ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

‘প্রেমী ও প্রেমী’ এবং কিছু কথা

রুহুল আমিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:৫০, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘প্রেমী ও প্রেমী’ এবং কিছু কথা

‘প্রেমী ও প্রেমী’ সিনেমার দৃশ্য

রুহুল আমিন : বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে নির্মাতা জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘প্রেমী ও প্রেমী’ সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছে। জাজ মাল্টিমিডিয়ার পরিবেশনায় সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন আরিফিন শুভ, নুসরাত ফারিয়া ও আমান রেজাসহ আরো অনেকে। জাকির হোসেন রাজু বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ধারার নির্মাতাদের মধ্যে অন্যতম। ‘প্রেমী ও প্রেমী’র আগে তার পরিচালিত সর্বশেষ সিনেমা ‘অনেক দামে কেনা’। গত বছর সিনেমাটি মুক্তি পায়। তার নির্মিত বেশ কয়েকটি সিনেমা দর্শকদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে।

‘প্রেমী ও প্রেমী’ মুক্তির আগে থেকেই আলোচনায় ছিল। কারণ সিনেমাটির ট্রেইলার প্রকাশের পর নকলের অভিযোগ উঠেছিল। সিনেমাটি দেখতে গিয়ে তার প্রমাণও পাওয়া যায়। ২০১০ সালে হলিউডে মুক্তি পাওয়া আনন্দ টাকার পরিচালিত ও অ্যামি অ্যাডামস, ম্যাথু উইলিয়াম এবং অ্যাডাম স্কট অভিনীত লিপ ইয়ার সিনেমার কাট কপি পেস্ট। গল্পের প্রায় ৯৯ ভাগ মিলে যায়। ভৌগলিক কারণে বাকি একভাগ মেলেনি। আন অফিসিয়াল রিমেকও বলা যায় সিনেমাটিকে।

একটি সরল প্রেমের গল্প নিয়ে সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে। সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন নুসরাত ফারিয়া। যে প্রেমিকের জন্মদিন উপলক্ষে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য লন্ডন থেকে আট হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে কলকাতার পথে রওনা করেন। লন্ডনে থাকা মেয়ে যেরকম স্মার্ট হওয়া দরকার ফারিয়াকে তেমন স্মার্টই দেখা যায় সিনেমায়। তার প্রেমিকের চরিত্রে অভিনয় করেছেন আমান রেজা। চরিত্রটি তেমন বড় না। ফারিয়া ব্রিটিশ এয়ার ওয়েজের একটি ফ্লাইটে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। কিন্তু দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বিমানটি চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে অবতরণ করানো হয়। কিন্তু ফারিয়া যেকোনোভাবে কলকাতায় পৌঁছতে চায়। এদিকে বাংলাদেশে তখন সড়ক পথে ধর্মঘট চলে। বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে কোনো গাড়ির চালককে রাজি করাতে পারেনি। অবশেষে এক খারাপ লোকের খপ্পরে পড়ে গাড়িতে উঠে ফারিয়া। কিন্তু কিছুদূর যাওয়ার পর তাকে গাড়িতে বসিয়ে চালক তার বসের কাছে যায়। ফারিয়া তা বুঝতে পেরে পালানোর জন্য দৌঁড়ায়। এক পর্যায়ে খারাপ লোকগুলো তাকে ধরে ফেলে।

ঠিক এই সময় দেখা মেলে আরিফিন শুভর। মানে বাংলা সিনেমার প্রথাগত নায়কের আগমন। তারপর শুভর বান্দরবানের হোটেলে রাত্রিযাপন। পরদিন ফারিয়াকে শুভ কলকাতায় নেওয়ার দায়িত্ব নেয়। বিনিময়ে শুভকে টাকা দিবেন ফারিয়া।পুরোনো গাড়িতে করে রওনা হয়। পরে অনেক ঘটনার ভেতর দিয়ে তারা কলকাতায় পৌঁছায়।

সিনেমায় মোট তিনটি গান। গানগুলো ভালো লেগেছে। তবে দ্বিতীয় গানটির ক্ষেত্রে মনে হয়েছে জোর করে ঢুকানো হয়েছে।ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক মোটামুটি ভালো ছিল। লোকেশনের ক্ষেত্রে দুই এক জায়গায় গল্পের সঙ্গে খটকা লাগলেও সিনেমায় দেখতে ভালো লেগেছে। ড্রোন ক্যামেরায় নেওয়া লং শটগুলোও ভালো লেগেছে।

অভিনয়ের ক্ষেত্রে আরিফিন শুভ ভালো করেছেন। গানের ক্ষেত্রে বরাবরের শুভকেই পাওয়া গেছে। পুরোনো স্মৃতি রোমস্থনে শুভর অনুভূতি প্রকাশ বেশ ভালো লেগেছে। তবে  মাঝে মাঝে ওভার অ্যাক্টিংও মনে হয়েছে। আর ফারিয়া যেহেতু লিড ক্যারেক্টার, তো সাপোর্টিং ক্যারেক্টার হিসেবে শুভ বেশ ভালোই টেনেছেন ফারিয়াকে। কিন্তু পুরো জার্নিতে ফারিয়ার উপর নির্ভর করছিল গল্পের মান। সেখানে ফারিয়া কতটুকু উতড়েছেন তা বড় ব্যাপার। পুরো সিনেমাজুড়ে কোথাও তেমন টেনশনে পড়েনি ফারিয়া। বিমানের জরুরি অবতরণ থেকে শুরু করে একের পর এক ঘটনা ঘটেছে কিন্তু ফারিয়া কিঞ্চিত পরিমাণ অসহায় হননি বা কখনো কখনো মনেই হয়নি তিনি একটা গোলযোগে আছেন। মূল সিনেমা মানে লিপ ইয়ারে অ্যামি অ্যাডামসের অভিনয়, অ্যাক্সপ্রেশন দেখলে পার্থক্যটা খুব সহজে ধরা যাবে। এ ছাড়া ফারিয়ার অপ্রয়োজনীয় চিৎকার-চেঁচামেচি একজন মানুষ যে বিপদে আছে তা ফিল্মি ভাষায় ঠিক তা মেক বিলিভ হয়ে ‍ওঠেনি। কলকাতার ফ্লাইট চট্টগ্রামে অবতরণের কারণ পরিস্কার করা হয়নি। তা ছাড়া বিমান থেকে নেমে বাইরে যখন গাড়ির জন্য ঘোরাঘুরি করছিল রাস্তাঘাট ভেজা ছিল না। অথচ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বিমানটি চট্টগ্রামে অবতরণ করা হয়েছিল। বিমানের জানালা দিয়ে বৃষ্টিও দেখানো হয়েছিল।

তা ছাড়া লন্ডন-কলকাতা ফ্লাইটে ফারিয়ার কি বাংলাদেশে ট্রানজিট ভিসা ছিল কি না? না হলে তিনি কি করে বাই রোডে কলকাতা গেলেন। ফারিয়ার সঙ্গে শুভর প্রথম সম্পর্ক ছিল অনেকটা যাত্রী-চালকের। তার উপর অপরিচিত। সে ক্ষেত্রে এক সম্পর্ক থেকে আরেক সম্পর্কে যেতে সময়ের ব্যাপার। ফারিয়া যেহেতু লন্ডন ফেরত তাকে না হয় একটু অ্যাডভানটেজ দেওয়া যায়। তাই সে গাড়ি চালক শুভকে তুমি করে সম্বোধন করতে পেরেছে সহজে। কিন্তু শুভর ক্ষেত্রে তার জন্য ডিটেইলের দরকাল ছিল বলে মনে হয়। সম্পর্কের ট্রান্সফরমেশনে সময় গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া বান্দরবান আর চট্টগ্রামকে গুলিয়ে ফেলা হয়েছে দুই একবার।

দু’তিন জায়গায় কন্টিনিউটিও মিস হয়েছে। ছোটোখাটো অসামঞ্জস্য তো ছিলই। তারপরও ‘প্রেমী ও প্রেমী’ মোটামুটি ভালো সিনেমা বলা যায়। তবে প্রথম সারির নির্মাতা জাকির হোসেন রাজুর কাছে সিনেমার দর্শক হিসেবে আরো বেশি গ্রহণযোগ্য ও ভালো কাজ আশা করি।

পুনশ্চ : সিনেমাটি অভিসারে দেখেছি। সিনেমার কাহিনি নকল করা জেনেই অভিসারে গিয়েছিলাম গত বুধবার। দর্শকদের অধিকাংশই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের। শো শেষে হল থেকে বের হয়ে অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। যাদেরকে সিনেমাটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছি তার প্রায় ৯৫ ভাগ মানুষ বলেছে ভালো লেগেছে। যদিও দর্শকদের সংখ্যা কম ছিল। তবে যেসব দর্শকদের সঙ্গে কথা বলেছি  তাদের মধ্যে এমন একজনও পাওয়া যায়নি যিনি টাকারের লিপ ইয়ার সিনেমটি দেখেছেন। আর হলের ম্যানেজার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে সহকারী ম্যানেজার ও কাউন্টারে কথা বলে জানা গেছে দর্শক খুব একটা নাই। ১০ তারিখে মুক্তি পেয়েছে। আমি পঞ্চম দিনে গিয়েছি হলে সিনেমা দেখতে। তারা জানিয়েছেন শতকরা হিসেবে ২৫ ভাগ দশর্ক হচ্ছে প্রতিটি শোতে।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/রুহুল/শান্ত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়