ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

পাকা কাঁঠালের ঘ্রাণে মাতোয়ারা পাহাড়

মামুন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ১১ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পাকা কাঁঠালের ঘ্রাণে মাতোয়ারা পাহাড়

মামুন চৌধুরী, হবিগঞ্জ : বৈশাখ শেষ হতে চলেছে। জ্যৈষ্ঠের শুরুতেই পাকা কাঁঠালের ঘ্রাণে চারিদিকে মাতোয়ারা। হাটবাজারে দেদারছে বিক্রি হচ্ছে এ ফল।

এবার পাহাড় ও হাওর অধ্যুষিত হবিগঞ্জ জেলায় কাঁঠালের ভালো ফলন হয়েছে। পাহাড়িদের মধ্যে আনন্দ উৎসব শুরু হয়েছে। আর পুরোদমে পাহাড়ি টিলা আর সমতল থেকে কাঁঠাল আসছে পাইকারি বাজারে। এখন চলছে কাঁঠাল বেঁচা-কেনার ধুম। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সুস্বাদু এ কাঁঠাল ফল কিনতে ক্রেতারা ভিড় জমাচ্ছে ফলের বাজারে।

পাহাড়ে উৎপাদিত কাঁঠালে কেমিক্যাল দেওয়া হয়নি বলে সৌদিআবরসহ ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েটি দেশে রপ্তানি হচ্ছে।

সুত্র জানায়, হবিগঞ্জের পাহাড়ি এলাকায় রয়েছে অনেকগুলো কাঁঠালের বাগান। শুধু কি তাই বাড়ির আঙ্গিনা আর রাস্তার পাশেও দেখা যায় কাঁঠাল গাছের ছড়াছড়ি।

জেলার নবীগঞ্জ, চুনারুঘাট, মাধবপুর ও বাহুবল উপজেলার পাহাড়ি এলাকার থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার কাঁঠাল কৃষকরা সংগ্রহ করেন। এরপর এসব কাঁঠাল হবিগঞ্জের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার বাহুবল উপজেলার মুছাই ও চুনারুঘাট উপজেলার চন্ডিছড়ার বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে আসা হয়। এখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি আড়ত। আড়তে প্রতিটি কাঁঠাল ৫০ থেকে শুরু করে ২০০ টাকা হিসেবে নিলামের মাধ্যমে বিক্রি হয়। ছোট আকারের ১০০টি কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা করে। তবে বড় কাঁঠালের দাম বেশি।

পাইকারেরা এ কাঁঠাল মুছাই, চন্ডিছড়া থেকে ট্রাক ভর্তি করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান। আর এর মধ্যে থেকে কিছু পরিমাণে কাঁঠাল যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে বলে স্থানীয় আড়ৎদার, কৃষক ও কৃষিবিভাগ জানিয়েছে।

হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এ বছর কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার প্রায় ১০০৫ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল উৎপাদন হয়েছে। উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় ১২ হাজার ২৬৮ মেট্রিক টন।

মুছাইয়ের ফলের আড়তের মালিক আজিজুর রহমান জানান, এ বছর কাঁঠালের ভালো ফলন হয়েছে। দামও ভালো। এতে করে কৃষকদের মাঝে উৎসাহ দেখা দিয়েছে।

চুনাঘাটের জাম্বুরাছড়ার বাগান মালিক আব্দুস শহীদ, নবীগঞ্জের দিনারপুরে কাজল মিয়া, চুনারুঘাটের কালেঙ্গার পাহাড়ের বিনয় দেববর্মা জানান, তাদের বাগানে সহযোগী ফসল হিসেবে কাঁঠাল উৎপাদন করা হয়। কাঁঠাল উৎপাদন করতে আলাদা কোনো যত্ন নিতে হয় না বলে উৎপাদন খরচও কম।

হগিঞ্জ শহরের ক্রেতা নুরুল হক কবির বলেন, ‘বিষমুক্ত কাঁঠাল কিনতে মুছাই গিয়েছিলাম। ১০০০ টাকা দিয়ে ১০টি কাঁঠাল কিনেছি।’

তার মতো প্রতিদিন শত শত ক্রেতা মুছাই ও চন্ডিছড়ার কাঁঠাল বাজারে আনছেন।

হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ফজলুর রহমান জানান, অত্যন্ত পুষ্টিকর কাঁঠালের ফলন সরকারিভাবে বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কৃষকদের আগ্রহ বৃদ্ধির জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনীর। কাঁঠাল উৎপাদন করলে একই সঙ্গে ফসল এবং কাঠ পাওয়া যায়। কাঁঠাল গাছের পাতা থেকে শুরু করে কাঁঠালের প্রতিটি অংশ ব্যবহার করা যায় বলে অন্যান্য ফলের তুলনায় এটি লাভজনক। এ ছাড়াও তেমন যত্নেরও প্রয়োজন হয় না। একটি গাছ বহু বছর পর্যন্ত ফলন দেয়। তবে বন্যা মুক্ত এলাকায় কাঁঠালের বাগান করা উচিত। কারণ দীর্ঘদিন এই গাছ পানি সহ্য করতে পারে না।

এ ব্যাপারে উদ্ভিদ গবেষক মাহমুদুর রহমান মামুন ও পরিবেশপ্রেমিক বনগবেষক আহমদ আলী বলেন, কাঁঠাল বাংলাদেশের জাতীয় ফল। এই ফল স্বাদে যেমন অনন্য তেমনি পুষ্টিতেও ভরপুর। তাই সর্বস্তরের লোকজনের কাছেই কাঁঠাল অত্যন্ত প্রিয়। বিশেষ করে এই সময়ে গ্রামের দরিদ্র লোকজনের প্রধান খাদ্য তালিকায় চলে আসে এই কাঁঠাল। তারা বাজার থেকে কাঁঠাল এনে পরিবারের সকলে মিলে একবেলা আহারের পরিবর্তে পেট ভরে কাঁঠাল খেয়ে থাকেন। কাঁঠালের বীজ শুকিয়ে তারা রেখে দেন বাড়িতে। পরবর্তিতে এই বীজ সবজি হিসেবে ব্যবহার করেন। এমনকি কাঁঠালের যে উচ্ছিষ্ট অংশ তাও ব্যবহার করা হয় গো-খাদ্য হিসেবে। অর্থাৎ একটি কাঁঠালের বহুমুখি উপযোগ ভোগ করেন তারা। দরিদ্রদের পাশাপাশি ধনী লোকজনের পাতেও এই কাঁঠালের রোয়া স্থান পায়। তারাও কাঁঠালের বীজ সবজি হিসেবে ব্যবহার করেন। অনেক সময় খই এর সঙ্গে কাঁঠাল খাওয়া হয়।

হবিগঞ্জের গ্রাম বাংলার দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য হলো আম-কাঁঠালের মৌসুমে মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে আম আনারস খই-কাঁঠাল পাঠানো। এই রেওয়াজ এখনো চলে আসছে। তবে যাদের সামর্থ্য বেশি তারা এর সঙ্গে অন্যান্য ফলও যুক্ত করেন।

হবিগঞ্জের মাটি কাঁঠাল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। হবিগঞ্জে কাঁঠাল তুলনামূলকভাবে মিষ্টি ও সু-স্বাদু।



রাইজিংবিডি/হবিগঞ্জ/১১ মে ২০১৭/মামুন চৌধুরী/এসএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়