পুরান ঢাকায় সাকরাইন উৎসব
জবি প্রতিনিধি : সাকরাইন উৎসবে মেতেছেন পুরান ঢাকাবাসী। গান-বাজনার তালে তালে চলছে ঘুড়ি ওড়ানোর উন্মাদনা। ছোট-বড় সবার অংশগ্রহণে মুখরিত হচ্ছে প্রতিটি বাড়ির ছাদ, চলছে ঘুড়ির ওড়াওড়ি। শনিবার সকালে শুরু হয়েছে এ উৎসব।
সাকরাইন শব্দটি সংস্কৃত শব্দ সংক্রণ থেকে এসেছে। সংক্রণের আভিধানিক অর্থ বিশেষ মুহূর্ত। অর্থাৎ বিশেষ মুহূর্তকে সামনে রেখে যে উৎসব হয় তাকেই বলা হয় সাকরাইন উৎসব। সাধারণত জানুয়ারি মাসের ১৪ তারিখ সাকরাইন উৎসব উদযাপন করা হয়।
পুরান ঢাকার শাঁখারী বাজার, রায়সাহেব বাজার, বংশাল, সূত্রাপুর, বাংলাবাজার, সদরঘাট ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার আকাশে সকাল থেকেই নানা রঙের ঘুড়ি দেখা যাচ্ছে। প্রতিটি বাড়ির ছাদে উচ্চৈস্বরে বাজছে গান, তার সঙ্গে নাচছেন বিভিন্ন বয়সি নারী-পুরুষ।
৩৫ বছর বয়সি সুকুমার বলেন, বিকেলে পুরান ঢাকার আকাশে ঘুড়ি দিয়ে কাটাকাটির খেলা উপভোগ করেন সবাই। নানা রং আর বাহারি আকৃতির ঘুড়ি নিয়ে এতে অংশ নেন তরুণ-তরুণীরা। সন্ধ্যা নেমে আসলে উৎসবের আমেজে আসে ভিন্নতা। শুরু হয় মুখে আগুন নিয়ে খেলা, রঙ বেরঙের আতশবাজি ও ফানুসে ছেয়ে যায় পুরান ঢাকার আকাশ। এসব অনুষঙ্গের সঙ্গে রয়েছে গান-বাজনা এবং নাচানাচি। গভীর রাত পর্যন্ত চলে এ উৎসব।
শনিবার বিকেলে পুরান ঢাকার সূত্রাপুরের একটি বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ২৩ থেকে ৩০ বছর বয়সি যুবকরা বাজনার সঙ্গে নাচছেন। তাদের একজন আবির। তিনি জানান, শুক্রবার ছয়তলার ছাদে সাউন্ড বক্স তোলা হয়েছে। আশপাশের কেউ যেন বাদ্যের আওয়াজে তাদের পেছনে ফেলতে না পারে, সেজন্য আনা হয়েছে ১২ পিয়ার বক্স।
স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী আজিম বললেন, ১০ বছর ধরে এই উৎসবটা করে আসছি আমরা। আয়োজনে চাকচিক্য আনার জন্য প্রতিবছর চাঁদার পরিমাণ বাড়ানো হয়।
লক্ষীবাজারের ব্যবসায়ী অজিত জানান, সাকরাইন আমাদের পুরান ঢাকার প্রাচীন ঐতিহ্য। ছোটকাল থেকে দেখে আসছি, আমাদের পূর্বপুরুষরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই আয়োজন করে আসছে। আগে পিঠা বানানো হতো। এখন বাড়িতে পিঠা বানানোর আয়োজন কমে গেছে। তবে এখনো সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত না খেয়ে রাখেন। আর ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা দিনটিতে সকালে পিঠা, মোয়াসহ নানা ধরনের খাবার বিলি করেন প্রতিবেশীদের মাঝে। সাকরাইন উৎসবকে পৌষ সংক্রান্তি বা ঘুড়ি উৎসবও বলা হয়।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ জানুয়ারি ২০১৭/আশরাফুল/রফিক
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন