ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার খবরে হতভম্ব হয়ে পড়ে টুঙ্গিপাড়াবাসী

বাদল সাহা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৩৬, ১৪ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
 বঙ্গবন্ধুকে হত্যার খবরে হতভম্ব হয়ে পড়ে টুঙ্গিপাড়াবাসী

বাদল সাহা, গোপালগঞ্জ:  দিনটি ছিল শুক্রবার। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট সকালে ওয়্যারলেসের মাধ্য প্রথমে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার খবর জানানো হয়। বারবার ওয়্যারলেসে বলা হয় স্বৈরশাসক সরকারের পতন হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার খবর টুঙ্গিপাড়ায় ছড়িয়ে পড়লে হতভম্ব হয়ে পড়ে টুঙ্গিপাড়াবাসী। কেউ যেন বিশ্বাসই করছিলেন না। রাইজিংবিডির প্রতিবেদকের কাছে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন বঙ্গবন্ধুর দাফনকারী কয়েকজন। বঙ্গবন্ধুকে যে ১৮ জন দাফন করছেন তার মধ্যে অন্যতম কাজী ইদ্রিস আলী ও মো. আবু তাহের (৬৫)।

টুঙ্গিপাড়া ছিল অপরিচিত একটি গ্রাম। বনেদী পরিবারের বসবাস ছিল হাতে গোনা মাত্র দু’একটি। তার মধ্যে একটি বনেদী পরিবারের নাম শেখ পরিবার। এই পরিবারের উত্তরসূরী শেখ হামিদ। শেখ হামিদের একমাত্র পুত্র শেখ লুৎফর রহমান। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ শেখ লুৎফর রহমান ও তার স্ত্রী শেখ সায়রা খাতুনের ঘরে জন্ম নেয় একটি শিশু। বাবা-মা নাম রাখেন খোকা। আদরের এই খোকাই হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, পরবর্তিতে জাতির পিতা এবং সমগ্র বাঙালির প্রিয় মানুষ ও মুক্তিদাতা।

সেই থেকে গোপালগঞ্জ একটি ঐতিহাসিক জনপদ। রাজনৈতিক গুরুত্বে ও লোকজ- সাংস্কৃতিক সমাবেশে গোপালগঞ্জ হচ্ছে ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ন স্থান। মধুমতি বিধৌত এ জনপদের রয়েছে সুপ্রাচীন ঐতিহ্য। গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া এখন ইতিহাসের এক অম্লান পাদপিঠ। এই টুঙ্গিপাড়ায় জম্মগ্রহণ করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জম্মস্থানও টুঙ্গিপাড়ায়। এখানে রয়েছে জাতির পিতার সমাধী সৌধ ও কমপ্লেক্স। প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী আসেন এখানে। ঘুরে ঘুরে দেখেন জাতির পিতার সমাধি ও আশপাশ এলাকা।

১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে স্বাধীনতা যুদ্ধ করে বীর বাঙালি। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে পাক হানাদারের কাছ থেকে লাল-সবুজের পতাকা ছিনিয়ে আনে। যুদ্ধ বিধস্ত বাংলাদেশে যখন পূনর্গঠনের কাজ শুরু করেন ঠিক সে সময়ে ’৭৫ এর ১৫ আগস্টে জাতির পিতাকে স্বপরিবারে হত্যা করে বিপথগামী একদল সেনা সদস্য। এরপর তার লাশ নিয়ে আসা হয় গোপলগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। দাফন করা হয় মা-বাবার কবরের পাশে।

কাজী ইদ্রিস আলী জানান, একটি হেলিকাপ্টারে করে বঙ্গবন্ধুর লাশ নিয়ে আসে সেনাবাহিনী। এরপর থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা দাফনের জন্য তাকেসহ ১৮ জনকে নিয়ে যান। পরে হেলিকাপ্টার থেকে খোলা মাঠে (বর্তমানে সমাধী সৌধ কমপ্লেক্স) বঙ্গবন্ধুর লাশবাহী কফিন নামানো হয়। এসময় তারা তখনি লাশ দাফনের কথা বলেন। তখন কফির খোলার জন্য মিস্ত্রি আব্দুল হামিদকে ডাকা হলেও তিনি বাড়িতে না থাকায় দায়িত্ব পরে তার ছেলে শেখ আইয়ুব আলীর উপর। আইয়ুব আলী এসে কফিন খোলেন। কফিনে বঙ্গবন্ধুর লাশ ছিল সাদা কপড় দিয়ে ঢাকা। কাপড় সড়িয়ে দেখা যায় চশমাটি ছিল ডান পাশে ভাঙ্গা অবস্থায়। গুলিতে বুক ঝাঁঝরা হয়েছিল। পাশের একটি পুকুর থেকে পানি এনে রক্ত ধোয়া হয়।

দ্রুত দাফন করা কথা বললেও গোসল না করিয়ে ও জানায় না পরিয়ে দাফন করতে অস্বীকার করেন মৌলভী সাহেব। তখন তারা দ্রুত করার কথা বলেন। পরে পাশের একটি দোকান থেকে ৫৭০ সাবান এনে গোসল করানো হয়। এরপর রিলিফের একটি সাদা কাপড় দিয়ে পড়ানো হয় কাফন। বঙ্গবন্ধুর জানাজাতে অংশ নেন মাত্র ৩০ জন। বঙ্গবন্ধুকে যখন হত্যা করা হয় ও দাফন করা হয় তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছিলেন বিদেশে। এখনো মনে পড়লে কষ্ট পাই।

আবু তাহের বলেন, বঙ্গবন্ধুকে আনার পর টুঙ্গিপাড়ার পরিস্থিতি ছিল থমথমে। বঙ্গবন্ধুর লাশ আসার পর সেনা সদস্যরা জানাজা ছাড়াই লাশ দাফন করতে বলেছিলেন। কিন্তু মৌলভী সাহেব রাজী হননি। অনেক প্রভাবশালী লোকজন ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল। পুরো এলাকায় আতংক ও ভীতি ছড়িয়ে পরে।

শেখ পরিবারের সদস্য ও টুঙ্গিপাড়ার পৌরসভার মেয়র শেখ আহম্মদ হোসেন মির্জা জানান, বঙ্গবন্ধু সব সময় ছিলেন হাস্যোজ্জ্বল। পরের কষ্ট সহ্য করতে পারতেন না। অনেক সময় আমামে মারধর করতেন। আমি বঙ্গবন্ধুর মায়ের কাছে নালিশ দিলে বলতেন মা আমি তোমার ভাইকে মারি না। আমি আমার শ্যালককে মারছি। এমন ব্যক্তিকে হত্যা করা হল যা মেনে নেয়া যায় না। একজন দেশ প্রেমিককে, দেশের স্থপতিকে হত্যা করা হয়েছে। এখনো তার পলাতক খুনিদের দেশে এনে বিচারের রায় কার্যকর করা হয়নি। দ্রুত পলাতক খুনিদের দেশে এনে রায় কার্যকরের দাবি জানান তিনি।

রাইজিংবিডি/গোপালগঞ্জ/১৫ আগস্ট ২০১৯/বাদল সাহা/এনএ/নাসিম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়