনুষ্ঠানের আগে বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে ছিল ‘বাংলদেশের নৃগোষ্ঠী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাহমান নাসির উদ্দিন। আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী এবং রণজিত সিংহ। সভাপতিত্ব করেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার উপাচার্য অধ্যাপক রাশিদ আসকারী।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের নৃগোষ্ঠী সাংস্কৃতিকভাবে যে সমৃদ্ধ ঐতিহ্য বহন করে তা আমাদের মূল ধারার সংস্কৃতিরই অংশ। তাদের জীবনযাত্রার বৈচিত্র্য আমাদের রাষ্ট্র, সমাজ ও সংস্কৃতিকে ঋদ্ধ করে। রাষ্ট্রের কর্তব্য তাদের ভাষা-সংস্কৃতির অধিকার সুরক্ষা এবং সার্বিক বিকাশের ব্যবস্থা করা।

সভাপতির বক্তব্যে রাশিদ আসকারী বলেন, নৃগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নতকরণ যেমন জরুরি, তেমনই তাদের আদি ভাষা-সংস্কৃতি ইত্যাদি সুরক্ষার নিশ্চয়তা বিধানও আমাদের দায়িত্ব।

সবশেষে সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ফরিদা ফারভীনের সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় বইমেলার এবারের পর্বের সকল আনুষ্ঠানিকতা।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/অহ/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়