ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বন্ধুত্বে ১০ সত্য

শাহিদুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:২০, ৪ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বন্ধুত্বে ১০ সত্য

প্রতীকী ছবি

শাহিদুল ইসলাম : বন্ধুত্ব হচ্ছে সম্পদ। এই প্রবাদ বাক্যটি বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে কতটা যুক্তিযুক্ত তা গবেষণার মাধ্যমে দেখিয়েছেন একদল গবেষক। হ্যাফিংটন পোস্ট অবলম্বনে এই লেখায় থাকছে সেই গবেষণার ফলাফল।

নারী-পুরুষে বন্ধুত্ব হতে পারে না

আপনার বিপরীত লিঙ্গের বন্ধু রয়েছে? তাহলে এই লেখাটি পড়ে সম্পর্কের গভীরতা নিয়ে আরো একবার ভাবতে পারেন। উইন্সকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক তাদের গবেষণায় জানিছেন, নারী এবং পুরুষের মধ্যে নিরপেক্ষ বন্ধুত্ব বলা হলেও আকর্ষণ কিংবা যৌন চাহিদা থেকে তা রক্ষা করা কঠিন। আটাশি জোড়া বন্ধুর ওপর গবেষণা চালিয়ে তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন, পুরুষেরা তাদের নারী সঙ্গীর প্রতি শারীরিকভাবে আকর্ষণবোধ করে এবং তাদের সম্পর্ককে সবসময় অতিরঞ্জিত করে প্রকাশ করে।

প্রাণীদেরও বন্ধু থাকে

কোনো বিজ্ঞানীর কাছে যাওয়ার দরকার পড়ে না, ইউটিউবে অসংখ্য ভিডিও দেখলে এটা বোঝা যায় যে, বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীদের মধ্যেও বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। বিভিন্ন গবেষণায়ও এটা প্রমাণিত যে শিম্পাঞ্জী, বেবুন, ঘোড়া, হায়েনা, হাতি, বাদুর এবং ডলফিনের মধ্যে পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। কেনিয়ার একটি কচ্ছপ এবং গন্ডারের মধ্যে বন্ধুত্ব এর প্রমাণ স্বরূপ বলা যায়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, প্রাণীদের মধ্যে কেন এমন বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে? এর সহজ উত্তর হচ্ছে বন্ধুত্ব গড়ে উঠলে শরীর, মন ভালো থাকার পাশাপাশি সফলতাও আসে।

বন্ধুরা সহনাভূতি জাগ্রত করে

অন্যের মতো করে নিজেকে ভাবা মানুষের একটি স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক ২২ জন বৈদুত্যিক শকের হুমকিতে থাকা মানুষের মস্তিস্কের স্ক্যান নিয়ে গবেষণা করে দেখিয়েছেন,  হুমকির ভয় পরিচিত এবং অপরিচিত মানুষের মধ্যে ভিন্ন অনুভূতি জাগ্রত করে। গবেষক জেমস কোন বলেন, ‘এটা কোনো তুলনা বা কাব্য নয়, হুমকিতে থাকা মানুষটি যদি বন্ধু হয় তবে আমরাও হুমকি অনুভব করি।’ জেমস এই অনুভূতিকে টিকে থাকার অনুভূতির সঙ্গে তুলনা করেন, যা দীর্ঘদিন একসঙ্গে থাকার কারণে গড়ে ওঠে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধুত্ব ধরে রাখতে সাহায্য করে

১৯৯৩ সালে রবিন ডানবার নামের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নৃতাত্ত্বিক গবেষণা করে দেখিয়েছিলেন, একজন মানুষ একসঙ্গে ১৫০ জনের সঙ্গে তাৎপর্যপূর্ণ সম্পর্ক ধরে রাখতে পারে। ডানবার যখন এই গবেষণা করেছিলেন তখনও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আবিষ্কৃত হয়নি। তবে তিনি বলেছিলেন, প্রযুক্তি মানুষের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বাড়াতে সাহায্য করে। দেড় দশক আগে বলা ডানবারের কথার সত্যতা পেয়েছে যুক্তরাজ্যের শেফিল্ড হালাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। এই গবেষক দল বলেন, যদিও অধিকাংশ সম্পর্ক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বাইরে গড়ে ওঠে তবে সময় এবং দূরত্বের কারণে সম্পর্কের ভাঙন ঠেকাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সাহায্য করে।

বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে আমরা প্রতিদানের চেষ্টা করি

কেউ যদি আমাকে ভালো বন্ধু হিসেবে ভাবতে শুরু করে তবে আমরাও তার প্রতি একই রকম ভাবনা ভাবতে শুরু করি। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মাইস্পেসে গবেষণা চালিয়ে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন- বন্ধু আমাদের যতটুকু মূল্যায়ন করে আমরাও ঠিক ততটুকু মূল্যায়ন করি। গবেষকরা আরো বলেন, আমরা যখন ইর্ষা করি তখন তা আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কে প্রভাব বিস্তার করে।

বন্ধুদের সঙ্গে কাজে অনেক বেশি সফলতা আসে

বন্ধুত্ব এবং কাজ হাত ধরাধরি করে চলে। এক গবেষণায় দেখা যায়, কর্মক্ষেত্রে বন্ধুত্ব আপনাকে সুখী করার পাশাপাশি কাজ খুঁজে পেতে সাহায্য করে। এছাড়া কাজে সফলতা আসা এবং কাজ অনেক বেশি উৎপাদনমুখী হয় বন্ধুত্বের কারণে। এক জরিপে একদল মানুষ স্বীকার করেছেন যে, কর্মক্ষেত্রের বন্ধু তাদের অন্য বন্ধুর থেকে এমনকি স্ত্রীর থেকেও তাদের বেশি বোঝে। তবে কর্মক্ষেত্রে বন্ধুত্ব করার ব্যাপারে গবেষকেরা সতর্ক হওয়ার পরমর্শ দিয়েছেন। কারণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম লিঙ্কডইনের এক জরিপে দেখা যায়, ৬৮ শতাংশ লোক পদোন্নতির জন্য তাদের বন্ধুত্ব বিসর্জন দিতে দ্বিধা করে না।

কেউ আসে কেউ যায়

নৃতাত্ত্বিক রবিন ডানবার তার গবেষণায় দেখিয়েছেন, পরিবার বা বন্ধুত্বের মাঝে কিভাবে একজন অন্তরের কাছাকাছি আসলে অন্যকেউ দূরে সরে যায়। এছাড়া তিনি বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য সাক্ষাৎ হওয়াটাকেও জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, আপনি যখন কাউকে কম দেখবেন তখন তার প্রতি ধীরে ধীরে আপনার আবেগ কমতে থাকবে।

বন্ধুত্ব টিকে থাকবে, যদি…

আপনার বন্ধুত্ব টিকে থাকবে যদি বন্ধু বিরক্ত হতে পারে এমন কারণগুলো বুঝে আপনি সেই আচরণগুলো না করেন। কানাডার উইলফ্রিড লরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. চ্যারিটি ফ্রিসেন এক গবেষণায় দেখিয়েছেন, পারস্পারিক সন্দেহ, অবিশ্বাস, লজ্জা, এবং ভুলে যাওয়া বন্ধুত্বের মাঝে বিরক্তির কারণ হয়ে দাড়ায়।

নারী-পুরুষ ভিন্নধর্মী

২০১২ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের একদল গবেষক দেখিয়েছিলেন, পুরুষ থেকে নারীর ক্ষেত্রে বন্ধুত্বটা বেশি প্রয়োজন। আর পুরুষের ক্ষেত্রে পারিবারিক বন্ধনটা বেশি প্রয়োজন। এছাড়া ১৯৫৮ সালে সাড়ে ৬ হাজার ব্রিটিশ নাগরিকদের মধ্যে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, বিয়ে পুরুষের মানসিক প্রশান্তির জন্য বেশি প্রয়োজন। এবং তারা পারিবারিক বন্ধনের প্রতি বেশি জোর দেয়। বিপরীতে দেখা যায়, নারীরা বিয়ের পর বন্ধুদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

বন্ধুত্ব স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী

নারী-পুরুষ যাই হোন না কেন বন্ধুত্ব স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। দেখা যায় যাদের বন্ধুত্বের পরিধি বেশি তারা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি চিন্তামুক্ত জীবনযাপন করে এবং তাদের দীর্ঘদিন বাঁচেও। বন্ধুরা আপনার ভালো কাজকে উৎসাহিত করবে, মানসিক হতাশা কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করবে। বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জুলিয়ান হোল্ট বলেন, স্থূলতা বা ব্যায়াম না করার থেকে স্বাস্থ্যের জন্য বেশি ক্ষতিকর হচ্ছে কম বন্ধু থাকা।

তথ্যসূত্র : হাফিংটন পোস্ট

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৪ আগস্ট ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়