ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বায়ুদূষণ

প্রয়োজন সুদূরপ্রসারী ও সমন্বিত পরিকল্পনা

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২০, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রয়োজন সুদূরপ্রসারী ও সমন্বিত পরিকল্পনা

যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থা ইপিএ- এর সর্বশেষ প্রতিবেদনে বিশ্বে সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশ্বের শীর্ষ দূষিত বায়ুর দেশ হিসেবে নেপাল, তারপর পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ, ভারত, চীন, পাকিস্তান ও কঙ্গোর নাম উঠে এসেছে। আর নির্মল বায়ুর দেশ হিসেবে প্রথমে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। এরপর রয়েছে বার্বাডোজ, জর্ডান, কানাডা ও ডেনমার্ক।

ইপিএ বিশ্বের ১৮০টি দেশ সামগ্রিকভাবে পরিবেশ সুরক্ষায় কী ধরনের ভূমিকা রাখছে, তা নিয়ে একটি সূচক তৈরি করে। তাতে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৯তম। এর আগে ২০০৬ সালে সর্বপ্রথম যখন ওই সূচক তৈরি করা হয় তখন বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২৫তম। অর্থাৎ গত এক যুগে দূষণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ৫৪ ধাপ নিচে নেমেছে। বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ধূলিকণা শ্বাসের সঙ্গে ভেতরে ঢুকে ফুসফুসে প্রবেশ করে। এর ফলে হৃদরোগ, হাঁপানি ও ফুসফুসে ক্যান্স্যার হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ (কেইস) প্রকল্প থেকে দেশের আটটি শহরের বায়ুর মান প্রতিদিন পর্যবেক্ষণ করা হয়। তাতে দুই মাস ধরে ঢাকার পাশাপাশি রাজশাহী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল ও খুলনা শহরের বায়ুর মান মারাত্মক ও খুব অস্বাস্থ্যকর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহর হলো রাজধানী ঢাকা। এরপর  রয়েছে রাজশাহী। বরিশাল সবচেয়ে কম দূষিত শহর হলেও এর বায়ু মানমাত্রার চেয়ে অনেক খারাপ।

পরিবেশ অধিদপ্তরের দৈনিক বায়ু মানবিষয়ক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি দেশের আটটি প্রধান জেলা শহরের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের বায়ুর মান ছিল সবচেয়ে খারাপ। ইপিএ- এর প্রতিবদেনে একে মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। একই দিনে ঢাকা ও সিলেটের বায়ু খুবই অস্বাস্থ্যকর। গত ডিসেম্বর থেকে বায়ুর এই খারাপ অবস্থা রয়েছে। ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসজুড়ে ওই শহরগুলোর অধিকাংশের বায়ুর মান মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় ছিল।

পরিবেশ অধিদপ্তরের মতে, ঢাকার আশপাশসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে ইটভাটা। এসব ইটভাটা বায়ুদূষণের জন্য ৫৮ শতাংশ দায়ী। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই ফসলি জমি ও আবাসিক এলাকায় গড়ে তোলা হচ্ছে ইটভাটা। আর এসব ইটভাটায় বেআইনিভাবে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ফলে বায়ু দূষিত হচ্ছে ব্যাপকভাবে। দেশে বায়ুদূষণের কারণের মধ্যে ইটভাটার পরই রয়েছে ধুলোবালি। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে নতুন ভবন। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব স্থাপনা তৈরির সময় ইমারত নির্মাণবিধি মানা হচ্ছে না । ফলে বাতাসে ধুলো উড়ছে, দূষিত হচ্ছে বায়ু।

রাজধানী ঢাকার প্রায় সব জায়গায়ই অধিকাংশ সময় বিভিন্ন সংস্কার কাজের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি লেগেই থাকে। যে কারণে মাত্রাতিরিক্তভাবে বাড়ছে ধুলো। উন্নয়ন কাজের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি হলেও দেখা গেছে কোনো কাজই নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় না। ঢাকা ও অন্যান্য বড় শহরে অনেক সময় দেখা যায়, ড্রেনের ময়লা রাস্তার পাশে জমিয়ে রাখা হয়। একসময় এগুলো শুকিয়ে ধূলিকণায় পরিণত হয় এবং পরিবেশ দূষিত করে। শহরে অনেক স্থানে ডাস্টবিন উন্মুক্ত থাকছে। সবাই এসে সেখানে ময়লা ফেলছে। আবার যে গাড়িতে করে এই ময়লা নিচ্ছে সেগুলোও উন্মুক্ত এবং দিনের বেলা নিচ্ছে। এতে দুর্গন্ধ ছড়ায়। আর এই দূষিত বাতাস থেকেও রোগ ছড়াতে পারে। শ্বাসযন্ত্রের মধ্যে সংক্রমণ হতে পারে।

এই সমস্যা সমাধানে একটি সুদূরপ্রসারী ও সমন্বিত পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জরুরিভিত্তিতে সমন্বিতভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। না হলে আগামীতে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ নেবে। যেসব  কারণে বায়ুর দূষণ হচ্ছে সেসব যথাযথভাবে চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। দেশের ইটভাটাগুলোকে জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব ইটভাটায় রূপান্তর করা প্রয়োজন। এতে দূষণ অনেকাংশে কমানো সম্ভব।

ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে বা ফেলার ক্ষেত্রে নাগরিকদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। খোলা অবস্থায় আবর্জনা ফেলতে নিয়ে যাওয়া উচিত নয়। অন্যদিকে পরিষ্কার করার দায়িত্ব যাদের তাদের ভোরের আগেই সেসব পরিষ্কার করে নিয়ে যাওয়া উচিত। যেসব জায়গায় স্যুয়ারেজ খোলা সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া প্রয়োজন। এতে দূষণ ও নানা রোগ থেকে আমরা মুক্ত থাকতে পারি।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/আলী নওশের/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়