ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘ফেলোশিপ উপকূলের প্রতি দায়িত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে’

ছাইফুল ইসলাম মাছুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৭, ১৬ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘ফেলোশিপ উপকূলের প্রতি দায়িত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে’

রফিকুল ইসলাম মন্টু। উপকূল-সন্ধানী সাংবাদিক। উপকূলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সংবাদ সংগ্রহে তিনি অক্লান্ত, উদ্যমী। সংবাদের খোঁজে উপকূলীয় অঞ্চলের সর্বত্র রয়েছে তার পদচারণা। তার কলমে উঠে আসে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সম্ভাবনা, উদ্যোগ, সাফল্য, বঞ্চনা, দুঃখগাঁথা। দেশের উপকূল সাংবাদিকতার অগ্রপথিক রফিকুল ইসলাম মন্টু কাজের স্বীকৃতি হিসেবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে পেয়েছেন বহু পুরস্কার, সম্মাননা। সম্প্রতি তিনি আর্থ জার্নালিজম নেটওয়ার্ক, ওয়াশিংটন থেকে পরিবেশ সাংবাদিকতায় আন্তর্জাতিক ফেলোশিপ পেয়েছেন। উপকূল সাংবাদিকতার নানা প্রসঙ্গ নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন ছাইফুল ইসলাম মাছুম।

মাছুম: অভিনন্দন। আপনি আর্থ জার্নালিজম নেটওয়ার্ক থেকে ফেলোশিপের জন্য মনোনীত হয়েছেন। কেন আপনাকে তারা বেছে নিয়েছে বলে মনে করেন?

মন্টু: আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পরিবেশ সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম ওয়াশিংটনভিত্তিক আর্থ জার্নালিজম নেটওয়ার্ক। সংক্ষেপে এটি ‘ইজেএন’ নামে পরিচিত। পৃথিবীজুড়ে পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তনসহ এ সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয় নিয়ে এই নেটওয়ার্ক কাজ করছে। এসব বিষয়ে নিবিড় অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রতিবেদন তারা তৈরি করে। ইজেএন-এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় পরিবেশ সাংবাদিক। আমি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চল নিয়ে কাজ করছি। এখানে পরিবেশ ও জলবায়ুসংশ্লিষ্ট অনেক বিষয় রয়েছে; যার সঙ্গে ইজেএন-এর কাজের মিল রয়েছে। কাজের মিলসহ আমার দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতা থেকে ইজেএন হয়তো মনে করেছে, আমি কাজটি পারবো, তাই তারা আমাকে মনোনীত করেছে।

মাছুম: ফেলোশিপের খবর পাওয়ার পর আপনার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া কী?

মন্টু: সঙ্গত কারণেই ফেলোশিপের খবর পাওয়ার পর আমার চোখের সামনে ভেসে উঠেছে কতগুলো মানুষের মুখ। যে মানুষগুলো পোড় খাওয়া। যে মানুষগুলো দু’মুঠো ভাতের লড়াইয়ে সারাটা জীবন শেষ করে দেয়। যে মানুষগুলো নিয়তির ওপর ভর করে বাঁচে। যারা উপকূলের প্রান্তিকে বসবাস করে। ফেলোশিপ পেয়ে আমার মনে হয়েছে, এদের জন্য আমি আরও বেশি কিছু করতে পারবো এখন। ফেলোশিপ আমার দায়িত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে।  

মাছুম: ফেলোশিপের আওতায় আপনি কী কাজ করবেন- কিছু ভেবেছেন?

মন্টু: আসলে বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজন সংক্রান্ত নির্দিষ্ট প্রতিবেদন তৈরির জন্য এ ফেলোশিপ দেওয়া হয়। আমি উপকূলীয় অঞ্চলের নির্দিষ্ট এলাকার জনগোষ্ঠীর ওপর ক্রমাগত দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং অভিযোজন বিষয়ে কাজ করবো। তবে সুনির্দিষ্ট বিষয়টা আপাতত প্রকাশ করছি না। ফেলোশীপের আওতায় বেশ কয়েক মাস কাজ করতে হবে।  

মাছুম: আপনি সাংবাদিকতার জন্য উপকূলকেই কেন বেছে নিলেন?

মন্টু: উপকূলকে আমি বলি- খবরের জন্মস্থান। সমুদ্রতীরবর্তী এই এলাকার বাঁকে বাঁকে প্রতিদিন খবর জন্ম নেয়। এই উপলব্ধিটা আমার অনেক আগে থেকেই ছিল। কিন্তু পূর্ণকালীণ উপকূল নিয়ে কাজের সুযোগ পাচ্ছিলাম না। এক পর্যায়ে ঝুঁকি নিয়ে মেনে পড়লাম। কারণ ওটাই, এখানে খবরের জন্ম, অথচ এখানে খবর লেখার লোকের অভাব। উপকূলের প্রান্তিক জনপদের খবরগুলো জাতীয় সংবাদমাধ্যমে স্থান পায় না দেখে আমার আরও বেশি কষ্ট হতো। প্রাকৃতিক কোনো বিপদ এলে জাতীয় সংবাদ মাধ্যম উপকূলের বিষয়ে বেশ সজাগ হয়ে উঠলেও অন্য সময়ে এ অঞ্চলের খবর নিয়ে তাদের তেমন কোন মাথাব্যথা নেই। স্বাভাবিক সময়ে উপকূলের মানুষের জীবন যে কতটা অস্বাভাবিক; সেটাই আমি দেখাতে চাই। ঢাকায় পিলিটিক্যাল বিট, নির্বাচন কমিশন বিট, নগর বিট, পরিবেশ বিটে আমি কাজ করেছি। আমি দেখলাম, এসব করার জন্য এখানে অনেক লোকজন আছেন, যেখানে খবর বেশি, সেখানেই লোক নেই, সেখানেই ছুটে গেলাম।

মাছুম: আপনি উপকূল নিয়ে ভাবছেন, সংকট তো সারাদেশেই রয়েছে। উপকূলে জন্মেছেন বলেই কী উপকূলের প্রতি আপনার আলাদা নজর? দেশের অন্য কোনো এলাকার বাসিন্দা হলেও কি আপনি উপকূল নিয়ে কাজ করতেন?

মন্টু: বুঝতেই পারছেন, উপকূল নিয়ে এই কাজটি খুব সাধারণ কাজ নয়। এটি একটি বিশেষ কাজ। এখানে সময়, শ্রম দিতে হয় প্রচুর। প্রাকৃতিক বৈরিতা সহ্য করার ক্ষমতা থাকতে হয়। দুর্গম পথে চলাচলে সাহসও লাগে। যে কোনো পেশায় বিশেষ কিছু করতে না পারলে আসলে কাজটা ঠিক পাকাপোক্ত হয় না। আমি ছোটবেলা থেকেই পেশায় বিশেষ কিছু করার কথা ভেবেছি। উপকূলে জন্মগ্রহণ করেছি বলে উপকূল নিয়ে বিশেষ কাজের টান থাকতেই পারে। অনেক কিছু আমার আগে থেকে চেনাজানা থাকায় কাজে সুবিধাও হচ্ছে। তবে অন্য এলাকায় জন্মালে উপকূল নিয়ে ভাবতাম কিনা; সেটা বলা যায় না। তবে চিন্তাভাবনার বৃত্তটা যদি এমনই থাকতো, তাহলে উপকূল না হোক এমন কোনো প্রান্তিক এলাকা হয়তো বেছে নিতাম কাজের ক্ষেত্র হিসেবে।

মাছুম: আপনি উপকূল নিয়ে যা ভাবছেন, পাঠকের কাছে তার কতটা তুলে ধরতে পারছেন?

মন্টু: উপকূল নিয়ে কাজের অন্যতম লক্ষ্য হলো নীতি-নির্ধারণী মহলের কাছে বার্তা পৌঁছানো। ধীরে হলেও এ লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে। এখানে বিষয়টি দু’ভাগে বিভক্ত। কিছু সমস্যা স্থানীয়ভাবে সমাধান করা যায়। সেগুলো স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নজরে আনার চেষ্টা করি। এভাবে অনেক সমস্যার সমাধানও হয়ে যায়। আবার কিছু সমস্যা উপর মহলে জানানো দরকার। প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রতিবেদনের কপি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বরাবরে পাঠিয়ে তাদের নজরে আনার চেষ্টা করি।

মাছুম: এই কাজের মাধ্যমে কতটুকু ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে?

মন্টু: উপকূলে নিবিড়ভাবে সাংবাদিকতার ইতিবাচক ফলাফল কয়েকটি স্তরে। প্রথমত, সংবাদ প্রকাশের ফলে নাগরিকগোষ্ঠী বিভিন্নভাবে উপকৃত হচ্ছে। থানা মামলা নিচ্ছে না, রিপোর্ট হওয়ার পর, সাংবাদিকেরা জেনে যাওয়ার পর মামলা নিচ্ছে। রাস্তাটা হচ্ছে না, খবর প্রকাশের পর প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে। কেউ সহায়তা পাচ্ছে না, খবর প্রকাশের পর কর্তৃপক্ষের নজরে আসছে এবং সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এমন অনেক ঘটনা আছে। দ্বিতীয়ত, আমার এই কাজের মধ্যদিয়ে উপকূলজুড়ে তরুণ প্রজন্মের সাংবাদিকদের মধ্যে আগ্রহ জন্মেছে। অনেকে এখন উপকূল নিয়ে চমৎকার প্রতিবেদন করছে। তৃতীয়ত, উপকূল নিয়ে সরকারি মহলে নতুন নতুন ভাবনা এসেছে, অনেক পরিকল্পনা হচ্ছে। চতুর্থত, সংবাদ মাধ্যম উপকূলের খবরের বিষয়ে অনেকটা ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে। গত কয়েক বছরে সংবাদ মাধ্যমে ‘উপকূল’ শব্দের ব্যবহারও অনেক বেড়েছে। এমন আরও অনেক পরিবর্তনের কথা বলা যায়।

মাছুম: উপকূল সাংবাদিকতা করতে গিয়ে গণমাধ্যমের কেমন সাপোর্ট পাচ্ছেন?

মন্টু: সত্য কথাটা হচ্ছে, উপকূলের মতো একটা বিষয়ে অধিকাংশ সংবাদ মাধ্যমের আগ্রহ কম। অনেকে বলে থাকেন এটা ‘নিষ্প্রাণ’ বিষয়, এজন্য আবার সময় দেওয়ার প্রয়োজন আছে? আমি বলি, উপকূলেই আছে ‘প্রাণের’ খবর। জীবন্ত খবর এখানেই পাওয়া যায়। উপকূল সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে সাপোর্ট কারো কারো কাছ থেকে পাই। তবে অধিকাংশ স্থান থেকেই নিরাশার খবর শুনি। এক্ষেত্রে প্রথম সাপোর্ট পাই বাংলানিউজ থেকে। এরপরে আমি সাপোর্ট পাই অনলাইন নিউজপোর্টাল রাইজিংবিডি থেকে। এখানে উপকূলের অনেক বিষয়ে লেখার সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু জাতীয় পর্যায়ের অন্য কোনো সংবাদ মাধ্যম উপকূলের বিষয়ে তেমন কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছে না। 

মাছুম: মিডিয়া হাউসের লাভ ক্ষতির হিসেবে উপকূল সাংবাদিকতা কতটা গুরুত্ব পাচ্ছে বলে মনে করেন?

মন্টু: ইতিবাচক খবর হলো- সংবাদ মাধ্যমগুলোতে উপকূলের খবরের মাত্রা আগের চেয়ে বেড়েছে। উপকূলের বিভিন্ন এলাকার সাংবাদিক এবং ঢাকার সাংবাদিকদের অনেকেই উপকূলের বিষয় নিয়ে খবর লেখায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তবে এখানে হতাশাজনক চিত্রও আছে। সংবাদ মাধ্যমে বাজারের একটা ব্যাপার থাকে। যেখানে টিআরপি নেই, সেখানে সংবাদ মাধ্যম নেই। টিআরপি আছে কী নেই, তার উপরেই বাজেট বরাদ্দ হয়। আমি কী পাবো? বেশি কিছু পেলে তবেই আমি ইনভেস্ট করবো। শুধুমাত্র এই কারণে উপকূলের খবরের বাজার মন্দা। এই লাভ-ক্ষতির হিসাব থেকেই উপকূল সাংবাদিকতা পিছিয়ে পড়েছে। উপকূলের অনেক মানসম্পন্ন প্রতিবেদন মারা যায়। প্রান্তিকের প্রতি অবহেলার কারণে অনেক খবর পাঠকের সামনে না গিয়ে ওয়েস্ট বাস্কেটে পড়ে যায়। তবে ক্রমান্বয়ে উপকূল সংবাদে সকলের নজর বাড়বে বলে আমার বিশ্বাস।  

মাছুম: আপনি কি মনে করেন জাতীয় গণমাধ্যমে উপকূল নিয়ে আলাদা বিভাগ থাকা উচিত? 

মন্টু: কথা স্পষ্ট। আপনি গণমাধ্যম চালাবেন, আর গণমানুষের খবরের দিকে নজর দিবেন না, তা তো হতে পারে না। উপকূলের মতো একটি বৃহৎ এলাকা, যার সঙ্গে আমাদের জাতীয় অর্থনীতি সম্পৃক্ত, যার সঙ্গে দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি সম্পৃক্ত, তাকে তো আমরা প্রান্তিক বলে পাশে সরিয়ে রাখতে পারি না। এই যে বর্ষা এলে শহুরে নাগরিকদের পাতে ওঠে ইলিশ, কোথা থেকে আসে? আরও বিপুল পরিমাণ মাছ, সবজি, আরও অর্থকরী অনেক ফসলের যোগানদাতা উপকূল। পর্যটনের বড় সম্ভাবনা উপকূলে। শুঁটকি, লবণ, কাঁকড়া, চিংড়ি উৎপাদিত হয় উপকূলে। সুন্দরবন এবং সুন্দরবনের আশপাশ ঘিরে রয়েছে বিপুল পরিমাণ সম্পদ। আবার ঝড় এলেও কিন্তু সবার আগে উপকূলেই ধাক্কা লাগে, আর সে ধাক্কায় গোটা দেশ বিপন্ন হয়। সুতরাং প্রত্যেক সংবাদ মাধ্যমে উপকূল নিয়ে পৃথক বিভাগ থাকা সময়ের দাবি।

মাছুম: উপকূল সাংবাদিকতায় সংকটগুলো আসলে কোথায়?

মন্টু: উপকূল সাংবাদিকতার সংকটকে আমি দুই ভাগে ভাগ করি। একটি সাংবাদিক পর্যায়ে, অপরটি সংবাদ মাধ্যম পর্যায়ে। প্রথমত, সাংবাদিক পর্যায়ে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ধারণাগত। এরপর উপকূলে কাজ করতে গিয়ে বিপদাপন্নতা তো আছেই। প্রাকৃতিক বিপদ একটি বড় সমস্যা। তারপর প্রশিক্ষণের অভাব, তথ্য সংগ্রহ ও লেখার টেকনিক জানার সমস্যা আছে। কাজ করতে গিয়ে প্রভাবশালীদের ভয় আছে। অনেক ক্ষেত্রে তথ্য না পাওয়ার সমস্যা আছে। দ্বিতীয়ত, সংবাদ মাধ্যমে উপকূলের সংবাদের গুরুত্ব কম থাকা আরেকটি বড় সমস্যা। এরপর সংবাদ মাধ্যমের নিউজ পরিকল্পনায় উপকূল স্থান পাচ্ছে না। আবার লোকবল, বাজেট সমস্যা, এসব তো আছেই।

মাছুম: উপকূলে কাজ করতে গিয়ে আপনি কী ধরনের সমস্যায় পড়েন?

মন্টু: আমি উপকূল অঞ্চল ঘুরে কাজ করি। পূর্ব প্রান্তে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ থেকে শুরু করে পশ্চিমে শ্যামনগর পর্যন্ত পুরো ৭১০ কিলোমিটার এলাকা বলা যায় করতলের মতো আমার মুখস্ত। এই বিশাল ব্যাপ্তি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে অনেক সমস্যায় আমি পড়েছি। অন্ধকার রাতে পথ হারিয়ে যাওয়া, সাপের মুখে পড়ার মতো ঘটনা আছে। ট্রলারে ওঠার পরে ভয়াবহ ঝড়, এমন ঘটনার মুখে পড়েছি বেশ কয়েকবার। ঝড়ের কবলে পড়ে বিচ্ছিন্ন এলাকায় আটকা পড়েছি। অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে সন্ত্রাসী মাস্তানের সামনেও পড়েছি। প্রান্তিকে থাকা খাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা তো আছেই। অনেক সময় মানুষের বাড়িতে থাকতে হয়। বিদ্যুৎহীন থাকতে হয়। অনেক সময় লেখার জায়গা থাকে না। এমনকি সংবাদ প্রেরণের সুযোগও থাকে না ইন্টারনেট সমস্যার কারণে। সমস্যার তো শেষ নেই।  

মাছুম: তরুণরা যদি উপকূল সাংবাদিকতা করতে চায়, তাদের জন্য আপনার কী পরামর্শ থাকবে?

মন্টু: উপকূল সাংবাদিকতা মানে একটা যুদ্ধ। এই যুদ্ধে যেতে হলে যা যা প্রস্তুতি দরকার সবই নিতে হবে। ঢাল-তলোয়ার ছাড়া তো যুদ্ধ হবে না। যুদ্ধ করার প্রশিক্ষণ না নিলে তো হেরে যেতে হবে। আমি বলতে চাইছি- উপকূল সাংবাদিকতার জন্য সবার আগে লাগবে প্রস্তুতি। প্রস্তুতির একটি বড় স্থান জুড়ে থাকবে মানসিকতা। যে কোনো পরিস্থিতিতে উপকূলে অবস্থানের মানসিকতা থাকতে হবে। থাকতে হবে সাহস, উদ্যম। সামগ্রিকভাবে উপকূলের ভূগোলটা ভালোভাবে বুঝতে হবে। উপকূলীয় ইস্যু সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা রাখতে হবে। মানুষের সঙ্গে মেশা, তাদের সঙ্গে গল্প করার অভ্যেস থাকতে হবে। আর সঙ্গে প্রয়োজনীয় উপকরণ তো লাগবেই।   

মাছুম: আপনার ‘স্বপ্নের উপকূল’ কেমন? যার জন্য কাজ করছেন আপনি।

মন্টু:  কোনো এলাকার সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে ন্যায্যতা ও সমবন্টন খুব জরুরি। অন্য এলাকা থেকে উপকূলের তুলনা করলে দেখা যাবে, অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যা রয়েছে। নাগরিক সেবার সামান্য অংশ উপকূলের মানুষের কাছে পৌঁছায়। অন্যদিকে পরিবেশ বিপর্যয়, প্রাকৃতিক বিপদ তো আছেই। এর বিপরীতে পেশাজীবীরা যেমন ন্যায্য পাওনাটা পায় না; তেমনি আবার সম্ভাবনা বিকাশের ক্ষেত্রেও নেই বিশেষ কোনো উদ্যোগ। জাতীয় অর্থনীতিতে উপকূলের মানুষের অবদান থাকা সত্ত্বেও তারা বঞ্চিত, অবহেলিত। এই সকল ক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীকরণের পাশাপাশি উপকূলের সম্ভাবনার যথাযথ বিকাশ চাই। উপকূলের জেলে কৃষকের ন্যায্য পাওনাটা যাতে তারা পায়, সেটা চাই। শোষণ, বৈষম্য, পরিবেশ বিপর্যয় থেকে অনেক দূরে আমার স্বপ্নের উপকূল।


ঢাকা/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়