ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

পুকুরটির মালিক জেলা প্রশাসক

নজরুল মৃধা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১৩, ৪ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পুকুরটির মালিক জেলা প্রশাসক

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর: নগরীর ঐতিহ্যবাহী মন্থনা পুকুরটির মালিক জেলা প্রশাসক। কিন্তু সরকারি বরাদ্দ ছাড়াই ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভোগ দখল করছে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ।

বর্তমানে পুকুরটি পশ্চিম পাশ ভরাট করে মার্কেট নির্মাণের পরিকল্পনা করছে তারা। পুকুর ভরাটের প্রতিবাদে এলাকাবাসী বিক্ষোভ সমাবেশ করে জেলা প্রশাসক ও মেয়রকে স্মারকলিপি দিয়েছে। পুকুরটির দক্ষিণ পাশে ২৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভেঙে জমি দখল নিয়ে দেয়াল দিয়ে ঘিরে রেখেছে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ।

ডিসি অফিস ও মন্থনা পুকুর রক্ষা সংগ্রাম কমিটি সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তান আমলে নগরবাসীর কথা চিন্তা করে মন্থনা জমিদারের কাচারিবাড়িতে স্থাপন করা হয় রংপুর ফায়ার সার্ভিস অফিস। ওই অফিসের পাশেই এই পুকুর। কিন্তু পুকুরের একাংশ ভরাট করে মার্কেট নির্মাণ করে ফায়ার সার্ভিস।

সূত্রমতে, ১৯৮৩ ও ১৯৮৬ সালে ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স পুকুরসহ ১ নং খাস খতিয়ানের ৩ একর ৪ শতক জমি স্থায়ী বন্দোবস্তের জন্য রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আবেদন করে। ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স অফিস ১৯৮৩ সালে পিএল একাউন্টে ৩ লাখ টাকা জমা দেয় এই জমিটির মূল্য বাবদ। ১৯৮৬ সালে ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সের পুরনো ভবন ও জমিসহ দাম ধার্য হয় ২৮ লাখ ১০ হাজার ৪৮৮ টাকা। এর মধ্যে পুরনো ভবনটির মূল্য ধার্য করা হয় ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং বাৎসরিক উন্নয়ন কর ধার্য করা হয় ১ হাজার ৮২৪ টাকা। ফায়ার সার্ভিসের আবেদন এখনও কার্যকর হয়নি। ফলে ওই জমি ও পুকুরের মালিক জেলা প্রশাসকই রয়ে গেছে।

মূল অফিসটি ১ একর ৯৮ শতক জমির ওপর। অফিসের পশ্চিম দিকে রয়েছে একটি পুকুর। এর আয়তন ১ একর ৪ শতক জমিতে। পুকুরের দক্ষিণ দিকে ৯ শতক জমির মধ্যে দুই শতকের জন্য ফায়ার সার্ভিস আবেদন করেছে। বাকি ৭ শতক জমি জেলা প্রশাসন অন্য ব্যক্তিকে লিজ দিয়েছে।

এদিকে  ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সের প্রাঙ্গনে অবস্থিত মন্থনা জমিদারের পুরনো ভবনটি একটি হ্যারিটেজ হিসেবে রক্ষাবেক্ষণের কথা থাকলেও ওই ভবনটির অনেক মূল্যবান সম্পদ রহস্যজনকভাবে গায়েব হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, ভবনটির কারুকার্য খচিত দরজা ও জানালাগুলোও  কে বা কারা নিয়ে গেছে।

এদিকে ৯ শতক জমির ওপর ২৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বন্ধবন্ধু চত্বর নির্মাণ করেছিল এবং সেখানে তারা বিভিন্ন দিবসে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও আলোচনা সভা করতো। গত সাধারণ নির্বাচনের আগের দিন ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ অবৈধভাবে এটি বন্ধ করে দেয়াল তুলে ঘিরে দেয় এবং আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভেঙে ফেলে এদিকটা ভরাট করে। মার্কেট নির্মাণের প্রতিবাদে ২ জুলাই জেলা প্রশাসক আসিব আহসানকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, রংপুর ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ হাইকোর্ট ও প্রধানমন্ত্রীর পুকুর-জলাশয় সংরক্ষণের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে মন্থনা পুকুর ভরাট করে মার্কেট নির্মাণ কাজ করছে। মন্থনা পুকুর রক্ষা সংগ্রাম কমিটির দেওয়া স্মারকলিপি হতে নিয়ে ও উপস্থিত নেতাদের কাছ থেকে জেলা প্রশাসক সার্বিক বিষয়ে অবগত হওয়ার পর তাৎক্ষণিক মুঠোফোনে রংপুর ফায়ার সার্ভিস অফিসের উপ-পরিচালককে আপাতত কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিলে বুধবার থেকে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ।

জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, ‘সরকারি পুকুর ফায়ার সার্ভিস আকার পরিবর্তন করছে। বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য ঢাকা থেকে ফায়ার সার্ভিসের একজন পরিচালক আসছেন। তার সাথে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো। স্থায়ী বন্দোবস্ত না নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন ১নং খাস খতিয়ানের জমি ফায়ার সার্ভিস কীভাবে ভোগ দখল করছে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে। ’

এদিকে রংপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক ইউনুস আলী জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে  পুকুর ও জমি স্থায়ী বন্দোবস্ত না পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘ওই জমি ও পুকুর সরকারের। সরকার ইচ্ছে করলে ফায়ার সার্ভিসকে অনত্র স্থনান্তর করতে পারে। এটি সরকারের বিষয়।’

পুকুর ভরাট করে মার্কেট নির্মাণ করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পুকুর ভরাট করা হচ্ছে না। পুকুরের পশ্চিম পাশে ১৫ ফুট প্রশস্ত ঘর নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।’

এদিকে জেলা প্রশাসকের জমিতে স্থাপন করা ২৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভেঙে ফেলা প্রসঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি ম-ল বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের মালিকানা না থাকা স্বত্বেও তারা ওই পুকুর ব্যবহার করছে। সরকারি বিধি বিধানের তোয়াক্কা না করে তারা পুকুরের একাংশে মার্কেট নির্মাণ করছে অবৈধভাবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের সম্পত্তিতে ২৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ঘর তুলেছিলো। এটিও ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ গায়ের জোরে রাতের আঁধারে ভেঙে দিয়েছে। এর কারণে আমরা এবার ওই স্থানে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করতে পারিনি।’ তিনি এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ জুলাই ২০১৯ইং/নজরুল মৃধা/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়