ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ফেরি বিলম্বে তিতাসের মৃত্যু: তদন্ত কমিটি গঠন

বেলাল রিজভী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩৩, ২৯ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ফেরি বিলম্বে তিতাসের মৃত্যু: তদন্ত কমিটি গঠন

মাদারীপুর সংবাদদাতা : যুগ্ম সচিবের গাড়ির অপেক্ষায় ফেরি ছাড়তে তিন ঘণ্টা বিলম্বের কারণে অ্যাম্বুলেন্সে স্কুলছাত্রের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।

আজ সোমবার দুপুরে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম জানান, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে, সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আশ্বাস দিয়েছেন, তদন্তে অপরাধ প্রমাণিত হলে অভিযুক্ত ব্যক্তির শাস্তি হবে।

সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র তিতাসকে বৃহস্পতিবার রাতে নড়াইল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছিলেন স্বজনরা। রাত ৮টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সটি কাঁঠালবাড়ী ১নম্বর ফেরিঘাটে পৌঁছায়। তখন একটি ফেরি ঘাটেই ছিল। কিন্তু সরকারের এটুআই প্রকল্পে দায়িত্বরত যুগ্ম সচিব আবদুস সবুর মণ্ডলের গাড়ি যাবে- এমন নির্দেশনা থাকায় ফেরিটি ছাড়তে দেরি করে ঘাট কর্তৃপক্ষ। শেষ পর্যন্ত রাত ১১টার দিকে যুগ্ম সচিবের গাড়ি ঘাটে পৌঁছানোর পর ফেরি রওনা হয় বলে জানান তিতাসের স্বজনরা। মাঝ নদীতে অ্যাম্বুলেন্সে তিতাসের মৃত্যু হয়।

এই ঘটনায় ঘাট কর্তৃপক্ষের গাফলতি আছে কি না, সেই বিষয়ে জানতে মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক বলেন, মাদারীপুর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শহীদুল হক পাটোয়াীকে আহ্বায়ক; শিবচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান, এএসপি সার্কেল (শিবচর) মো. আবির হোসেন, বিআইডব্লিউটিসির এজিএম এ কে এম শাজাহানকে কমিটির সদস্য করা হয়েছে।

দুপুরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ফেরি বিলম্বে তিতাসের মৃত্যু বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যত দিন ক্ষমতায় আছেন, এখানে যে যত প্রভাবশালী হোক না কেন; আমাদের বা সরকারে হোক না কেন, অন্যায় করে পার পাবে না। প্রত্যেকটা বিষয় তদন্ত হচ্ছে, খতিয়ে দেখা হচ্ছে।  যদি কেউ অন্যায় করে তার শাস্তি হতেই হবে।’’

এই মৃত্যু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দেন নিহত তিতাসের এক আত্মীয়। সেটি নজরে আসে বেসরকারি টেলিভিশনের এক কর্মকর্তার। পরে এই সংবাদ প্রচার হলে হইচই শুরু হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

তিতাস ঘোষের বড় বোন তন্নিসা ঘোষ গণমাধ্যমকে জানান, রাত ৮টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সটি ঘাটে পৌঁছায়। ফেরি পারাপারের জন্য তারা ঘাট কর্তৃপক্ষ ও দায়িত্বরত পুলিশের সহযোগিতা চান। কিন্তু তারা সহযোগিতা পাননি। তিন ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকার পরে রাত পৌনে ১১টার দিকে সাদা রঙের নোয়া মাইক্রোবাস ফেরিতে ওঠার পরে ফেরি ছাড়া হয়। ফেরি ছাড়ার আধা ঘণ্টা পর মাঝ নদীতে তিতাসের মৃত্যু হয়।

ওই ফেরির মাস্টার ইনচার্জ মো. শামসুল আলম বলেন, রাত আনুমানিক ১০টার দিক ফেরি ছাড়ার কিছুক্ষণ পরই অ্যাম্বুলেন্সে থাকা রোগীর মৃত্যু হয় বলে তিনি জানতে পারেন।

এ ব্যাপারে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, ঘাটে দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব ফেরিতে যাবেন, সেই বিষয়টি জানান। ফেরিতে অ্যাম্বুলেন্স না তুলে যুগ্ম সচিবের গাড়ির জন্য অপেক্ষা করার বিষয়টি তাকে জানানো হয়নি। যুগ্ম সচিবের গাড়ির জন্য ফেরি অপেক্ষায় রাখার বিষয়টি সম্পূর্ণ ঘাট কর্তৃপক্ষের।

‘‘আমি অ্যাম্বুলেন্স বসিয়ে রেখে যুগ্ম সচিবকে নিতে হবে এমন কোনো নির্দেশনা দেইনি।’’


রাইজিংবিডি/মাদারীপুর/২৯ জুলাই ২০১৯/বেলাল রিজভী/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়