ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

পুরনোরে দাও উড়ায়ে

সাইফ বরকতুল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৫৭, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পুরনোরে দাও উড়ায়ে

সময়ের চাকায় ঘুরে কেটে গেল আরো একটি বছর। নিরন্তর এই পরিক্রমায় ব্যক্তি ও সামষ্টিক জীবনে ছিল আনন্দ, বেদনা, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির আখ্যান। সেসব কিছু পেছনে ফেলে নতুন বছরে নতুন প্রত্যাশায় উৎসব আর উচ্ছ্বাসে ভরে উঠুক চারদিক। নতুন দিনের সূর্যোদয়ের সাথে সাথে পুরনো সব জরা গ্লানিকে মুছে হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি টুটে নব চিন্তায় শুরু হোক সামনের পথ চলা।

বিদায়ী বছরে নানা অস্থিরতার মধ্যে কাটিয়েছে বিশ্ব। এরমধ্যেও বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে। বদলে গেছে বাংলাদেশে। বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ। নানা উন্নয়ন দৃশ্যমান। এর বড় উদাহরণ, পাকিস্তানও এখন বাংলাদেশকে উন্নয়নের অনুকরণীয় মডেল হিসেবে নিচ্ছে।

একটি উন্নয়নশীল দেশ হয়েও বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বিশ্বে প্রাকৃতিক দুর্যোগের নিবিড় সমন্বিত ব্যবস্থাপনা, ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবহার এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে ভূমিকা, জন বহুল দেশে নির্বাচন পরিচালনায় স্বচ্ছ ও সুষ্ঠুতা আনয়ন, বৃক্ষরোপণ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকের ইতিবাচক পরিবর্তন প্রভৃতি ক্ষেত্রে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশকে আজকের অবস্থানে আসতে অতিক্রম করতে হয়েছে হাজারো প্রতিবন্ধকতা।

সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার আটটি লক্ষ্যের মধ্যে শিক্ষা, শিশু মৃত্যুহার কমানো এবং দারিদ্র্য হ্রাস করণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য উন্নতি প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছে।
নোবেল বিজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, ‘কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশ্বকে চমকে দেবার মতো সাফল্য আছে বাংলাদেশের। বিশেষত শিক্ষা সুবিধা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার ও জন্মহার কমানো, গরিব মানুষের জন্য শৌচাগার ও স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান এবং শিশুদের টিকাদান কার্যক্রম অন্যতম।’

বিদায়ী বছরে বিশ্বের অনেক দেশ মন্দার কবলে পড়েছে। অথচ বাংলাদেশ মন্দা মোকাবিলায় সক্ষম ছিল। বিশ্ব অর্থনীতির শ্লথ ধারার বিপরীতে আমদানি-রপ্তানিখাতে প্রবৃদ্ধি বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে রেমিট্যান্সের পরিমাণ। ঋণ পরিশোধে সক্ষমতার মানদণ্ডে ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের সমকক্ষতা অর্জিত হয়েছে।

শুধু তাই নয়, ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন, নারীর ক্ষমতায়ন অর্জন, কৃষিতে কৃতিত্ব এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, বিদ্যুৎখাতে সাফল্য, জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশের অর্জন, শিল্প ও বাণিজ্যখাতে অর্জন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে অর্জন- এসব বাংলাদেশকে নিয়ে যাচ্ছে অনন্য মর্যাদায়।

সাম্প্রতিক বছর গুলোতে কৃষিখাতে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে সরকার অত্যন্ত সফল। মেট্রোরেল, পদ্মাসেতু, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মত বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজ বিশ্বে প্রশংসিত হচ্ছে।

এ বছর যুক্তরাজ্য ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর) প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০৩২ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের বড় ২৫টি অর্থনীতির দেশের একটি হবে। তখন বাংলাদেশ হবে ২৪তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।

২০১৯ সালের ২৯ আগস্ট ‘দ্য স্পেক্টেটর ইনডেক্স’-এ প্রকাশিত বিশ্বের ২৬টি শীর্ষ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশের তথ্যের ভিত্তিতে দেখা যায়,বাংলাদেশ জিডিপিতে অর্জন করেছে বিশ্বের সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি। ২০০৯ সাল থেকে শুরু করে ২০১৯ পর্যন্ত ১০ বছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সারা বিশ্বে সবার ওপরে। এছাড়াও ক্রিকেট, ফুটবলসহ বিভিন্ন সেক্টরে উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ।

সামনে নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আসছে নতুন বছর ২০২০। নতুন দিনে জাতীয় জীবনে আলোকিত করুক এ প্রত্যাশা। কেননা নববর্ষমানেই নতুন আশা, নতুনস্বপ্ন, নতুন প্রত্যয়। নববর্ষ মানেই জীর্ণ-পুরোনোকে বিদায় জানানো। নববর্ষ মানেই কবি শামসুর রাহমানের গান- ‘এলো নববর্ষ, শুভ নববর্ষ।’



ঢাকা/সাইফ/সনি/নাসিম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়