ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ল্যান্ডফিল আধুনিকীকরণে প্রকল্প

বর্জ‌্য থেকে হবে বিদ্যুৎ ও জৈব সার

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২৯, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বর্জ‌্য থেকে হবে বিদ্যুৎ ও জৈব সার

আসাদ আল মাহমুদ : আমিন বাজার ল্যান্ডফিল সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণে মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে সেখানে বর্জ‌্য থেকে বিদ্যুৎ ও জৈব সার উৎপাদন হবে।

২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ‌্যে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে ঢ‌াকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮২৬ কোটি ৮০ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। এর পুরোটাই সরকার দেবে। 

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ডিএনসিসির মোট আয়াতন ১১৩.৫৯ বর্গ কিলোমিটার।  জনসংখ্যা ৫৯ লাখ ৪৩ হাজার ৩১৬ জন। আমিন বাজার বর্জ্য ডাম্পিং স্টেশনটি (ল্যান্ডফিল) ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ৫০ একর জমির ওপর নির্মাণ করা হয়। ২০০৭ সাল থেকে এতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শুরু হয়। জাপানি বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতায় নির্মিত এই প্ল্যান্টের মেয়াদকাল নির্ধারণ করা হয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু এখনো এতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা চলছে। মেয়াদ শেষ হলেও এর আয়তন বাড়ানো হয়নি। ফলে এ ল্যান্ডফিল ভরাট হয়ে আশপাশের কয়েক একর জমি ভরাট হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত  হয়েছেন স্থানীয় ভূমিমালিকরা।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ঢাকার সাভারের বালিয়াপুরে আরো ৮০ একর জমি নিয়ে আমিন বাজার ল্যান্ডফিল সম্প্রসারণ ও আধুনিকী করণ করা হবে।

প্রকল্পের কার্যক্রম :

৫০০ কোটি  টাকায় ৮০ একর ভূমি অধিগ্রহণ। ৭০ কোটি ২৬ লাখ ৬৯ হাজার টাকা ব‌্যয়ে ১০ লাখ ৮৭ হাজার ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন। ১ কোটি ২৬ লাখ ৩ হাজার টাকায় ৬৩ হাজার ৩৫০ ঘনমিটার অর্গানিক সয়েল উত্তোলন। ৩৪ কোটি ৭৩ লাখ ৪৯ হাজার টাকা ব‌্যয়ে ২ হাজার ৭০০ মিটার বাঁধ নির্মাণ। ১৯ কোটি ২৫ লাখ ৫৪ হাজার টাকায় ৩ হাজার ৬০০ মিটার রাস্তা নির্মাণ। ১৩ কোটি ২৫ লাখ ৯৭ হাজার টাকায় ৫ হাজার ৪০০ বর্গমিটার ডাম্পিং প্লাটফর্ম নির্মাণ। ৭ কোটি ৮৪ লাখ ৬৩ হাজার টাকায় ১ লাখ ৭৮ হাজার ৩২৫ বর্গমিটার এইচডিপি লাইনার নির্মাণ। ৫ কোটি ৬ লাখ ৪৪ হাজার টাকায় ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৬৫০ বর্গমিটার জিও টেক্সটাইল ক্রয়। ৫ কোটি ১৭ লাখ ১৪ হাজার টাকায় ১ লাখ ৭৮ হাজার ৩২৫ বর্গমিটার জিও গ্রিড নির্মাণ। ৩ কোটি ৭৭ লাখ ৫৭ হাজার টাকায় ৬৩ হাজার ৩৫০ ঘনমিটার লাইনার প্রটেকশন ও ক্লে লেয়ার। ৩ কোটি ৮২ লাখ ৭৩ হাজার টাকায় ১ হাজার ৫০০ মিটার লিচেট কালেকশন মেইন পাইপ ক্রয়। ২ কোটি ৮ লাখ ২০ হাজার টাকায় ৫ হাজার মিটার লিচেট কালেকশন ব্রাঞ্চ পাইপ ক্রয়। ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় ৫০টি লিচেট কালেকশন পিট ক্রয়।  ১৯ লাখ ৯৯ হাজার টাকায় ৮০টি গ্যাস ভেন্ট পাইপ ক্রয়। ৭ কোটি ৫৮ লাখ ৬ হাজার টাকায় ৭ হাজার ৩৪২ ঘনমিটার ভাঙ্গা স্টোন ক্রয়। ৫২ লাখ ২৯ লাখ টাকায় ৮টি লিচেট ট্রান্সফার পিট ক্রয়। ১১ লাখ ৩১ হাজার টাকায় ১২টি লিচেট ট্রিটমেন্ট ট্রান্সফার পাম্প ক্রয়। ৩৬ লাখ ৭ হাজার টাকায় ২ হাজার ৮৫৪ মিটার লিচেট ট্রিটমেন্ট ট্রান্সফার পাইপ ক্রয়। ১০ কোটি ২০ লাখ টাকায় দুটি টায়ার ডোজার ক্রয়। ২৪ কোটি ৯০ লাখ টাকায় তিনটি হাইড্রলিক এক্সকেভেটর ক্রয়। ৩৪ কোটি ২০ লাখ টাকায় ছয়টি বুলডোজার ক্রয়। ৫ কোটি ১০ লাখ টাকায় দুটি পে-লোডার ক্রয়। ৩ কোটি টাকায় দুটি ফায়ার ট্রেন্স ক্রয়। ২ কোটি টাকায় দুটি মিস্ট স্প্রেয়ার ক্রয়। ৮ কোটি টাকায় দুটি লং আর্ম স্কেভেটর ক্রয়। ৪ লাখ ২ হাজার টাকায় ছয়টি মনিটরিং ওয়েল, রোড লাইটিংয়ে ব্যয় হবে ৪৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। ১৭ কোটি ২৫ লাখ টাকায় ৫টি ফ্লাড লাইট/মোবাইল টাওয়ার লাইট নির্মাণ। ১৫ লাখ বর্গমিটার পোস্ট ক্লোজার (বর্তমান ল্যান্ডফিল) নির্মাণে ব্যয় ১৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। পরামর্শ নিয়োগ সার্ভে অফিস স্টোশনারি, গাড়ি, গাড়ির জ্বালানি, স্টাফদের বেতন ও উৎসব ভাতাসহ অন্যান্য ব্যয় ৩২ কোটি ৮৪ লাখ ১৩ হাজার টাকা। মোট ব্যয় ৮২৬ কোটি  ৮০ লাখ ৬৮ হাজার টাকা।

৮০ একর ভূমির বিভাজন:

৬৮ হাজার ২০০ বর্গমিটার ভূমি দৈনিক ৫০০ মেট্রিক টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন তিনটি ইনসিনারেশ প্ল‌্যান্ট পর্যায়ক্রমে স্থাপনের জন্য বরাদ্ধ রাখা হয়েছে। যার মাধ্যমে ভূমির ওপর চাপ কমানোসহ বর্জ্য পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

১৫ হাজার বর্গমিটার ভূমিতে দৈনিক ৫০ টন ধারণ ক্ষমতাৎসম্পন্ন আরডিএফ প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

১৩ হাজার ৬০০ বর্গমিটার ভূমিতে মেডিক্যাল বর্জ্য ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

১৬ হাজার বর্গমিটার ভূমিতে রিসাইকেলঅ্যাবল বর্জ্য রিসাইকেলের জন্য ফ্যাসিলিটিজ স্থাপনের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

১৮ হাজার ৭০০ বর্গমিটার ভূমি কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক আরোপিত মান অনুযায়ী কম্পোস্ট সার (জৈব সার) তৈরির জন্য কম্পোস্ট প্ল‌্যান্ট স্থাপনের নিমিত্তে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্লাস্টিক, ইলেকট্রনিকস, গ্লাস, সিরামিক, টায়ার, নির্মাণ সামগ্রী ইত্যাদি বর্জ্যের উৎপাদন ঢাকা মহানগরীতে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব বর্জ্য পোড়ানো সম্ভব নয়, বিধায় এ ধরণের বর্জ্য পুনঃচক্রায়নের (বিশেষ প্রক্রিয়ায় পরিশোধন) ব্যবস্থা করা হবে। যা সামগ্রিকভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।

ল্যান্ডফিল সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণের উদ্দেশ্য:

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায়ন তথা ইনসিনারেশনের মাধ্যমে ভূমির ওপর চাপ কমানো। বর্জ্য পরিবেশবান্ধব ও মানসম্মত উপায়ে সংগ্রহ, পরিবহন ও নির্দিষ্ট নিরাপদ স্থানে ডিসপোজালের ব্যবস্থাকরণ। বর্জ্যের কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ হ্রাসকরণ। রিসোর্স রিকভারি সুবিধা স্থাপনের মাধ্যমে ল্যান্ডফিলে বর্জ্যের পরিমাণ কমিয়ে বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করা।

ল্যান্ডফিল সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণের ফলাফল: প্রকল্প শেষে মাথাপিছু বর্জ্য ডিসপোজালের হার বৃদ্ধি ও সংশ্লিষ্ট রোগের মাত্রা হ্রাস পাবে। ল্যান্ডফিলের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি ও দুর্গন্ধের হার হ্রাস পাবে। ল্যান্ডফিলে লিচেট ও মিথেন গ্যাসের হার হ্রাস পাবে। মাটি, পানি ও বায়ুদূষণের মাত্রা হ্রাস পাবে। ঢাকা শহরকে অধিকতর পরিচ্ছন্ন ও বাসযোগ্য করে গড়ে তোলা হবে।

ল্যান্ডফিল সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণের প্রকল্প গ্রহণের যৌক্তিকতা:

বর্জ্য ডিসপোজালের জন্য বর্তমানে বছরে প্রায় ১০ একর জমি প্রয়োজন হয়। বর্জ‌্য বৃদ্ধির কারণে প্রতিবছর এ পরিমাণ বাড়বে। এভাবে চলতে থাকলে অনেক ভূমির প্রয়োজন হবে। দুষ্প্রাপ্য ভূমির ওপর চাপ কমাতে না পারলে সমস্যা আরো প্রকট হবে।

সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় দেখা গেছে, যদি নতুন ল্যান্ডফিল চালুর এক বছর পর ইনসিনারেশন প্ল‌্যান্ট চালু করা সম্ভব হয় তবে ল্যান্ডফিলের লাইফ বাড়ানো সম্ভব।

শুধু ইনসিনারেশন চালু হলে এক বছরের ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ল্যান্ডফিলের লাইফ তিন গুন বৃদ্ধি করা সম্ভব। যদি ইনসিনারেশন ও রিসোর্স রিকভারি সুবিধা চালু করা যায় তাহলে এর পরিমাণ ৯ গুণ বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। এটি করা হলে ভূমির ওপর চাপ কমানো সম্ভব।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিকীরণের মাধ্যমে ভূমির ওপর চাপ কমাতে হবে। পরিবেশবান্ধব ও মানসম্মত উপায়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে হবে।

তিনি বলেন, প্রকল্পের আওতায় ৬৮ হাজার ২০০ বর্গমিটার জমিতে দৈনিক ৫০০ মেট্রিক টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন তিনটি প্ল্যান্ট বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যার মাধ্যমে বর্জ্য পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। এছাড়া, ১৩ হাজার ৬০০ বর্গমিটার জমি মেডিক্যাল বর্জ্য ও ১৬ হাজার বর্গমিটার জমি বর্জ্য রিসাইকেল ফ্যাসিলিটিজ স্থাপনের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, শুধু ইনসিনারেশন চালু হলে এক বছরের ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ল্যান্ডফিলের লাইফ ৩ গুণ বৃদ্ধি করা যাবে। বিদ্যমান আমিন বাজার ল্যান্ডফিলের যে ধারণক্ষমতা সেখানে আর ২ বছর পর্যন্ত বর্জ্য ফেলা সম্ভব। এ কারণে নতুন ল্যান্ডফিল নির্মাণ, ইনসিনারেশন প্ল্যান্ট বসানো, রিসোর্স রিকভারির জন্য অবকাঠামোর সুযোগ স্থাপন, মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও কম্পোস্ট প্ল্যান্ট স্থাপনের মাধ্যমে আমিনবাজার ল্যান্ডফিল সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯/আসাদ/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়