ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বন্যায় সিলেট অঞ্চলে দুর্ভোগ বাড়ছে

আব্দুল্লাহ আল নোমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১০, ১৫ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বন্যায় সিলেট অঞ্চলে দুর্ভোগ বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট : সিলেট অঞ্চলে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বিভিন্নস্থানে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। সড়ক তলিয়ে যাওয়া গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বিভিন্ন স্থানে শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। দুর্ভোগে পড়েছেন পানিবন্দি মানুষ।

সুরমার পানি স্থিতিশীল থাকলেও বেড়েই চলছে কুশিয়ারার পানি। সোমবার সকাল থেকে লাগাতার বৃষ্টিতে নতুন করে পানি বাড়ার শঙ্কাও রয়েছে। এ ছাড়া সুরমার পানি উপচে সিলেট শহরের নদী তীরের নিম্নাঞ্চলের আরো কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। শুক্রবার রাত থেকে উপশহরসহ বেশ কিছু এলাকায় পানি উঠেছিল; তাও স্থিতিশীল রয়েছে। পানি উঠায় গোয়াইনঘাট, কানাইঘাটসহ বিভিন্ন উপজেলা সদরের সঙ্গে জেলা সদরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়া অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ আছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)-এর কন্ট্রোল রুম সূত্র জানায়, সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় আমলশীদ পয়েন্টে কুশিয়ারার পানি বিপদসীমার ১৪৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সময়ে শেওলা পয়েন্টে ৯৪ সেন্টিমিটার এবং শেরপুর পয়েন্টে ৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমার পানি বিপদসীমার ১১২ সেন্টিমিটার ও সিলেট পয়েন্টে ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং জৈন্তাপুরের সারী নদীর পানি সারী পয়েন্টে ২৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

আবহাওয়া অফিস বলছে, সিলেটে বৃষ্টিপাত কমলেও আগামী দুই দিনে ভারতের মেঘালয় ও আসামে প্রবল বর্ষণের আশঙ্কা রয়েছে। ফলে পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকছে। এতে পানি সহসাই কমবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পানি বাড়ায় বন্ধ রয়েছে জাফলং, বিছানাকান্দি, ভোলাগঞ্জসহ সবকটি পাথর কোয়ারির পাথর উত্তোলন, ফলে বেকার হয়ে পড়েছেন লক্ষাধিক শ্রমিক।

বন্যা কবলিত এলাকায় পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। বানভাসি মানুষের মাঝে বাড়ছে হাহাকারও। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে তা পর্যাপ্ত নয় বলে দাবি করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এ ছাড়া বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকেও ত্রাণ বিতরণ তৎপরতা শুরু হয়েছে।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ জামাল উদ্দিনসহ কয়েকটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা জানান, বন্যাদুর্গত লোকজন তাদের বাড়িতে ভিড় করছেন। পুরো উপজেলার জন্য মাত্র আট টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অপ্রতুল এই ত্রাণ কাকে রেখে কাকে দেবেন, এ নিয়ে তারা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন। বিষয়টি তারা উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছেন। একই অবস্থা গোয়াইনঘাট উপজেলায়।

তবে সিলেট জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা নুরুজ্জামান মজুমদার জানান, বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে এ পর্যন্ত ৫০০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৮ লাখ টাকা এবং দুই হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে ১০০ মেট্রিক টন চাল বিভিন্ন উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকায় বিতরণ করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও ত্রাণ বরাদ্দ করা হবে বলে জানান তিনি।

সিলেট নগরীর মিরাবাজারের শাহজালাল জামেয়ায় আশ্রয় নেয়া বন্যার্তদের মাঝে চিকিৎসা সেবা এবং ওষুধ বিতরণ করেছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন।

সোমবার দুপুরে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি টিম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৮০টি পরিবারের নারী-পুরুষ ও শিশুদের এ সেবা প্রদান করে। এ সময় সিসিকের স্বাস্থ্য শাখার কর্মকর্তা-কমচারী উপস্থিত ছিলেন।


রাইজিংবিডি/সিলেট/১৫ জুলাই ২০১৯/আব্দুল্লাহ আল নোমান/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়