ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ফেসবুক নিয়ে মার্ক জাকারবার্গের নতুন ভাবনা

মোখলেছুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৫৬, ১৫ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ফেসবুক নিয়ে মার্ক জাকারবার্গের নতুন ভাবনা

মোখলেছুর রহমান : অল্প কিছুদিন আগেই আমরা পদার্পণ করলাম নতুন একটি বছরে। নতুন বছরে সবাই পুরোনো বছরের ভুল, হতাশাকে পিছনে ফেলে নতুন করে সফলতার পথে হাঁটার পরিকল্পনা করছেন।

বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গও নতুন বছরে তার ব্যবসা নিয়ে নতুন করে পরিকল্পনা সাজিয়েছেন। তিনি আর পুরোনো বছরের ব্যর্থতাগুলোর দিকে পিছন ফিরে তাকাতে চান না।

সন্ত্রাসবাদ, সাইবার হামলা, ফেসবুকের ওপর বিভিন্ন রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ, লাইভ প্রযুক্তির ব্যর্থতা সহ বিভিন্ন ব্যর্থতা এবং ভুল সিদ্ধান্ত গত বছর এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটিকে অনেকটাই ইমেজ সংকটে ফেলে দিয়েছিল। কিন্তু ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী অতীতের ব্যর্থতাগুলো ঝেড়ে ফেলে নতুন বছরের চ্যালেঞ্জের অংশ হিসেবে ফেসবুক নিয়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন। চলুন এক নজরে দেখে নেয়া যাক, ফেসবুক নিয়ে এ বছর মার্ক জাকারবার্গের পরিকল্পনাগুলো।

বিশ্বের উদ্বেগ এবং বিভেদ দূরীকরণে কাজ করা

সম্প্রতি ফেসবুকের এক পোস্টে মার্ক জাকারবার্গ লিখেছেন, বিশ্বে উদ্বেগ এবং বিভেদ এর পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে এবং তিনি ফেসবুক ব্যবহার করে তা কমাতে সাহায্য করতে চান।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ফেসবুককে সামাজিক উদ্বেগ এবং বিভেদ তৈরির জন্য গত বছর অভিযুক্ত করা হয়েছে। এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটিতে কালো সম্প্রদায়, স্প্যানিশ স্পিকার এবং অন্যান্য গ্রুপ নিয়ে বৈষম্যমূলক বিজ্ঞাপন অনুমোদন দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল। এই ওয়েবসাইটটিতে মূলত তার ব্যবহারকারীদের  চিন্তাধারার ব্যাপক প্রতিফলন ঘটে এবং সারা বিশ্বে সম্প্রচারিত এই সাইটটিতে প্রায়ই নেতিবাচক খবর প্রচার বা মানুষের জীবনযাপনের অবিশ্বাস্য ছবি প্রতিফলন ঘটানোর অভিযোগ উঠে।

আর এই কারণেই এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটিকে ‘সমাজ বিচ্ছিন্নতা’ এর দায়ে দীর্ঘস্থায়ী সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। এই নেতিবাচক মনোভাব থেকে ফেসবুককে মুক্ত করা মোটেও সহজ হবে না। এর জন্য ফেসবুকের নিউজ ফিড এর কাজ নিয়ে সম্পূর্ণরূপে পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন হতে পারে।

নিজ ব্যবসায়িক স্বার্থের চেয়ে রাষ্ট্রের স্বার্থকে প্রাধান্য দিবে

ফেসবুক তার স্বার্থকেই সবচেয়ে বেশি প্রাধাণ্য দেয় বলে অভিযোগ করা হয়। স্বার্থ হাসিল করতে প্রভাব খাটাতে পিছপা হয় না কিন্তু খারাপ কিছু ঘটলে তার দায়িত্ব নিতে চায় না। ফেসবুক তাদের ওয়েবসাইট ব্যবহার করে অর্থ উপার্জন করে, এমনকি এমন কাজ করে যা কিনা ক্ষতিকারক বা অবৈধ এবং মনে করা হয় যে, তাদের এ সমস্ত কাজ না করার জন্য দায়বদ্ধ থাকা উচিত।

একটি দেশ যখন কোনো ভুল করে তখন সরকারকে তার দ্বায় স্বীকার করতে হয়। তাই জাকারবার্গকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, দুই বিলিয়ন ব্যবহারকারী সমৃদ্ধ এই শক্তিশালী ওয়েবসাইটটি যা সমাজের মতো একই ভাবে কাজ করে, তার ব্যবহারকে দায়বদ্ধ করা উচিত। কেননা ব্যবহারকারীরা তাদের ডেটা ট্যাক্স পরিশোধ করছে।

একটি স্বচ্ছ নীতিমালা প্রকাশ করবে

ফেসবুকে মতামত দেয়া, ফটো এবং ভিডিও শেয়ার করার মতো অপশনগুলোকে আরো নিয়মের মধ্যে আনতে জাকারবার্গকে একটি স্বচ্ছ নীতিমালা প্রকাশ করতে হবে। যদিও বর্তমানে তাদের একটি নীতিমালা ওয়েবসাইটে বর্ণিত আছে, কিন্তু কিভাবে তা প্রয়োগ করতে হয় তা প্রায়ই পরিষ্কার নয়।

এই নীতিমালাগুলো প্রয়োগ করার জন্য একটি মডারেটরদের দলকে নিয়োগ করে ফেসবুক। কিন্তু তাদের নিজস্ব গোপন কিছু নীতিমালা রয়েছে, যার মধ্যে কিছু কিছু গত বছর লিক হয়ে গিয়েছিল। তাতে দেখা যায় যে, ফেসবুক মনে করে কেউ যখন কোনো আপত্তিকর পোষ্ট দেখেন যা তাদের নিজেদের মতামতগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত নয়, তার মানে এই নয় যে এটি গ্রহণ করা উচিত নয়।

কিন্তু যখন একটি পোস্ট, মন্তব্য, গ্রুপ বা ঘটনা শারীরিক বা মানসিকভাবে ক্ষতিকর বলে মনে হবে তখন সেটি পরিষ্কারভাবে মুছে ফেলা উচিত।

বর্তমান মর্ডারেট ব্যবস্থাটি ত্রুটিযুক্ত বলে মনে করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী পোস্ট অব্যাহত থাকে, তবে সাদা মানুষদের সম্পর্কে বৈষম্যমূলক পোস্টগুলো অবিলম্বে নষ্ট করা হয়।

ব্যবহারকারীদের সঙ্গে গ্রাহকদের ন্যায় আচরণ করা

মানুষ অবশেষে বুঝতে শুরু করেছে যে, ফেসবুকের সঙ্গে তাদের সম্পর্কটি একতরফা এবং তারা বিনামূল্যে অনেক মূল্যবান তথ্য ফেসবুককে দিয়ে দিয়েছেন।

তবে যদি জড়িত হওয়ার জন্য কোনো একটি পুরস্কার বা আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করা হয় তবে সম্ভবত ফেসবুক আরো ব্যবহারকারী লাভ করবে, বা আরো বেশি মানুষ ফেসবুকে যোগদান করবে। জাকারবার্গ তার নববর্ষের পরবর্তী সময়ে ক্রিপ্টোকায়েন্সি উত্থান নিয়ে কথা বলেছেন। পুরস্কার হিসেবে কি তাহলে জুককয়েন আসতে যাচ্ছে!

বিজ্ঞাপন প্রক্রিয়াকে আরো স্বচ্ছ করা হবে

ফেসবুকের সুনির্দিষ্ট বিজ্ঞাপন নীতিমালা বর্তমানে বিতর্কের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এটি যেহেতু লগইন করা ব্যবহারকারীরা ডিভাইসে কী দেখছে তা ট্র্যাক করতে পারে তাই ততক্ষণ একটি বিজ্ঞাপনটি দেখাতে থাকে যতক্ষণ না লগআউট করা হয়।

কিন্তু যদি ব্যবহারকারীদের হাতে আরো ভালো নিয়ন্ত্রণ থাকত তবে বিজ্ঞাপনগুলো আরো গ্রহণযোগ্য হতে পারত। একটি টিক বাক্স অপশন সাহায্য করতে পারে যে, তারা কোন বিজ্ঞাপনটি দেখতে চান এবং কোনো বিজ্ঞাপনটি দেখতে চান না। ফেসবুক সম্ভবত সে পথেই হাঁটতে যাচ্ছে।

তথ্যসূত্র: টেলিগ্রাফ



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ জানুয়ারি ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়