ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

পানগাঁও বন্দরে নিত্য নতুন শুল্ক হয়রানি

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩৬, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পানগাঁও বন্দরে নিত্য নতুন শুল্ক হয়রানি

এম এ রহমান মাসুম : পানগাঁও অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনালে (আইসিটি) একই ধরণের পণ্যে ভিন্ন ভিন্ন শুল্ক ধার্য্য করে কখনো এক ব্যবসায়ীকে বাড়তি সুবিধা, আবার অন্য ব্যবসায়ীকে বেশি শুল্ক ধরে বাড়তি অর্থ আদায়ের অভিযোগের প্রমাণ মিলছে। অভিযোগ রয়েছে অনৈতিক আর্থিক সুবিধা আদায় করতেই নতুন নতুন কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ১৫ মে পানগাঁও বন্দর দিয়ে জন্মদিনের বেলুন আমদানি করে এশিয়ান গ্লোবাল লিঙ্ক নামের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। যার কেজি প্রতি শুল্কায়ন ধরা হয় দেড় ডলার করে। আবার এম এস সাদ এন্টারপ্রাইজকে চলতি বছরের ২৬ আগস্ট আমদানিকৃত বেলুনেও কেজিপ্রতি দেড় ডলার শুল্ক দিতে হয়েছে। এ পর্যন্ত ঠিকই ছিল, কিন্তু ২৫ আগস্ট একই ধরণের অন্য একটি কন্টেইনারের বেলুনে কেজি প্রতি সাড়ে ৩ ডলার দাবি করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ অর্থিক সুবিধা দিলে সব ঠিক, না হলেই যত বিপত্তি।

এছাড়াও কোনো কোনো ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ঘোষণায় বেশি পণ্য আমদানির প্রমাণও মিলেছে। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের যুক্তি হচ্ছে- মিথ্যা ঘোষণায় আনা পণ্যের জরিমানা যা খুশি ধরুক, আপত্তি নেই, তবে এইচএসকোড অনুযায়ী একই পণ্যের ভিন্ন ভিন্ন শুল্কায়ণ হতে পারে না। এটা অন্যায়। ব্যবসায়ীদের মুখ দেখে নয়, এইচএস কোড অনুসরণ করে পণ্যের শুল্কায়ন হোক এটা আমাদের দাবি- বললেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট এক ব্যবসায়ী।

এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (কাস্টম নীতি ও আইসিটি) সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘শুল্ক স্টেশনগুলোতে আমরা মনিটরিং অব্যাহত রেখেছি। ব্যবসায়ীরা কোনো সমস্যায় পড়লে আমাদের কাছে আসুক। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) আসা বিভিন্ন অভিযোগ যাচাই করে আরো দেখা যায়, একই কারণে আটক হলেও কাস্টমস কর্মকর্তাদের সাথে আমাদানিকারকদের বিশেষ সখ্যতার ফলে তাদের পণ‌্য ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। আবার অন্য একজনের পণ্য অহেতুক অজুহাত দেখিয়ে আটকে দিচ্ছে। ফলে সাধারণ আমদানীকারকরা ভোগান্তি ও আর্থিক ক্ষতির মধ‌্যে পড়ছেন। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আমদানিকারক ও পরিবহণ মালিকরা। ফলে এই বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা।

পানগাঁও আইসিটির এসব অনিয়ম ও কনটেইনার আটকের অভিযোগ পুরনো। দীর্ঘদিন ধরে পোর্টে কন্টেইনার আটকে আছে এমন অভিযোগের তদন্তের জন্য দুদক এনবিআরকে কিছু নির্দেশনা দিয়েছে সম্প্রতি। দুদকের চিঠিতে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন তৈরির পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

একাধিক আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্ট অভিযোগ করে বলেন, এই পোর্টের কাস্টমস কমিশনারের প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন অতিরিক্ত কমিশনার ও একজন সহকারী কমিশনার। কোন পণ্যে কোন এইচএস কোডে শুল্কায়ন করা হবে তা নির্ধারণ করে দেন তারা। যারা তাদের খুশি করতে পারবে তাদের পণ্য এইচএস কোডের মারপ্যাচে নামমাত্র শুল্কায়নে খালাস পেয়ে যাবে। আর যারা সমঝোতা করতে ব্যর্থ হবে তাদের অতিরিক্ত শুল্ক গুণতে হবে। মুখোমুখি হতে হবে মামলার।

২০১৩ সালের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন বন্দরের কন্টেইনার জট কমাতে এই বন্দর উদ্বোধন করেন। প্রতিষ্ঠার ৬ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো পুরোদমে সচল হতে পারিনি। বিপরীত দিকে রাজস্ব আদায়েও ক্রমেই পিছিয়ে যাচ্ছে বন্দরটি। স্টেশনটিতে গত এক অর্থবছরের ব্যবধানে কন্টেইনার খালাস কমেছে ২৯৯টি। কমেছে রাজস্ব আদায়ও। এক অর্থবছরের ব্যবধানে রাজস্ব আদায় কমেছে ৫৪২ কোটি টাকা, অর্থাৎ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি (-৩৪.৮৮) শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১ হাজার ১০২ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে মাত্র ৫৬০ কোটি টাকা। যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তুলনায় ৩০০ কোটি টাকা কম। ওই অর্থবছরে এনবিআরের বেধে দেয়া লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৮০ কোটি টাকা কিন্তু আদায় হয়েছে ৮৬০ কোটি টাকা। অন্যদিকে কন্টেইনার খালাসও কমেছে আশঙ্কাজনকভাবে। এক অর্থবছরের ব্যবধানে কন্টেইনার আমদানি কমেছে ২৯৯টি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের পানগাঁও পোর্টে কন্টেইনার এসেছে ১ হাজার ২২৩টি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসেছে মাত্র ৯২৪ কন্টেইনার পণ্য।

এ বিষয়ে জানতে পানগাঁও কাস্টম হাউজের কমিশনার ইসমাঈল হোসেন সিরাজীর সাথে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

**



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯/এম এ রহমান/নবীন হোসেন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়