ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

পড়ালেখা ভাল না লাগায় পালিয়ে যায় আবু সাঈদ

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪৫, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পড়ালেখা ভাল না লাগায় পালিয়ে যায় আবু সাঈদ

পিতা মোহাম্মদ আজমের সঙ্গে কিশোর আবু সাঈদ

নিজস্ব প্রতিবেদক : খুন হওয়ার ৫ বছর পর পুলিশ গ্রেপ্তার করে কিশোর আবু সাঈদকে। আলোচিত সেই কিশোর ট্রাইব‌্যুনালের বিচারকের এক প্রশ্নের  ‍উত্তরে জানায়, পাড়ালেখা ভালো না লাগায় সে পালিয়ে যায়।

এ সময় আবু সাঈদ নিজেই স্বীকার করেন তাকে কেউ অপরহরণ করেনি।

বৃহস্পতিবার ঢাকার ৫ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয় আবু সাঈদকে। বিচারক বেগম শাসসুন্নাহার বলেন, এই আবু সাঈদ যে, নিহত আবু সাঈদ তা আমাকে পুলিশ প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানতে হবে। তাই আগামী ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে হাজারীবাগ থানাকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে আদেশ দিলাম।

মিথ‌্যা মামলার আবেদনের বিষয়ে বিচারক বলেন, অপনাদের মিথ্যা মামলার বিচার চাওয়ার আবেদনের আদেশ পুলিশ প্রতিবেদন পাওয়ার পর দেয়া হবে।

এদিন একই সঙ্গে আবু সাঈদের বাবা মোহাম্মদ আজম, মা মাহিনুর বেগমকেও কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। আজম আদালতে উপস্থিত ছেলেকে দেখিয়ে বলেন, এই সেই আবু সাঈদ, যে হারিয়ে গিয়েছিল।

এদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী মো. ওয়াহিদুজ্জামান আদালতকে বলেন, একটি ছেলে নিজ থেকে পালিয়ে যায়। সেখানে মিথ্যা অপহরণ মামলায় তিনজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে তাদের নির্যাতন করা হয়। দুই জনকে দিয়ে মিথ্যা হত্যার স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়। আজ সেই মৃত ছেলে জীবীত হয়ে আদালতে। এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির এসআই (বর্তমানে ডেমরা থানায়) রুহুল আমিন নির্যাতন করে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করে। সেইই মাস্টারমাইন্ড ছিল। রুহুল আমিন এবং তার পেছনে যারা কলকাঠি নাড়িয়েছে তাদের বিচার চাই।

শুনানিকালে মিথ্যা অভিযোগের মামলায় দীর্ঘদিন জেল হাজতে থাকা মো. সাইফুল ইসলাম, সোনিয়া আক্তার ও তার ভাই আফজাল হোসেন ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র আবু সাঈদ হারিয়ে যাওয়ার বিষয়ে ২০১৪ সালের ১৭ এপ্রিল তার বাবা মোহাম্মদ আজম একটি জিডি করেন। ওই জিডির পর তিনি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির মামলা করেন। মামলায় আসগর আলী, মিলন, মো. সাইফুল ইসলাম হাওলাদার, সোনিয়া আক্তার, তার ভাই আফজাল হোসেন ও মো. শাহীনকে পুলিশ বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার করে। ২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর সাইফুল ও আফজাল ঢাকা সিএমএম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। স্বীকারোক্তিতে তারা বলেন, ভিকটিম আবু সাঈদকে তারা অপহরণ করে হত্যার পর লাশ বরিশালগামী লঞ্চ থেকে নদীতে ফেলে দেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন ডিবির ধানমন্ডি জোনাল টিমের এসআই মো. রুহুল আমিন। ২০১৫ সালের ১৫ জুন আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তিনি। আসগর আলী ও মিলনকে বাদ দিয়ে অপর ৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়। মামলাটির চার্জশিট হওয়ার পর ঢাকার ৫ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে নাশি মামলা নং-১০৮৪/২০১৮ হিসেবে বিচারাধীন আছে। গত ৩০ আগস্ট পল্লবী থানাধীন একটি বাসা থেকে পুলিশ হারিয়ে যাওয়া আবু সাঈদসহ তার বাবা, মাকে গ্রেপ্তার করে। তাদের আটকের পরে প্রতারণার মামলা করেন অপহরণ মামলার অন‌্যতম আসামি মোসা. সোনিয়া আক্তার।

উল্লেখ্য, মিথ্যা অপহরণ ও হত্যা মামলায় সোনিয়া আক্তার, তার ভাই আফজাল হোসেন ও আত্মীয় সাইফুল ইসলাম ৬ মাস থেকে ৩ বছর পর্যন্ত কারাভোগ করেন। এছাড়া আফজাল হোসেন ও সাইফুল ইসলামকে জোর করে স্বীকারোক্তি করতে বাধ্য করা হয় তাদের দাবী।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯/মামুন খান/নবীন হোসেন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়