ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

প্রণোদনা প্যাকেজ: আশাবাদী সিপিডি, চ্যালেঞ্জ মনে করে বিআইডিএস

সাজেদ রোমেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০০, ৯ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রণোদনা প্যাকেজ: আশাবাদী সিপিডি, চ্যালেঞ্জ মনে করে বিআইডিএস

শিল্প-ব্যবসার জন্য ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজকে বাস্তবায়নযোগ্য মনে করছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।  তবে এখন পর্যন্ত পুরো প্যাকেজ ব্যাংকনির্ভর বলে বাস্তবায়ন করাটা অনিশ্চিত মনে করে সরকারি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস।

বৃহষ্পতিবার বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. খান এ এস মুর্শিদ এবং বুধবার সিপিডির ডিস্টিংগুইসড ফেলো রাইজিংবিডিকে এসব কথা বলেন।

দেশে শিল্প-ব্যবসায় করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন।  প্যাকেজে বৃহৎ শিল্পগুলোর জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ও ব্যবসায় ২০ হাজার কোটি টাকা, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলে (ইডিএফ) অতিরিক্ত ১২ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা, রপ্তানিমুখী শিল্পের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনের জন্য ৫ হাজার কোটি (আগে ঘোষিত ২ শতাংশ সুদে এই ঋণ সুবিধা পুরো প্যাকেজের অংশ হয়) এবং অন্যান্য আর্থিক খাতে ৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা, সব মিলে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি ঋণের ব্যবস্থা করে দেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।  পাঁচ ক্যাটাগরিতে এই ঋণের সংস্থান সরকার ৯ শতাংশ সুদে ব্যাংকগুলো থেকে করবে, যার মধ্যে বৃহৎ শিল্পের ৪.৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র ও মাঝারি  শিল্পের ৫ শতাংশ, রপ্তানিমুখী শিল্পের ৭ শতাংশ সুদই সরকার পরিশোধ করবে, বাকি সুদ পরিশোধ করবে ঋণগ্রহীতা শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো।

এই হিসেবে বৃহৎ শিল্পে ১৩৫০ কোটি টাকা এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ১০০০ কোটি টাকা, রপ্তানিমুখী শিল্পগুলোর ৩৫০ কোটি টাকার সুদ পরিশোধে সরকারের ভর্তুকি বাবদ খরচ হবে ২৭০০ কোটি টাকা।  এছাড়া রপ্তানির প্রতিকূলতা কাটাতে ইডিএফে ২ দশমিক ৭ শতাংশ সুদ কমিয়ে ২ শতাংশ নির্ধারণ করে অতিরিক্ত ১২ হাজার ৬৫০ কোটি টাকার ব্যবস্থা এবং বাকি ৫ হাজার ১০০ কোটি টাকার সুদ ভর্তুকি যোগ করলে সরকারের সব মিলে প্যাকেজ বাস্তবায়নে খরচ হবে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি।

প্রণোদনা প্যাকেজ, এতো বড় ঋণপ্রবাহে তারল্য সংকটের শঙ্কাসহ নানাদিক নিয়ে রাইজিংবিডি ডটকমের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেন দেশের আর্থিক গবেষণার স্বণামধন্য প্রতিষ্ঠান সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান। ব্যাংকগুলোর পক্ষে জরুরি ভিত্তিতে এতো টাকার ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা আছে কী না—এমন প্রশ্নে এই গবেষক বলেন, ‘সক্ষমতা আছে, তারল্য বাড়াতে করোনা প্রাদুর্ভাবের আগেই অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছিল সরকার। আর বর্তমান পরিস্থিতিতে গাড়ি-বাড়িসহ অনেক ঋণ নেওয়া মানুষ কমিয়ে দেবে বলে এই প্রণোদনা বাস্তবায়নে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। সিপিডির মূল্যায়নেই আমরা বলেছি, করোনাভাইরাস আসার আগেই আমদানি-রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ে নেতিবাচক ধারা চলছিল।  সবচেয়ে বড় কথা, প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষও কিছুটা সুবিধা পাবে।  তবে এখন স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তাসহ অনেক কিছু করতে হবে।  এসব বিষয়কেই অগ্রাধিকার দিতে হবে।  সামাজিক সুরক্ষায় গুরুত্ব দিয়ে ওপেন সেল, কমদামে খাদ্য এবং অন্যান্য সুবিধা দেওয়াকে প্রাধান্য দিতে হবে।  সেইসঙ্গে রপ্তানি খাতে এনবিআরকে ছাড় দিতে হবে।’

সরকারের উন্নয়ন গবেষণা সংস্থা বিআইডিএসের মহাপরিচালক কে এ এস মুর্শিদ রাইজিংবিডিকে প্রণোদনা প্যাকেজ নিয়ে বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজটি ভালো।  তবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ঋণ দেওয়ার জন্য ব্যাংকগুলোকে এগিয়ে আসাটাই প্রধান বিষয়।  তারা কেন এই ঋণ দেবে? আর সরকারের সুদ ভর্তুকির জন্যও সেই ব্যাংকের ওপরই নির্ভর করতে হবে।  অবশ্য সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কোনও একটা ম্যাকানিজম ব্যবহার করে হয়তো কিছু ঋণের ব্যবস্থা করতে পারে ব্যাংকগুলো থেকে।  পুরো প্যাকেজ বাস্তবায়ন করাটা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।’

‘বাংলাদেশের অর্থনীতি রপ্তানি এবং প্রবাসী আয়ের ওপর নির্ভরশীল।  এসব ক্ষেত্রে খুবই বাজে অবস্থা হবে। রপ্তানি আয়ে গতি আসতে সময় লাগবে, কারণ বাংলাদেশ যেসব দেশে বেশি রপ্তানি করে, তাদের নিজেদের অবস্থা খুব খারাপ।  বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি গন্তব্য ইউরোপ-আমেরিকা ও অন্যান্য দেশের অবস্থা স্বাভাবিক হলেই আমাদের পণ্য নেওয়া শুরু করবে।  আমদানিও কমবে।  বাংলাদেশ সবচেয়ে আমদানি করে চীন ও ভারত থেকে, এই দুই দেশের অবস্থাও ভালো নয়।  আর ভারত বর্ডারিং কান্ট্রি হলেও পণ্য আনা নেওয়ায় বাধাগ্রস্ত হবে।

তাহলে এখন পরিস্থিতি উত্তরণে কী করতে হবে- এমন প্রশ্নে কে এ এস মুর্শিদ বলেন, সেনিটাইজার, পিপিই, গ্লাভস, মাস্কসহ কোভিড রিলেটেড পণ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। কারণ এসব পণ্যের সংকট ও চাহিদা এখন সারাবিশ্বে এবং আমেরিকার মতো দেশও চাইলেও এসব উৎপাদন করতে পারছে না প্রয়োজন অনুযায়ী। আভ্যন্তরীণ ব্যবসা ও কৃষিসহ দেশে উৎপাদন বাড়াতে হবে, বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করতে হবে।  তবে সবকিছুর পরও আমরা চাইলেও অর্থনীতিতে খুব ভালো করতে পারব না। ’

তাহলে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার সময় যে অর্থমন্ত্রী এ অর্থবছরেও ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের আশাবাদ জানালেন, সেটাকে কীভাবে দেখেন—এমন প্রশ্নে তিনি  বলেন, ‘অর্জন হলে আলহামদুলিল্লাহ, তবে আমি প্রবৃদ্ধি নিয়ে এখন ভাবছি না।’

বিআইডিসের মহাপরিচালক বলেন, দেশে পণ্য সরবরাহকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে হবে, সাপ্লাই চেইনের সঙ্গে যারা আছে, তাদেরকে তৈরি করতে হবে।  আর বিশৃঙ্খল ও অপরিকল্পিতভাবে ত্রাণ বিতরণসহ দেশের বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক সব ধরনের উদ্যোগের ভালো সমন্বয় খুবই জরুরি। অর্থনীতিসহ নানা খাতের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার কথা পরে ভাবা যাবে।

সব দেশে মিলে কোরোনাভাইরাস মোকাবিলায় এক হয়ে কাজ করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, আজ বিশ্বের এক দেশ আরেক দেশের সঙ্গে ইন্টারলিঙ্কড এবং ইন্টারডিপেন্ডেন্ট, তাই সবাই মিলে মহামারি মোকাবিলা করতে হবে।  আমার ঘরে আগুন লাগলে আপনি এগিয়ে এলেন না, নিজের ঘরে আগুন লাগলে তখন কী হবে, সেটা ভাবতে হবে প্রতিটা দেশকে।’


সাজেদ/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়