ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

প্রবাসীদের বীমা পলিসি নিয়ে দীর্ঘসূত্রীতা কাটছে না

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২৩, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রবাসীদের বীমা পলিসি নিয়ে দীর্ঘসূত্রীতা কাটছে না

প্রবাসী বাংলাদেশীদের বীমা ‍সুবিধার আওতায় এনে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা পাইয়ে দেয়ার লক্ষ্যে নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু বিভিন্ন কারণে এখনো চূড়ান্ত করা যায়নি এ সংক্রান্ত নীতিমালা। অথচ এরই মধ্যে চলতি অর্থবছরের বাজেট থেকে শুরু করে বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম চালুর ক্ষেত্রেও এ বিষয়ে ঘোষণা দিয়ে রেখেছে সরকার।

জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ বিষয়ে ঘোষণা দেয়ার পর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আগ্রহের প্রেক্ষিতে কয়েক দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এখনো নীতিমালাটি পড়ে আছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে। এই্ অবস্থায় আগামীকাল মঙ্গলবার আবারো এই বিষয়ে নীতি-নির্ধারণী বৈঠকে বসতে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়। এতে বীমা পলিসির সাথে সম্পৃক্ত সকল পক্ষকে উপস্থিত থাকতে গত ৮ সেপ্টেম্বর চিঠি ইস্যু করা হয়। এই সভায় প্রস্তাবিত বীমা পলিসিটি উপস্থাপন করা হবে এবং নীতিমালার সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে।

মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব কাঞ্চন বিকাশ দত্ত রাইজিংবিডিকে বলেন, কর্মীবান্ধব এবং বাস্তবায়নে জটিলতাহীন নীতিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এটি চূড়ান্তকরণের কাজ করছে।

তিনি বলেন, প্রবাসীরা যেন উপকৃত হয় এবং বিদেশগামী কর্মীদের বাধ্যতামূলকভাবে বীমার আওতায় আনার ক্ষেত্রে বিষয়টিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। এতে সবচেয়ে কম প্রিমিয়ামে কর্মীরা কীভাবে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেতে পারেন, সেদিকে লক্ষ্য রেখে বীমার প্রিমিয়াম নির্ধারণ এবং বীমার অর্থপ্রাপ্তি সহজ করার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। সামগ্রিক বিষয়ে মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করবে।

প্রবাসীদের জীবন বীমা সুবিধার আওতায় আনার ঘোষনা ছিল সরকারের আগের বারের মেয়াদে। ২০১৮ সাল থেকে নীতিমালা চূড়ান্ত করতে কাজ করছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এটি এখনো চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি।

জানা গেছে, জুলাই মাসে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ইমরান আহমদের সভাপতিত্বে নীতিমালাটি নিয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রবাসী কর্মীদের আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনা করে প্রিমিয়ামের টাকা অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কর্মী, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড এবং সরকারের ভর্তুকির মাধ্যমে পরিশোধের প্রস্তাব করা হয়। ওই বৈঠকের প্রস্তাবনাগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আগামী দিনের বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কোয়েরির বিষয়েও আলোচনা হবে।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বীমা আইন অনুযায়ী বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) কর্তৃক ‘প্রবাসীকর্মী বীমা নীতিমালা’র খসড়া প্রণয়ন করা হয়। জীবন বীমা কর্পোরেশনের একচ্যুয়ারি (বীমা-গাণনিক) কর্তৃক প্রিমিয়ামের অঙ্ক নির্ধারণ করে একটি বীমা প্রকল্পও প্রস্তুত করে।

প্রস্তাবিত নীতিমালায় যা আছে: শ্রমিকদের দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুঝুঁকি, অঙ্গহানী, লে-অফ ঘোষণা প্রভৃতি ঝুঁকিসমূহ মোকাবেলার লক্ষ্যে এ বীমা পলিসি চালু করা হচ্ছে। নীতিমালা অনুসারে, কর্মের উদ্দেশ্যে বিদেশগামী ও বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীদের বাধ্যতামূলক ৩ প্রকারের বীমা সুবিধা নিতে হবে। যাত্রার সময় হতে পরবর্তী ১ মাসের জন্য স্বাস্থ্য বীমা, জীবন বীমা এবং চাকরি হারানো, বাফার টাইম, লে-অফ বা কোম্পানি বন্ধের জন্য বীমা সুবিধা।

বিদেশে কর্মরত এবং বিদেশে কাজ করতে যাবে এমন দক্ষ, অদক্ষ ও সেমি দক্ষ শ্রমিকদের জন্য এ সুবিধা দেয়া হবে। তবে যারা ফ্রি ভিসায় বিদেশে যাবে, তাদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বীমা ছাড়া বর্ণিত অন্য কোন বীমা সুবিধা প্রযোজ্য হবে না।

বিদেশ যাওয়ার প্রাক্কালে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি দপ্তর থেকে এ সংক্রান্ত ছাড়পত্র সংগ্রহের আগেই এককালীন প্রিমিয়াম পরিশোধ করতে হবে। স্বাস্থ্য বীমার ক্ষেত্রে বিদেশে কাজের উদ্দেশ্যে যাত্রার দিন থেকে পরবর্তী ১ মাসের জন্য এ বীমা সুবিধা দেয়া হবে। নন-লাইফ বীমা কোম্পানিসমূহ এক মাসের জন্য স্বাস্থ্য বীমা সুবিধা দিতে এ সংক্রান্ত প্রকল্প ডিজাইন করতে পারে।

প্রবাসীদের জীবন বীমার ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে কর্ম-মেয়াদের জন্য জীবন বীমা ক্রয় করবে। পরবর্তীতে কর্মমেয়াদ বৃদ্ধি হলে বীমা গ্রহীতার নমিনি নিয়োগকর্তা প্রদত্ত চাকরির সময় বৃদ্ধি সংক্রান্ত ডকুমেন্টস বীমাকারী কোম্পানির নিকট দাখিল করে পলিসির মেয়াদ বৃদ্ধি করতে পারবে।

জীবন বীমার বীমা অংক সর্বনিম্ন ২ লাখ টাকা এবং সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা। আর নির্দিষ্ট বীমা অংকের জন্য আইডিআরএ কর্তৃক মনোনীত একচ্যুয়ারি দ্বারা পরিকল্প ও অভিন্ন প্রিমিয়াম দেয়া হবে। বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত যে কেউ এ বীমা সুবিধা নিতে পারবে।

বীমা চলাকালে বীমা গ্রহীতার মৃত্যুতে অথবা অঙ্গহানিতে বীমা দাবি পরিশোধ করা হবে। যে কোন কারণে মৃত্যুর ক্ষেত্রে বীমা অংকের ১০০ শতাংশ পরিশোধ করা হবে। উভয় চোখের দৃষ্টিশক্তি হারালে মূল বীমা অংকের ১০০ শতাংশ পরিশোধ করা হবে। তবে এক চোখের দৃষ্টি শক্তি হারালে ৫০ শতাংশ পরিশোধ করা হবে।

চাকরি হারানো ঝুঁকির বীমা পলিসির সর্বোচ্চ বীমা অংক নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে সিআরসি কর্তৃক প্রিমিয়ামের হার নির্ধারিত হবে। তবে এককালীন সর্বনিম্ন বীমা অংকের উপর ০.৩০ শতাংশ আরোপ করা যেতে পারে। প্রতি বছর ০.৩০ শতাংশ হারে এককালীন ২ বছর পরিশোধ্য। এ ছাড়াও ভ্যাট ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সরকারি কর যোগ করতে হবে।

বীমার মেয়াদ হবে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ১ বছর। তবে এনডোর্সমেন্ট'র মাধ্যমে ২ বছর পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা যাবে। সেক্ষেত্রে নবায়ন প্রিমিয়াম প্রযোজ্য হবে না। ১৮ থেকে ৫৮ বছর বয়স পর্যন্ত এ বীমা গ্রহণ করা যাবে। পেশা পরিবর্তন করলে পত্রের মাধ্যমে তা বীমাকারীকে জানাতে হবে।

যদি বীমা গ্রহীতা কর্মে নিয়োগ পাওয়ার ১ মাসের মধ্যে স্থায়ীভাবে চাকরিচ‌্যুত হন, তাহলে ক্ষতিপূরণ পাবেন ৮০ শতাংশ। যদি এক মাসের অধিক থেকে ৩ মাস পর্যন্ত সময়ের মধ্যে স্থায়ীভাবে চাকরিচ‌্য‌ুত হন, তাহলে ক্ষতিপূরণ পাবেন ৭০ শতাংশ। তিন মাসের অধিক থেকে ৫ মাস পর্যন্ত সময়ের মধ্যে স্থায়ীভাবে চাকরিচ‌্যুত হন, তাহলে ক্ষতিপূরণ পাবেন ৬০ শতাংশ।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯/হাসান/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়