ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

পাহাড়ে বনমোরগের বংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে

মামুন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৬, ৫ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
পাহাড়ে বনমোরগের বংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে

করোনা পরিস্থিতিতে হবিগঞ্জের পাহাড়ি এলাকায় মানুষের যাতায়াত কমেছে। সেই সঙ্গে প্রাণখুলে নিঃশ্বাস ফেলছে প্রাণীকুল।

নীরবতা পাওয়ায় পাহাড়ে বনমোরগের বংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

এক সময় জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় অপেক্ষাকৃত দুর্গম সাতছড়ি পাহাড়ে বনমোরগের দেখা কঠিন ছিল। বর্তমানে এ বনে প্রায় ৫ হাজার বনমোরগ রয়েছে বলে দাবী করা হয়েছে। তার প্রমাণও রয়েছে। বনে গেলে মোরগের ডাক শুনা যাচ্ছে।

সাতছড়ি সহকারী বন্যপ্রাণি রেঞ্জ কর্মকর্তা মাহমুদ হোসেন এর সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, করোনাকালে উদ্যানে পর্যটক আসা বন্ধ আছে। তাই প্রাণীদের বিচরণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ডেউটিকালে বনমোরগ ও বনমুরগি সহজেই দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। বনমোরগ ডিম দেয়। ডিম থেকে বাচ্চা হচ্ছে। দিন দিন এ বনে বনমোরগ-বনমুরগির বংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রায় সময়ই বনমোরগের ডাক শুনা যাচ্ছে।

একই কথা জানালেন কালেঙ্গা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আলা উদ্দিন। তিনি জানান,দুর্গম স্থানে অবস্থিত রেমা-কালেঙ্গা। এ বন বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহৎ প্রাকৃতিক বনভূমি। এর আয়তন প্রায় ১৬ হাজার একর। এজন্যই সমৃদ্ধ মিশ্র চিরহরিৎ এ বনটি এখনো টিকে আছে। অভয়ারণ্যটির আশেপাশে রয়েছে ৩টি চা বাগান। এ বনে বিভিন্ন বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ ও পশুপাখির আবাসস্থল। জরিপ মতে জানা গেছে, এখানে ৩৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৬৭ প্রজাতির পাখি, ৭ প্রজাতির উভচর, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ৬৩৮ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে।

আদিবাসী সম্প্রদায় ত্রিপুরা, সাঁওতাল ও উড়ং এই বনভূমির আশেপাশে এবং অভ্যন্তরে বসবাস করছে। বিরল প্রজাতির বাঘের বিচরণও রয়েছে এ জঙ্গলে। আছে বনমোরগ ও বনমুরগি। এ প্রাণিটি এ বনের ঐতিহ্য বহন করছে। এ পাহাড়ে প্রায় প্রায় ৮ হাজার বনমোরগ রয়েছে।

সাতছড়িতে উদ্ভিদবৈচিত্র্যের মধ্যে রয়েছে দুইশতাধিক প্রজাতির গাছপালা। এর মধ্যে শাল, সেগুন, আগর, গর্জন, চাপালিশ, পাম, মেহগনি, কৃষ্ণচূড়া, ডুমুর, জাম, জামরুল, জারুল, আওয়াল, মালেকাস, আকাশমনি, বাঁশ, বেত গাছ ইত্যাদি উল্লেখ্যযোগ্য।

জীববৈচিত্র্যের মধ্যে ১৯৭ প্রজাতির জীব-জন্তু রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২৪

প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ৬ প্রজাতির উভচর। আরো আছে প্রায় ২০০ প্রজাতির পাখি।

শুধু সংরক্ষিত বনেই নয় বনমোরগের বিচরণ বেড়েছে জেলার বিভিন্নর চা বাগানেও।

বাহুবলের আমতলী চা বাগানে বনমোরগের বাসা পাওয়া যাচ্ছে। বাসায় ডিম দেখে আনন্দিত বাগান ম্যানেজার সোহেল রানা পাঠান।

এ ব্যাপারে বাগান ম্যানেজার সোহেল রানা পাঠান বলেন, বনমোরগ ও বনমুরগি মানুষের পায়ের শব্দ পেলেই ত্বরিত বেগে পালিয়ে যায়। এরমধ্যেই কক্-কক্ ডাক শুনে আর একঝলকের দেখাতেই তৃপ্তি মেটাতে হয়। তারপরও মানুষের কবল নিজেদের রক্ষা করতে হিমশিম খেতে হয়।

বনগবেষক মো. আহমদ আলী বলেন, স্থানীয় একশ্রেণির লোকেরা বনমোরগ-বনমুরগি কারে সুযোগে থাকেন। ঘরে পোষা মুরগি থাকা সত্ত্বেও বনের এই পাখির প্রতি এসব লোকদের লোভের সীমা নেই। সে কারণে কমে গেছে এদের সংখ্যা। পড়ে গেছে বিপন্ন পাখির তালিকায়।

তিনি বলেন, সিলেট বিভাগের চা-বাগানগুলো ও বন না থাকলে বনমোরগ প্রায় বিলুপ্তই হয়ে যেত। শিকারিরা চা-বাগানে ঢুকতে পারে না বলে ঘন চা-বাগানে এরা অনেকটা নিরাপদে থাকে। তবে প্রাকৃতিক বনে বাস করা শিকারিরা বনমুরগি শিকার তো করেই, উপরন্তু তাদের বাসা থেকে ডিমও সংগ্রহ করে। এ কারণে প্রাকৃতিক বনে এদের সংখ্যা কমছে।

তিনি বলেন, রেমা-কালেঙ্গা ও সাতছড়ি বনে এখনো বনমোরগের বসবাস আছে। এরা খুবই সতর্ক পাখি। খুব সকালে ও সন্ধ্যার আগে বনের কাছাকাছি খোলা জায়গায় খাবার খেতে বের হয়। দ্রুত দৌড়াতে পারে এবং উড়তে পারে।

বাংলাদেশের সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম বিভাগের চিরসবুজ বন, চা-বাগান, শেরপুর ও মধুপুর শালবন ও সুন্দরবনে বনমোরগ বাস করে। বাংলাদেশ ছাড়াও নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, ভারত, চীন, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ ও ইন্দোনেশিয়ায় বনমোরগ ও মুরগি দেখা যায়।

পাহাড়ের পাদদেশে ঘন প্রাকৃতিক ঝোপের ভেতর মাটিতে জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাসে এরা বাসা করে।

পাহাড়, টিলা, চা-বাগান ও প্রাকৃতিক ঘনবনের কাছাকছি নিরাপদ খোলামাঠে একাকি, জোড়ায় ও দলবদ্ধভাবে চরে বেড়ায়। প্রধানত, ফল, বীজ, শস্যকণা, কচিপাতা, কেঁচো ও কীটপতঙ্গ এদের খাদ্য। শীতের সময় কুয়াশা থাকা অবস্থায় খাদ্যের সন্ধানে বের হয়।

বনের কোনো গাছতলায় পাকা ফল ঝরে পড়া শুরু করলে বনমোরগ-বনমুরগি প্রতিদিন সকাল-বিকাল সেই গাছতলায় আসে। আবার বনের বড় গাছে উঠেও এদের ফল খেতে দেখা গেছে। দেখতে আমাদের গৃহপালিত মোরগ-মুরগির মতোই। তবে মোরগের লেজের দুটি পালক লম্বা থাকে।

ধারণা করা হয়, এরাই গৃহপালিত মোরগ ও মুরগির পূর্বপুরুষ। সুদূর অতীতে এশিয়া অঞ্চলে বনের এই পাখিকে পোষ মানানো হয়।

রেমা-কালেঙ্গা বনের কালিয়াবাড়ি আদিবাসী পুঞ্জির হেডম্যান বিনয় দেববর্মা বলেন, এ বনে প্রচুর বনমুরগি ও বনমোরগ রয়েছে। নানা সময়ে এদের দেখা পাওয়া যাচ্ছে। আমরা এগুলো রক্ষায় বন বিভাগকে সার্বিকভাবে সহায়তা করছি।

তিনি আরো বলেন, এগুলো মাঝারি আকারের ভূচর পাখি। এদের মাথায় ঝুঁটি ও গলার দুই পাশে দুটি ঝুলন্ত লতিকা থাকে।



হবিগঞ্জ/মামুন/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়