ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

পুনর্বাসিতদের সঞ্চয় দেড় কোটি টাকা

ইয়াছিন মোহাম্মদ সিথুন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪১, ১৪ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পুনর্বাসিতদের সঞ্চয় দেড় কোটি টাকা

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের সামনে একজন সুফলভোগী

ইয়াছিন মোহাম্মদ সিথুন, নীলফামারী : জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা ভিক্ষাবৃত্তির অভিশাপমুক্ত একটি রোল মডেল উপজেলা।

উপজেলার গ্রামে-গঞ্জে ও নিভৃত পল্লিতে ভিক্ষার জন্য দ্বারে দ্বারে হাত পাততে দেখা যায় না কাউকে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প থেকে ঘর পেয়ে পুনর্বাসিত ভিক্ষুকদের মাথা গোঁজার ঠাঁইও হয়েছে। পুনর্বাসিতদের অ্যাকাউন্টে বর্তমানে তাদের নিজস্ব সঞ্চয় প্রায় দেড় কোটি টাকা।

উপজেলার দক্ষিণ পুষনা গ্রামের মোজোতোন (৬০) তার স্বামী তহির উদ্দিনের মৃত্যুর পর শিশুসন্তানকে সঙ্গে নিয়ে ভিক্ষাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। ২০১৪ সালে কিশোরগঞ্জ উপজেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত করার অভিপ্রায়ে মোজোতোনকে দেওয়া হয় ক্ষুদ্র ব্যবসার উপকরণ। স্বল্প পুঁজি নিয়ে মোজোতোন ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেন। ক্ষুদ্র মুদির ব্যবসার লাভ ও ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প থেকে ঋণ নিয়ে আজ তিনি স্বাবলম্বী।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ঘর পেয়ে মোজোতোন বলেন, ‘ব্যাহে মুই ক্যানে আর ভিক্ষা করিবার যাইম? মোক এখন আর খাবারের চিন্তা করিবার নাগে না। সরকার মোক একটা ঘর দিয়া কি যে উপকার করিছে।’

মোজোতোনের মত কিশোরগঞ্জ উপজেলার ৬৯০ জন পুনর্বাসিত ভিক্ষুক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প থেকে ঘর পেয়েছেন। এদের সবার মুখে এখন অনাবিল হাঁসি।

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করার আগে তালিকাভুক্ত ৯৭৯ জন ভিক্ষুককে পুনর্বাসনের আওতায় নেওয়া হয়। এদেরকে দেওয়া হয় বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড। পুনর্বাসিত ভিক্ষুকদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মমুখী করে গড়ে তোলা হয়েছে। মানুষের দ্বারে হাত পেতে খাওয়া মানুষগুলো কর্মের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহের পাশাপাশি একেকজন উন্নয়ন কর্মীতে পরিণত হয়েছেন।

পুনর্বাসিতদের মধ্যে ৯৫১ জনকে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের সদস্য করে দেওয়া হয়েছে ঋণ। ঋণের টাকা দিয়ে গরু, ছাগল ও ব্যবসা করে আজ তারা স্বাবলম্বী। তাদের অ্যাকাউন্টে বর্তমানে নিজস্ব সঞ্চয় ৪৬ লাখ ৬৪ হাজার ৮০০ টাকা, কল্যাণ অনুদান ৪৫ লাখ ৬৪ হাজার ৮০০, আবর্তক তহবিল ৪৫ লাখ ৩১ হাজার ৬২৩ টাকাসহ মোট তহবিল ১ কোটি ৩৭ লাখ ৬১ হাজার ২২৩ টাকা।



পুনর্বাসিতদের সাফল্য কথা শুনে সরেজমিনে এ চিত্র দেখার জন্য আসেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ। তিনি তাদের পুনর্বাসনের কথা শুনে সন্তোষ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি তিনি পুনর্বাসিতদের মাথা গোঁজার ঠাঁই ঘর নির্মাণের প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করেন।

এরই প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প থেকে প্রথম পর্যায় ১০ জন পুনর্বাসিতের ঘর নির্মাণের জন্য ৬০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ প্রদান করা হয়। পুনর্বাসিত ১০ জনের ঘর নির্মাণ কাজের প্ল্যান, ডিজাইন ও প্রাক্কলন মোতাবেক ঘর নির্মাণ সম্পন্ন হলে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের একটি দল তা পরিদর্শন করে।

পরবর্তীতে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তিন দফায় আরো ২৩২ জনের ঘর নির্মাণের জন্য ঘরপ্রতি ৭৫ হাজার টাকা করে বরাদ্দ প্রদান করা হয়। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটি ঘর নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করেছে। এদিকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রথম দফায় ৪৪৮ জন পুনর্বাসিতদের ঘর নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোফাখ্খারুল ইসলাম জানান, চলতি অর্থবছরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ ‘যার জমি আছে ঘর নেই তার নিজ জমিতে ঘর নির্মাণ’ প্রকল্প থেকে ৬৯০ জন পুনর্বাসিতের ঘর নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম মেহেদী হাসান জানান, উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটির মাধ্যমে ঘর নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। পুনর্বাসিতরা ঘর পাওয়ায় তাদের সামাজিকভাবে মর্যাদা বেড়েছে। পুনর্বাসিতরা হয়েছে স্বাবলম্বী।

প্রসঙ্গত, ভিক্ষুক পুনর্বাসনের উদ্যোক্তা প্রাক্তন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বর্তমানে নড়াইলে কর্মরত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক  সিদ্দিকুর রহমান ২০১৪ সালের ৫ জুলাই এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কিশোরগঞ্জ উপজেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করেন।



রাইজিংবিডি/নীলফামারী/১৪ মার্চ ২০১৭/ইয়াছিন মোহাম্মদ সিথুন/রিশিত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়