ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

প্রভাবশালীদের চাপে ভিটেমাটি হারাচ্ছেন প্রতিবন্ধী বৃদ্ধা

কাঞ্চন কুমার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২০ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রভাবশালীদের চাপে ভিটেমাটি হারাচ্ছেন প্রতিবন্ধী বৃদ্ধা

রাহেলা খাতুন বয়স ৬৫। সে বাক এবং শ্রবণ প্রতিবন্ধী। এলাকার মানুষ তাকে কালা নামে চেনে। একমাত্র ছেলে নাহিদকে নিয়েই তার সংসার। নাহিদ দিনমজুরের কাজ করেন, আর রাহেলা মাঠে ছাগল চরান। ৪৫ বছর বয়সী নাহিদ মায়ের যত্ন নিতে বিয়ে করেনি আজও।

প্রতিবন্ধী এই বৃদ্ধার ঠিকানা হয়নি তার বাবার বাড়িতেও। অসহায় বলে জোটেনি বাবার সম্পত্তির ভাগও। ভায়েরা বঞ্চিত করেছে তাকে। স্বামী ফজলু মিয়া দুই সন্তানকে রেখে মারা যান তাও প্রায় ৩৫ বছর আগে। দুই সন্তান ও স্বামীকে নিয়ে বাবার বাড়ির পাশেই ছোট কুঁড়ে ঘরে ছিলো রাহেলার সংসার। প্রায় ৪০ বছর ধরে ৩ শতক জমির উপরে বসবাস করে আসছেন এই বৃদ্ধা। স্থানীয়দের দাবি, জমিটার মূল মালিক এবং শরীকরা কেউই নেই বাংলাদেশে। সে হিসেবে ভূমিহীন তার ঘরটি ওই জমিতেই থেকে যায়।

রাহেলা কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের মাধবপুর গ্রামের সরকার পাড়ার বাসিন্দা। তিনি সরকার পাড়ার মৃত ইয়াদ আলীর মেয়ে।

স্বামী মারা যাওয়ার পরে ভেঙ্গে পড়েননি এই প্রতিবন্ধী নারী। ছেলে-মেয়েকে নিয়ে দেখেছেন স্বপ্ন। অন্যের বাড়িতে কাজ করে বড় করেছেন ছেলে-মেয়েদের। মেয়ের বিয়েও দিয়েছেন তিনি। জন্মগতভাবে প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও কপালে জোটেনি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড। তবে, তিনি এক বছর আগে পেয়েছেন প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড।

বর্তমানে দিনমজুর ছেলের উপার্জন এবং মাঠে ছাগল চরিয়ে অভাব না মিটলেও ছেলেকে নিয়ে সুখেই ছিলেন রাহেলা। হঠাৎ করেই ভেঙে পড়ে কুঁড়ে ঘরটি। ২টি ছাগল একসাথে বিক্রি করে কুঁড়ে ঘরটাকে মেরামত করতে চেয়েছিলেন তারা। শীত আসছে ভেবে ইট দিয়েই ঘর করার পরিকল্পনা করেন। ইট এনে ঘর নির্মাণ করতে শুরু করতেই বাধা দেয় রাহেলার চাচাতো ভাই মোমিন, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি শ্যামল মালিথা, আহাদ মালিথা, সবুজ মালিথা ও বিপল মালিথা। প্রভাবশালী ওই ব্যক্তিদের দাবি, ওই জমির মালিক এখন তারাই।

তবে, উক্ত জমিটি ৫ জন হিন্দু ব্যক্তির নামে রয়েছে বলে জানা গেছে। দেশ ভাগের সময় ওই হিন্দুরা ভারতে চলে যায়। এর পরে থেকেই জমিটি দখল করে রাখে প্রভাবশালীরা। এদিকে বাবার সম্পত্তির ভাগ চেয়ে ভয়ে তারা কারো কাছে যেতেও পারে না, বিচারও চাইতে পারে না উচ্ছেদের ভয়ে।

রাহেলার ছেলে নাহিদ আলী জানান, ‘আমার জন্মের আগে থেকে এখানে আমার মা বসবাস করে আসছে। আমরা গরীব তো তাই আমার মামারাও জমিজমা দেয়নি। ঘরটা ভেঙে গেছে, কিন্তু মোমিন, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি শ্যামল মালিথা, আহাদ মালিথা, সবুজ মালিথা ও বিপল মালিথারা আমাদের ঘর তুলতে দিচ্ছে না। তারা বলছে, এই জমির মালিক তারা। আমরা অসহায় বলে এলাকার নেতারা আমাদের পক্ষে নেই। এই জায়গা ছেড়ে আমরা কোথায় যাবো? এই জমি না হলেও আমার মায়ের বাবার যে জমি আছে, সেখানে আমার মায়ের অংশটুকু পেলেও আমরা মাথা গোঁজার ঠাঁই পাইতাম।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রতিবেশি বলেন, এই জমির মালিকরা ভারতে চলে গেছে। এটা খাস জমি হিসেবে যে যেমন পেরেছে দখল করে আছে। এই প্রতিবন্ধী রাহেলার বসবাস করা জমিটির উপরে স্থানীয় কয়েকজনের লোভ হয়েছে। তাই অসহায় এই বৃদ্ধার ঘর ভেঙে তুলে দিতে চাচ্ছে। এই শীতে ভাঙা ঘরে ছাগলসহ রাহেলা খুব কষ্ট করছে। আমরা এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল মারুফ জানান, এ ব্যাপারে স্থানীয় একজন ব্যক্তি তাদের অফিসিয়াল ফেসবুকে ম্যাসেজের মাধ্যমে জানায়। তাক্ষণিক তারা বিষয়টি জানার চেষ্টা করেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও স্থানীয় ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে তারা জমিটি মাপবে এবং ওই প্রতিবন্ধী রাহেলা খাতুনের জমির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করা হবে।

এছাড়াও মানবিক এবিষয়টি যারা উপজেলা প্রশাসনের নজরে এনেছেন, তাদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন ইউএনও সোহেল মারুফ।

 

কুষ্টিয়া/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়