ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

পোশাক রপ্তানি হ্রাস অর্থনীতির জন্য ধাক্কা

নাসির উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৬, ১৬ নভেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পোশাক রপ্তানি হ্রাস অর্থনীতির জন্য ধাক্কা

নাসির উদ্দিন চৌধুরী : চলতি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি আয় কমেছে। যার প্রভাব পড়েছে দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি বছর কিছু নেতিবাচক ঘটনা, ব্রেক্সিটের প্রভাব ও বিদ্যুৎ-গ্যাসের অভাব পোশাক খাতে প্রভাব ফেলছে। এ কারণে রপ্তানি আয়ও কমেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পুরো রপ্তানি খাতে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বিজিএমইএ-এর তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। এই সময় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১২ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

সংস্থা দুটির তথ্য অনুযায়ী, প্রথম তিন মাসের কোন মাসেই উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি নেই এ খাতে। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর মেয়াদে নিট ও ওভেন খাতে ৭৩৪ কোটি ৫১ লাখ ডলারের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয় হয়েছে ৬৬৬ কোটি ৫৯ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ কম। আলোচ্য সময়ে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। তবে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এ খাতে আয় বেড়েছে ৩ দশমিক ৫২ শতাংশ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘এ খাতে এখনও অনেক সমস্যা রয়েছে। এর মধ্যে বড় সমস্যা হচ্ছে কারখানায় গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ ও সরবরাহে অনিশ্চয়তা। উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি। পণ্যের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া। মিড লেভেলের দক্ষ কর্মকর্তার অভাব। এসব সমস্যা সমাধান হলে প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছবে। তবে জরুরি ভিক্তিতে এনার্জি সমস্যা সমাধান করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘তৈরি পোশাকের বাজারে এখন তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে। এতদিন ভিয়েতনামকে প্রতিযোগী হিসেবে গণ্য করা হলেও এখন মিয়ানমার ও ভারত প্রতিযোগী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। রপ্তানি বাড়াতে ভারত সে দেশের পোশাক খাতে বিভিন্ন প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। রপ্তানিতে বাংলাদেশের চেয়েও বেশি নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে। এসব কারণে আগামী ২০১৮ সালে দেশটি ৪ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের বস্ত্র ও পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। আর সেই সময়ে বাংলাদেশ রপ্তানি করবে ৪ হাজার কোটি ডলারের পোশাক। ফলে ওই বছরেই রপ্তানিতে ভারতের চেয়ে পিছিয়ে পড়বে বাংলাদেশ।’

খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, অবকাঠামো উন্নয়ন, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ ও সরবরাহ নিশ্চিত করাসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিলে চলতি বছর প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব।

এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলেন, তৈরি পোশাকের বাজারে প্রতিযোগিতা করে টিকতে হলে নতুন বাজার খোঁজ করা ও পণ্যে ব্যাপক বৈচিত্র্য আনতে হবে। এছাড়া প্রবেশ করতে হবে অপ্রচলিত বাজারেও। নতুবা প্রবৃদ্ধিও বাড়বে না এবং ২০২১ সালে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্জন করাও সম্ভব হবে না। আর এই জন্য দক্ষ জনশক্তি বাড়ানো খুবই দরকার। কারণ, উৎপাদন বাড়াতে হলে শ্রমিকের দক্ষতা বাড়াতে হবে। গত ১০ বছরে শ্রমিকের মজুরি সাড়ে তিন শতাংশ বাড়লেও দেশে তুলনামূলক দক্ষ শ্রমিক তৈরি হয়নি।’

২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ খাতে রপ্তানি হয়েছে ২৮ দশমিক শূন্য ৯ বিলিয়ন ডলার। এ সময় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ২১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে (২০১৬-১৭) রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার। আর প্রবৃদ্ধি নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ নভেম্বর ২০১৬/নাসির/হাসান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়