প্রভাবশালীরা কাঠগড়ায়
যা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি, তেমনটাই ঘটেছে ২০১৯ সালে। যে সম্রাট পুরো ঢাকা শহরে দাপিয়ে বেড়াতেন, তাকেই মাথা নিচু করে দাঁড়াতে হয় ঢাকা সিএমএম আদালতের কাঠগড়ায়।
অনেক আগে থেকেই ক্যাসিনো কাণ্ডে ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের জড়িত থাকার অভিযোগ থাকলেও তা কখনো প্রকাশ্যে আসেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় পদক্ষেপের কারণে ক্যাসিনোর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার হন- সম্রাট, আরমান, খালেদ, জি কে শামীমসহ অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি। এ বছর প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কয়েক কর্মকর্তাকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের মামলায় গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়।
রাজধানীর ক্লাব পাড়ায় অবৈধ ক্যাসিনো বাণিজ্য এবং টেন্ডারবাজিসহ নানা দুর্নীতির বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ার পর জনমনে নতুন করে আশাবাদ সৃষ্টি হয়। আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাদের অবৈধ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর অনমনীয় মনোভাব সর্বস্তরে প্রশংসিত হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় প্রথম গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (বর্তমানে বহিষ্কৃত) খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গুলশানের বাসভবন থেকে আটক করে র্যাব। পরে তাকে অস্ত্র, মাদক, হত্যা এবং সর্বশেষ দুর্নীতির মামলায় রিমান্ডে নেয়া হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন। খালেদের পর ২০ সেপ্টেম্বর গুলশানের নিকেতনে নিজ কার্যালয় থেকে জি কে শামীমকে সাত দেহরক্ষীসহ আটক করে র্যাব। এরপর তাদের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নেয়া হয়। বর্তমানে তারা কারাগারে আছেন। ওই দিনই (২০ সেপ্টেম্বর) কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি শফিকুল আলম ওরফে ফিরোজকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র্যাবের হেফাজতে নেয়া হয়। সন্ধ্যায় কলাবাগান ক্রীড়াচক্রে অভিযান চালায় র্যাব। অভিযানকালে সাত প্যাকেট ইয়াবা, একটি বিদেশি পিস্তল ও তিন রাউন্ড গুলি জব্দ করা হয়। ওই রাতেই তার বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য আইনে পৃথক দুটি মামলা করা হয়। পরে তাকে রিমান্ডে নেয়া হয়। রিমান্ড শেষে তিনি কারাগারে আছেন।
শফিকুল আলমকে গ্রেপ্তারের চার দিন পর ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ডিরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভূঁইয়াকে তার মণিপুরী পাড়ার বাসা থেকে আটক করে র্যাব। এ সময় তার রুম থেকে চার বোতল বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়। মদ উদ্ধারের ঘটনায় র্যাব তেজগাঁও থানায় মামলা দায়ের করে। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে মামলাটিতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। ৩০ সেপ্টেম্বর দুপুরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে অনলাইন ক্যাসিনো ব্যবসায়ী সেলিম প্রধানকে আটক করে র্যাব-১। মানিলন্ডারিং এবং দুর্নীতির মামলায় তাকে রিমান্ডে নেয়া হয়। তিনিও কারাগারে আছেন।
ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি (বহিষ্কৃত) ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে ক্যাসিনো কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। সম্রাট কি গ্রেপ্তার হচ্ছেন, এ নিয়ে চলে নানা জল্পনা। পরে গত ৬ অক্টোবর ভোর ৫টার দিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জুশ্রীপুর গ্রাম থেকে সম্রাট ও তার সহযোগী এনামুল হক আরমানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। সম্রাকে মাদক, অস্ত্র এবং দুর্নীতির মামলায় রিমান্ডে নেয়া হয়। আরমানকে রিমান্ডে নেয়া হয় মাদক এবং দুর্নীতির মামলায়। বর্তমানে তারা কারাগারে আছেন।
গত ১১ অক্টোবর মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের এক বাসা থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজানকে আটক করা হয়। সে সময় তার কাছ থেকে একটি পিস্তল ও চার রাউন্ড গুলি জব্দ করে র্যাব। পরদিন ১২ অক্টোবর হাবিবুর রহমান মিজানের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ড শেষে গত ২০ অক্টোবর পাগলা মিজানকে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর থেকে তিনি কারাগারেই আছেন।
১৯ অক্টোবর রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাড়ি থেকে বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজিবকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার বিরুদ্ধে ভাটারা থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি মামলা দায়ের করা হয়। ২১ অক্টোবর দুই মামলায় রাজিবের সাত দিন করে ১৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। গত ৪ নভেম্বর রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর অস্ত্র আইনের মামলায় গত ১১ নভেম্বর চার দিন এবং ১৫ নভেম্বর মাদক মামলায় তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ১৯ নভেম্বর রিমান্ড শেষে তাকে আবার কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর থেকে তিনি কারাগারেই আছেন। অস্ত্র আইনের মামলার গত ২২ নভেম্বর রাজিবের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।
গত ৩১ অক্টোবর বেলা ১টার দিকে রাজধানীর টিকাটুলিতে নিজ কার্যালয় থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মঞ্জুকে আটক করে র্যাব। মঞ্জুর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক-ক্যাসিনো ব্যবসাসহ নানা অভিযোগ আছে। ওই দিনেই মঞ্জুর বিরুদ্ধে ওয়ারী থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি মামলা দায়ের করা হয়। পরের দিন (১ নভেম্বর) আদালত অস্ত্র ও মাদক মামলায় পাঁচ দিন করে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর থেকে তিনি কারাগারেই আছেন। গত ২৪ নভেম্বর অস্ত্র আইনের মামলায় এবং ৩০ নভেম্বর মাদক মামলায় তার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।
ঢাকা/মামুন খান/রফিক
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন