ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

প্রস্তুতি শেষ, এবার ঈদযাত্রা

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪০, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রস্তুতি শেষ, এবার ঈদযাত্রা

নিজস্ব প্রতিবেদক: পবিত্র ঈদুল আজহার আর কয়েকদিন বাকি। প্রস্তুত ঘরমুখো মানুষ। এবার নারীর টানে বাড়ি যাওয়ার পালা।

 

প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানী ছাড়বে কয়েক লাখ মানুষ। বাস, ট্রেন, নৌ-যান কিংবা বিমান যে বাহনই হোক বাড়ি যেতে হবে। আজ থেকে মূলত কোরবানী ঈদের যাত্রা শুরু।

 

নদীমাতৃক বাংলাদেশে দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ আরামে যাত্রার জন্য লঞ্চযোগে রাজধানী ত্যাগ করে।  বাস, ট্রেনের মতই নদী পথের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বরাবরের মতো এবারও বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)।

 

পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে বৃহস্পতিবার যাত্রীদের জন্য স্পেশাল সার্ভিস রয়েছে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী সি-ট্রাকগুলোও এ সেবা দেবে।

 

বিআইডব্লিউটিসি সূত্র মতে, এবার ঢাকা-বরিশাল-চাঁদপুর-ঝালকাঠী-হুলারহাট ও মোড়েলগঞ্জ রুটে ৭টি লঞ্চ স্পেশাল সার্ভিসের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। লঞ্চগুলো হলো এমভি বাঙালি, এমভি মধুমতি, পিএস মাহসুদ, অস্ট্রিচ, লেপচা, টার্ন ও এমভি সোনারগাঁ।

 

সন্দ্বীপ ও হাতিয়া উপকূলীয় নৌ রুটে যুক্ত থাকবে ১২টি নৌযান। এগুলো হলো এমভি ১২ আওলিয়া, এমভি মনিরুল হক, এমভি আব্দুল মতিন, এসটি শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, সুকান্ত বাবু, আব্দুর রব, সি ট্রাক খিজির ১, ২, ৩, ও ৪। এছাড়া নৌবন্দরে নৌপুলিশ, কোস্ট গার্ড, মেডিক্যাল টিম এবং ফায়ার সার্ভিসের সদস্য মোতায়েন থাকবে। এ ছাড়া ডুবুরি দলকে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হবে।

 

এ বিষয়ে বিআইডব্লিটিএ-এর যুগ্ম পরিচালক (ট্রাফিক) জয়ানাল আবেদিন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘সাধারণত নিয়মিতভাবে ৬০ রুটে ৭০টি লঞ্চ চলাচল করে। এর বাইরে প্রতিদিন ৫ থেকে ৭টি বিশেষ লঞ্চ সার্ভিস থাকবে। সাধারণত দুই ঈদেই যাত্রীদের প্রচণ্ড ভীড় থাকে। তবে তুলনামূলক কোরবানির ঈদে ভীড় কম থাকে।’ 

 

তিনি বলেন, ‘আজ থেকে বিশেষ লঞ্চ সার্ভিস চালু করা হবে। নিয়মিত লঞ্চগুলোর পাশাপাশি বিশেষ সার্ভিস চলাচল করবে। তাছাড়া ঈদের সময় লঞ্চগুলো প্রতিদিন ১৩০ থেকে ১৩৫ বার ট্রিপ দিয়ে থাকে। তবে আজ মনে হয় ভীড় কম থাকবে। আগামীকাল ভীড় বাড়তে পারে।’

 

ঈদ উপলক্ষ্যে বিশেষ কাউন্টার চালু করা হয়েছে এমন তথ্য তুলে ধরে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘যাত্রীদের ভোগান্তির কথা মাথায় রেখে সদরঘাটে বিশেষ টিকিট কাউন্টারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঘাটে মোট ৩৫টি কাউন্টার চালু রয়েছে। যাত্রী ভোগান্তি দূর করতে নতুন পন্টুন, নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা, বিশেষ টিম মোতায়েনসহ সার্বিক প্রস্তুতি শেষ।

 

ফিটনেসবিহীন লঞ্চ চলাচলের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ ধরণের কোন লঞ্চ চলাচল করে না। সদরঘাট থেকে এ ধরনের কোন লঞ্চ যেতে পারে না। তারপরও যদি এমন কোন লঞ্চ চলাচল করে তার জন্য আমাদের বিশেষ মনিটরিং টিম রয়েছে। এছাড়া লঞ্চে অতিরিক্তি যাত্রী বিষয়ে আমরা সচেতন রয়েছি। বিআইডব্লিউটিএ’র কয়েকটি টিম তদারকি করবে।

 

কর্তৃপক্ষের এত উদ্যোগের পরও রায়েছে যাত্রীদের অনেক অভিযোগ।

 

বরিশালে ঈদ করবেন এমন একজন বেসরকারি চাকরিজীবী কামরুজ্জামান দিদার রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ঈদের সময় পরিবার নিয়ে বাড়ি যাবো চিন্তা করলে একদিকে ভাল লাগে, অন্যদিকে আতঙ্কে থাকি। কেননা, লঞ্চে কেবিন পাওয়া আর সোনার হরিণ পাওয়া এক কথা। অনেক কষ্টে কেবিন ম্যানেজ করেছি। এখন নিরাপদে বাড়ি যেতে পারলে হোলো।’

 

দক্ষিণবঙ্গের সকল জেলা ও উপজেলায় রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে ৪৫টি রুটে লঞ্চ চলাচল করে। ঢাকা থেকে বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, ঝালকাঠী, মাদারীপুর, চাঁদপুর, খুলনা, মংলা বন্দর, কাউখালী, চরখালী, হাতিয়া, মোরেলগঞ্জ, লালমোহন, হুলারহাট, ভান্ডারিয়া, ইচলী, দৌলত খাঁ, বোরহান উদ্দিন এবং সুরেশ্বরসহ বেশ কিছু অঞ্চলে এই লঞ্চগুলো যাতায়াত করে। লঞ্চগুলো সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়।

 

বিআইডব্লিইটিসি সূত্রে জানা যায়, ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চগুলো সাধারণত সকাল ৬ টা থেকে শুরু করে রাত ১২টা পর্যন্ত ছেড়ে যায়। সদরঘাটে ১৩টি পন্টুন দিয়ে যাত্রী লঞ্চে উঠানামা করে। এর সঙ্গে আরো দুটি পল্টুন যোগ করা হয়েছে।

 

লঞ্চে ভাড়ার বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা যায়, আসন ব্যবস্থাপনা অনুসারে ছোট-বড় লঞ্চসমূহে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। বড় আকারের লঞ্চগুলোতে ডুপ্লেক্স ও ভিআইপি কেবিনের ভাড়া ২৭০০ টাকা থেকে ৬০০০ টাকা হয়ে থাকে। যেখানে দুটো বেড, এসি, রেফ্রিজারেটর, টিভি, ডাইনিং সুবিধা রয়েছে।

 

দুই বেড সুবিধায় ডাবল কেবিনের ভাড়া ১৭শ থেকে ২২শ টাকা, এক বেডের সুবিধায় সিঙ্গেল কেবিন ৮শ থেকে ১২শ টাকা, সোফা-কাম-বেডের ক্ষেত্রে ৫০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়ে থাকে। এখানেও এসি কিংবা ফ্যান ও টিভির সুবিধা রয়েছে।

 

এছাড়া লঞ্চের ডেকেও (লঞ্চের খোলা স্থান) যাত্রা করা যায়। বড় অনেক লঞ্চে কার্পেট দেওয়া রয়েছে। তবে চাদর বালিশ যাত্রীকে সঙ্গে বহন করতে হয়। এখানে ভাড়া ২শ থেকে ২৫০ টাকা।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ /এম এ রহমান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়