বই পড়ে সময় কাটছে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের
বাম থেকে.. অ্যাডভোকেট মোঃ হুমায়ন কবির, ব্যারিস্টার তাহসিনা তাসনিম মৃদু, ব্যারিস্টার সানজিদ সিদ্দিকী ও অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান
করোনার কারণে সুপ্রিম কোর্টসহ সারাদেশের আদালতগুলোতে সাধারণ ছুটি চলছে। ফলে বিচার কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। অনির্ধারিত এই ‘অবকাশকে’ নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধির কাজে লাগাচ্ছেন সুপ্রিম কোর্টের ব্যস্ত আইনজীবীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারাদেশে ৫০ হাজারের বেশি আইনজীবী রয়েছেন। এরমধ্যে সুপ্রিম কোর্টে নিয়মিত আইন পেশায় আছেন পাঁচ হাজারেরও বেশি আইনজীবী। এই ছুটিতে তাদের সময় কাটছে আইনের বই, দেশ-বিদেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলায় দেওয়া রায় পড়ে। পাশাপাশি পরিবারকে সময় দিচ্ছেন তারা।
অ্যাডভোকেট মো. হুমায়ন কবির। শিক্ষা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা সংক্রান্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রায় এসেছে তার হাত ধরে। সুপ্রিম কোর্টের এ আইনজীবী শিক্ষা সংক্রান্ত আইনের ওপর বিভিন্ন বইও লিখেছেন।
করোনার দিনগুলোতে কী করছেন জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট মো. হুমায়ন কবির বলেন, হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকে ইতিমধ্যেই দুটি বইয়ের এডিটিং শেষ করেছি। একটি হলো রুলিং অন এডুকেশনাল ম্যানেজমেন্টের দ্বিতীয় পর্ব, অন্যটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিধি দ্বিতীয় পর্ব। বই দুটির এডিটিং করতে অনেক সময় দিতে হয়েছে। আইনের বইতো পড়ছিই। সত্যজিৎ রায়ের বাংলা ছবিগুলো দেখছি। পরিবারকে সময় দিচ্ছি।
এ সময় সবাইকে ঘরে থাকার ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন তিনি।
ব্যারিস্টার সানজিদ সিদ্দিকী। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলায় আইনি লড়াই করে সুনাম কুড়িয়েছেন।
দিন কীভাবে কাটছে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের এ আইনজীবী বলেন, আইনের ওপর বিভিন্ন বই পড়ছি। আর্টিকেল লিখছি। আমাদের চেম্বারের যেসব রুল শুনানির জন্য আছে, আবার দেওয়ানি মামলা শুনানির জন্য আছে সেগুলোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। সাবমিশনের জন্য আইনগত দিকগুলো খুঁজে বের করছি। কিছু মামলার ড্রাফটিং অসম্পূর্ণ ছিলো, তা শেষ করেছি।
সানজিদ বলেন, আমাদের চেম্বারের সব অ্যাসোসিয়েটস মিলে সপ্তাহে তিনদিন জুমে মিটিং করছি। ব্যস্ততার কারণে তো ফ্যামিলিকে বেশি সময় দিতে পারতাম না। এখন ফ্যামিলিকেও সময় দিচ্ছি।
ছুটির এ সময়টায় প্রত্যেকে নিজের জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়িয়ে নিতে পারি বলে পরামর্শ দেন তিনি।
অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান। জনস্বর্থে বিভিন্ন আলোচিত মামলায় আইনি লড়াই করে দেশব্যাপী পরিচিতি পেয়েছেন ও সুনাম কুড়িয়েছেন।
হোম কোয়ারেন্টাইনের দিনগুলো নিয়ে ইশরাত হাসান বলেন, ভীষণ ব্যস্ত জীবনে বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ পেয়েছি। কোর্ট যখন বন্ধ দিতো তখনও কাজ করতাম। তাই, পরিবারকে তেমন সময় দিতে পারতাম না। এখন পরিবারকে, বিশেষ করে আমার সন্তান উমাইরকে সময় দিতে পারছি। পরিবারের সবাই মিলে কাজ করা, রান্না করা, একসঙ্গে খাওয়া, গল্প করছি। মনে হয় যেন আবার ছোটবেলা ফিরে পেয়েছি। আমার আগে প্রচুর গল্পের বই পড়তে ভালো লাগতো। এখন সেই ইচ্ছে পূরণ করছি।
ইশরাত বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে আমার উপলব্ধি হয়েছে, সুস্থ থাকাই আসল। পারিবারিক বন্ধন সবচেয়ে জরুরি।
পরামর্শ দিয়ে এ অ্যাডভোকেট বলেন, যথাসম্ভব দান করুন। অন্যদের অবস্থার খোঁজ নিন। বাইরের জিনিসপত্র বাসার ভেতরে নেওয়ার আগে সতর্ক থাকুন। মাস্ক ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
ফৌজদারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলায় আইনি লড়াই করে সুনাম অর্জন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তাহসিনা তাসনিম মৃদু।
ছুটির দিনগুলোর বিষয়ে তিনি বলেন, আগেতো প্রতিদিন কোর্ট-চেম্বারে করে, ক্লায়েন্টদের সঙ্গে কথা বলে সময় কেটে যেতো। ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরতাম। ক্লান্তির দিনগুলোতে মাঝে মাঝে ভাবতাম কবে অবকাশ পাবো। কিন্তু এখন অনিশ্চিত এই অবকাশ আর এনজয় করতে পারছি না। হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকে আমার উপলব্ধি হয়েছে জীবনের সৌন্দর্য কাজের মধ্যে নিহিত। কিছু পজিটিভ দিকও আছে। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছি। আইনের অনেক বই,বিভিন্ন লেখকের বই পড়ছি।
এই অফুরন্ত অবসরে আমরা যেন আরাম প্রিয় না হয়ে যাই, তাই বসে না থেকে সময়কে কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন তিনি।
ঢাকা/মেহেদী/জেডআর
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন