ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ফেরেস্তা সেজে প্রতারণা

মাকসুদুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫৩, ২২ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ফেরেস্তা সেজে প্রতারণা

অনেক সম্পদ পাওয়া যাবে। সম্পদ পেতে হলে মক্কা বা মদিনায় উট অথবা দুম্বা কোরবানি দিতে হবে। যমযম কূপের পানি দিয়ে স্বর্ণালংকারগুলো ধুয়ে পবিত্র করে ফেরত দেওয় হবে। এই লোভে দেখিয়ে নিজেদের ফেরেস্তা বলে প্রতারণা করছে একটি প্রতারকচক্র। গোয়েন্দা পুলিশ সম্প্রতি এরকম চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে।

প্রতারকচক্রের তথ্য দিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার (উত্তর বিভাগ) মশিউর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘গভীর রাতে ফোন দিয়ে বলে তারা নাকি ফেরেস্তা অথবা ফেরেস্তাদের বাদশা পরিচয় দেয়। এটি মাত্র নতুন একটা প্রতারণার কৌশল। বানানো কিছু গল্প বলে লোকজনের সরল মনে বিশ্বাস করায়। বিশ্বাস করে অনেকেই প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এমন অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও প্রতারকচক্রের আরো বেশ কয়েকজনকে খোঁজা হচ্ছে। যারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় এসব প্রতারণা করছে।’

রাইজিংবিডির প্রশ্নে পুলিশের এ কর্মকর্তা আরো  বলেন, ‘এর আগে জ্বীনের বাদশা, কবিরাজ, বড় হুজুর পরিচয়দানকারী প্রতারক ধরা পড়লেও ফেরেস্তা পরিচয় দেওয়া প্রতারক এই প্রথম গ্রেপ্তার হলো। এজন্য আমাদের নিজেদেরও সচেতন হতে হবে। লোভ থেকে কিন্তু মানুষ প্রতারণা শিকার হচ্ছে।’

গোয়েন্দারা জানতে পেরেছে, এমন প্রতারণার শিকার হয়েছেন দিনাজপুরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষক। তার কাছ থেকে বিভিন্ন সময় মোট ৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি।

শনিবার বিকেলে মিন্টু রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ের সামনে কথা হয় ভুক্তভোগীর ছেলে রকিবুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, ‘তার মায়ের কাছ থেকে ৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা নেয় চক্রটি। এরপর আরো ২ লাখ টাকা নেয়। এছাড়াও যমযম কূপের দিয়ে স্বর্ণালংকারগুলো ধুয়ে পবিত্র করে ফেরত দিয়ে যাবে বলে নিয়ে যায়। যদিও পরে তা ফেরত দেয়নি চক্রের সদস্যরা। একই সঙ্গে টাকা দেয়ার কথা কাউকে না জানানোর পরামর্শ দিয়ে আসছিল চক্রের লোকজন। শাহাদাত ও সাবু মিয়া এসব টাকা ও স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নেয়।’

ভুক্তভোগীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গোয়েন্দারা মাঠে নামে। তারই অংশ হিসেবে ওই দুজনকে প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্রেপ্তার করা হয়। এ দুজন ছাড়াও কথিত ফেরেস্তা ও প্রতারক আরো আছে। যারা অনেক সম্পদ পাওয়ার কথা বলে লোভ দেখায়। সম্পদ পেতে হলে মক্কা বা মদিনায় উট অথবা দুম্বা কোরবানি দিতে হবে। তাই যদি রাজি থাকে তাহলে সমপরিমাণ টাকা পাঠিয়ে দিলে তার পক্ষ থেকে কাজটি সম্পন্ন করে দেয়া হবে বলে জানায় প্রতারকরা। এমনকি কোরআন শরীফ কেনার জন্যও টাকা নেয় তারা। পারিবারিক শান্তি ও ধনদৌলতের প্রলোভনও দেখানো হয়। এজন্য তারা গভীর রাতকে বেছে নেয়। ফেরেস্তা পরিচয়ে মানুষকে মোবাইলে ফোন করে থাকে। গাইবান্ধা, কিশোরগঞ্জ, কুষ্টিয়া, চট্রগ্রাম এবং রাজধানী ঢাকায়ই তাদের টার্গেট। এই চক্রে ২০ থেকে ২৫ জনের সদস্য রয়েছে। তাদের ধরতে গভীর রাতে কাজ করছে গেয়েন্দা পুলিশের একটি ইউনিট। আর কেউ যদি এরকম হয়রানি বা প্রতারণার শিকার হন তাহলে গোয়েন্দা পুলিশকে জানাতে অনুরোধ করেছেন কর্মকর্তারা।


ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়