ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

প্রথম চন্দ্রাভিযানের চমকপ্রদ তথ্য

আহমেদ শরীফ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৪, ১৭ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রথম চন্দ্রাভিযানের চমকপ্রদ তথ্য

আহমেদ শরীফ : চাঁদে মানুষের পদার্পণের ৫০ বছর পূর্তি হতে চলেছে এ বছর। ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই অ্যাপোলো ১১ মিশনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো মানুষ চাঁদে অবতরণ করে। ঐতিহাসিক সেই অভিযানের চমকপ্রদ কিছু তথ্য এ প্রতিবেদনে ‍তুলে ধরা হলো।

* আমেরিকা পৃথিবীর একমাত্র দেশ যারা ৫০ বছর আগে চাঁদে মানুষ পাঠাতে সক্ষম হয়েছে। আর একমাত্র দেশ হিসেবে দেশটি ছয়বার চাঁদে মানুষ সহ নভোযান পাঠিয়েছে। এ পর্যন্ত ১২ জন আমেরিকান নভোচারী চাঁদে ঘুরে বেড়ানোর গৌরব অর্জন করেছে।

* চাঁদে মানুষ পাঠানোর উচ্চাভিলাষী মিশনে মোট ব্যয় হয়েছে ২৪.৫ বিলিয়ন ডলার।

* প্রথম চাঁদে নামা মানুষ আর্মস্ট্রং ও অলড্রিন কিন্তু তাদের নভোযানের বাইরে চাঁদেই আটকে পড়তে পারতেন। কারণ কী জানেন? বাইরে থেকে নভোযানটি খোলার কোনো হাতল ছিল না। তাই এর দরজা খুলে রেখেই চাঁদের মাটিতে নামতে হয় তাদের।

* চাঁদের কক্ষপথে কলাম্বিয়া নামের মহাকাশযান থেকে ‘দ্য ঈগল’ নামের নভোযানে চেপে চাঁদে নামেন নভোচারীরা। তবে চাঁদে নামার আগে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছিল। পাথুরে এলাকায় না নেমে একটু নিরাপদ স্থানে নামতে ম্যানুয়ালি কাজ করতে হয়েছে নীল আর্মস্ট্রংকে। এতে বেশি জ্বালানি খরচ হয়। তাই অবতরণের আগে জ্বালানি শেষ হয়ে গিয়েছিল। মাত্র ২৫ সেকেন্ড দেরি করলেই নভোচারীদের আবার কলাম্বিয়াতে ফিরে আসতে হতো।

* চাঁদে যে বিশেষ জায়গাটিতে নামেন দুই নভোচারী, সেটির নাম ‘সি অব ট্রাংকুইলিটি’।

* নীল আর্মস্ট্রং আর বাজ অলড্রিন চাঁদের মাটিতে প্রায় একটি দিন ঘুরে বেড়িয়েছেন। সঠিক করে বললে তারা চাঁদে ছিলেন ২১ ঘন্টা ৩৬ মিনিট।

* চাঁদের মাটিতে প্রথমে নামেন নীল আর্মস্ট্রং, তার ২০ মিনিট পর নামেন বাজ অলড্রিন। তবে যেসব স্টিল ছবি দেখা যায়, সেগুলোর প্রায় সবগুলোই অলড্রিনের। একটি মাত্র ছবিতে দেখা যায় আর্মস্ট্রংকে।

* চাঁদে নেমে প্রথম কী খেয়েছিলেন নভোচারীরা জানেন? অলড্রিন জানিয়েছেন, ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানিয়ে খ্রিস্টধর্মের রীতি অনুযায়ী এক চুমুক ওয়াইন পান করেছেন তিনি। সেটাই চাঁদে কোনো মানুষের কোনো কিছু খাওয়ার প্রথম ঘটনা।

* প্রথম চন্দ্র অভিযানে আর্মস্ট্রং আর অলড্রিনের নামই সব সময় শোনা যায়। এই দু’জন ছাড়াও আরেকজন কিন্তু ছিলেন ওই মিশনে। তিনি মাইকেল কলিন্স, যিনি কি না চাঁদের চারপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিলেন কলাম্বিয়া নভোযানে।

* ১৯০৩ সালে, চন্দ্র অভিযানের ৬৬ বছর আগে রাইট ব্রাদার্স প্রথম বিমান উড়ানোর সফলতা অর্জন করে। তাই রাইট ব্রাদার্সের প্রথম উড়া বিমানটির একটি কাঠের অংশ সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন নীল আর্মস্ট্রং।

* পুরো বিশ্ববাসীর প্রতিনিধি হিসেবে চাঁদের মাটিতে বিভিন্ন মানুষের ছবি, বিভিন্ন ভাষার অডিও রেকর্ডিং রেখে আসেন আর্মস্ট্রং ও অলড্রিন।

* চাঁদে দীর্ঘ সময় বিচরণের পর নভোচারীরা সেখান থেকে ধূলাবালি, পাথর নিয়ে এসেছেন নমুনা হিসেবে। সেসব নমুনার ওজন কতো ছিল জানেন? ৪৬ পাউন্ড!

* চাঁদে বিচরণের পর নভোযান ঈগলে ফিরে আসার পর দুই নভোচারীর নাকে অদ্ভুত এক গন্ধ ভেসে আসে। তাদের পোশাকে চাঁদের যে ধুলাবালি লেগেছিলো, সেগুলো থেকে নাকি অনেকটা গান পাউডার বা ভেজা ছাইয়ের গন্ধ ছড়াচ্ছিল!

* অদ্ভুত এক ঘটনা ঘটেছিল ফিরে আসার সময়। অলড্রিন একটি সুইচ দুর্ঘটনাবশত ভেঙে ফেলেন, যা ছাড়া নভোযানটি উপরে উঠার ইঞ্জিন কাজ করবে না। ওই সময় আর কোনো উপায় না দেখে অলড্রিনের পকেটে থাকা একটি বল পয়েন্টই তাদের বাঁচিয়েছিল। সেটা দিয়ে কোনোক্রমে সুইচটি চালু করেন অলড্রিন। নইলে হয়তো চাঁদেই বাকি জীবনটা কাটাতে হতো তাদের।

* দুই নভোচারী ঐতিহাসিক মুহূর্ত উদযাপন করে চাঁদের বুকে আমেরিকার যে পতাকা গেঁথে এসেছেন, সেটি আর সেখানে নেই, নভোযান ঈগল চলে আসার সময় তার ইঞ্জিনের হাওয়ায় সেটি পড়ে গেছে, এমনটা দেখেছেন বলেই জানান অলড্রিন।

* এটা হয়তো খুব কম মানুষই জানে, অ্যাপোলো-১১ মিশন সফল হবে কি না তা নিয়ে বিরাট আশঙ্কা ছিল। তাই সে মিশন ব্যর্থ হলে, অর্থাৎ চাঁদে অবতরণ করে নভোচারীরা আবার পৃথিবীতে ফিরে না এলে একটি ভাষণ লিখে প্রচারের জন্য তৈরি করে রেখেছিলেন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন।

* চন্দ্র অভিযান শেষে যখন তিন নভোচারী পৃথিবীতে ফিরে এলেন, তখন তারা যেন মহাকাশের রোগ জীবাণু থেকে নিরাপদ থাকেন, সে লক্ষ্যে তাদেরকে বিশেষ কামরায় ২১ দিন আলাদা করে রাখা হয়।

* প্রথম চাঁদে অবতরণের ঐতিহাসিক মুহূর্তটি বিশ্বজুড়ে ৬০০ মিলিয়ন মানুষ দেখেছেন। তার মাঝে আমেরিকায় ৫৩ মিলিয়ন পরিবার তাদের গৌরবময় এই ঘটনাটি উপভোগ করে। আর বিশ্বজুড়ে দেখে ৫৫০ মিলিয়নের বেশি মানুষ।

* মহাকাশ গবেষণা সংস্থা চাঁদে মানুষ পাঠানোর মতো ঐতিহাসিক ঘটনার জন্ম দিলেও প্রথম চন্দ্র অভিযানের ফুটেজ ধারণ করা ১১টি টেপ সংরক্ষণ করতে পারেনি তারা। সেসব ফুটেজ সহ টেপ হারিয়ে গেছে। আমরা যেসব ফুটেজ দেখি, সেগুলো আসলে টিভিতে প্রচারিত মূল টেপের রেকর্ড করা অংশ।

তথ্যসূত্র: ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাস, লিটল থিংকস

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ জুলাই ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়