ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

বগুড়ার কৃষকের মুখে হাসি নেই

একে আজাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:০১, ২৮ মে ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বগুড়ার কৃষকের মুখে হাসি নেই

বগুড়া প্রতিনিধি: বগুড়ায় এবার ধানের ভালো ফলন পেয়েও কৃষকের মুখে হাসি নেই। বাজারে ধান ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় কৃষক আরও দেনাদার হয়ে পড়ছে।

জেলার শাজাহানপুর উপজেলার মাড়িয়া গ্রামের কৃষক আমিন মিয়া তার চাষবাসের হিসেবে জানালেন, এবার প্রতি বিঘা বোরো চাষে ১৩ হাজার ৫০ টাকা খরচ হয়েছে। তিনি এবার ৪ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছেন। তার মতে, একবিঘা জমিতে বীজ বাবদ ৪৫০ টাকা, হালচাষ ৮০০ টাকা, চারা লাগানো ৮০০ টাকা, সেচ খরচ বাবদ ১২০০ টাকা, সার বাবদ ৪০০০ টাকা, কীটনাশক বাবদ ২০০০ টাকা, পরিচর্যা বাবদ ১০০০ টাকা ও ধান কাটা বাবদ ২৮০০ টাকা খরচ হয়েছে।

তিনি বলেন, তবে এবার উৎপাদন ভালো হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রতি বিঘায় ২২ থেকে ২৩ মন ধান উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু ৪৫০-৫০০ টাকা মণ দরে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে করে প্রতি বিঘায় লোকশান গুনতে হচ্ছে দুই থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত।

জেলার বন্যা কবলিত এলাকা হিসাবে খ্যাত সারিয়াকান্দির জোরগাছা গ্রামের দরিদ্র কৃষক মমিনুল হক বলেন, ‘ভেবেছিলাম ধান বিক্রির টাকায় রমজান মাসটা ভালোভাবে কাটবে, ঈদের আনন্দটাও ভাল হবে। কিন্তু আমার সেই আনন্দ এখন ধানের চিটায় পরিণত হয়েছে।’

ওই গ্রামের আরেক কৃষক মহসিন আলী বললেন, ‘এবার পরিকল্পনা ছিল-ধান বিক্রি করে মেয়ে-জামাইয়ের বাড়ি বাজার করে দিব। তাদের নতুন জামা-কাপড় কিনে দিব। নিজেরাও ভালোভাবে ঈদ করব। কিন্তু এখন বাজারে ধান বিক্রি করতে গিয়ে দেখি ৫মন ধান বেচে একটি জামা কেনাও সম্ভব নয়। উল্টো নতুন করে দেনার বোঝা ঘাড়ে এসে পড়ছে।’

জেলা কৃষি অফিস বলছে, এবার বগুড়ার ১২ উপজেলায় এক লাখ ৮৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে চাষবাদ হয়েছে। আর ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬০লাখ ৫৪ হাজার টন। কিন্তু ফলন ভালো হওয়ায় এই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। তাই বাজারে ধানের আমদানি বেশী হওয়ায় এমন প্রভাব পড়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়ার উপপরিচালক নিখিল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, বর্তমানে আবহাওয়া ভালো থাকায় এবং কৃষি অফিসের সঠিক পরামর্শ ও কৃষকদের কঠোর পরিশ্রমে এবার জেলায় বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে। বাজার কম, এটা সাময়িক। তবে কৃষকরা যেন ধান চাষে আগ্রহ না হারায় এজন্য সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।

শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফুয়ারা খাতুন জানান, ধানের বাজার স্বাভাবিক রাখতে প্রতি উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায় থেকে সরকারের নির্ধারিত ২৬ টাকা কেজি দরে ধান কেনা শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন। সাময়িকভাবে ধানের দর কমলেও দ্রুত সময়ের মধ্যে বাজারে তার প্রভাব পড়তে শুরু করবে।

তবে কৃষকদের ভাষ্য, সরকার যদি প্রতিবছর নিবন্ধিত সকল কৃষক থেকে এভাবে ধান কিনে নেন তাহলে কৃষকদের আর কখনও ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হতে হবে না।




রাইজিংবিডি/ বগুড়া/২৮ মে ২০১৯/একে আজাদ/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়