ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী নানজীবা

জুনাইদ আল হাবিব || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০৬, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী নানজীবা

নানজীবা খান

জুনাইদ আল হাবিব : দুরন্ত কৈশোর পাড়ি দেয়ার আগেই উজ্জ্বল তারুণ্যের হাতছানি। একাধারে ট্রেইনি পাইলট, উপস্থাপিকা, নির্মাতা, লেখক, সাংবাদিক, ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর, বিএনসিসি ক্যাডেট অ্যাম্বাসেডর, ইউনিসেফ বাংলাদেশের তরুণ প্রতিনিধি এবং বিতার্কিক তিনি। সবেমাত্র ১৮ বয়স ছুঁয়েছেন। এত কম সময়ে বেশি সাফল্যে অনন্য তিনি। একই বয়সের কেউ যখন এমন বিরাট সাফল্যের ধারে কাছেও নেই, তখন তাঁর এমন অর্জন রীতিমতো অবাক করে সবাইকে। বলছিলাম, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী কিশোরী নানজীবা খানের গল্প।

সুশিক্ষিত মানুষ গড়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশি মেধাবী শিক্ষার্থীদের অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষার জন্য সহযোগিতা করে আসছে অস্ট্রেলিয়ান শিক্ষা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান স্টাডিনেট। নানজীবা নিজেও স্টাডিনেট’র একজন শিক্ষার্থী। তবে এখানে শুধু শিখছেনই না নানজীবা। সম্প্রতি স্টাডিনেট’র বাংলাদেশ শাখার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে বেশ আলোচনায় উঠে আসেন বাংলাদেশি এই কিশোরী।

এছাড়াও নানজীবা ‘এরিরাং ফ্লাইং স্কুল’ এ ‘ট্রেইনি পাইলট’ হিসেবে অধ্যয়ন করছেন। স্বপ্ন আকাশ ছোঁয়ার। ৬ ঘণ্টা ১৫ মিনিট নিজে সেসনা-১৫২ এয়ারক্রাফট দিয়ে আকাশে উড়েছেন।

শিশুকাল থেকেই অর্জনের ঝুলি ভরা শুরু হয়েছে। ছবি আঁকায় আন্তর্জাতিক পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই যাত্রা শুরু হয়। ‘ইয়ুথ অ্যাচিভমেন্ট’ ‘আলোকিত নারী সম্মাননা স্মারক’, ‘জিনিয়াস আওয়ার্ড’, প্রথম প্রামাণ্যচিত্র ‘সাদা কালো’ পরিচালনার জন্য ‘ইউনিসেফের মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড’সহ নানা পুরস্কার অর্জন করেছেন। স্কুল ও কলেজ জীবনে বিতার্কিক হিসেবেও নানজীবা অর্জন করেছেন বেশ কিছু জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পুরস্কার। পেয়েছেন উপস্থিত ইংরেজি বক্তৃতায় বিএনসিসি ও ভারতেশ্বরী হোমসের প্রথম পুরস্কার।

নানজীবার এমন অর্জনগুলোর পেছনে আসলে কার অনুপ্রেরণা সব সময় শক্তি যোগায়? নানজীবার সহজ উত্তর, ‘আমার মা ও ছোট ভাই জীমের অনুপ্রেরণা আমার কাজকে গতিময় করেছে।’

‘মুদ্রার যেমন এপিঠ-ওপিঠ দুই পিঠই থাকে। ঠিক তেমনি সব জায়গাতেই ভালো-খারাপ মিলিয়ে মানুষ থাকে। পেশাদার আচরণ ও কৌশলী দক্ষতার মাধ্যমে প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা সম্ভব।’- প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা সম্পর্কে বলছিলেন নানজীবা।
 


অল্প বয়সেই ব্যাপক সাফল্য। সফলতা অর্জনের জন্য আপনি কেমন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতেন? এমন প্রশ্নে নানজীবা বলছিলেন, ‘আমি সমাজের তথাকথিত রীতি মানিনা। আমার মনে হয় সমাজের সবার কথা শোনার প্রয়োজন নেই। কারণ, একসময় নারী অধিকার ও নারী শিক্ষা বিরোধী এমনকি ভয়ংকর সতীদাহ প্রথাকেও সেই সমাজের অধিকাংশ মানুষ সমর্থন দিয়েছিল। তাই সমর্থনের পাল্লা ভারী হওয়ার মানে এই নয় যে, সমাজের সব প্রচলিত রীতি ঠিক। আর আমি সেটাই করি যেটা আমার কাছে মনে হয় দিনশেষে আমাকে খুশি ও সফল ভাবতে সাহায্য করবে। কে কি বলল সেগুলো নিয়ে মাথা ঘামানোর মতো বিন্দুমাত্র সময় আমার হাতে নেই। আমি পরিবর্তনে বিশ্বাস করি, উগ্রতায় নয়। আমি কখনই খুব সাধারণ জীবনযাপন করতে চাইনি। আমি চেয়েছি আমি এমন কিছু করব যেটা আমার নিজের পরিচয় তৈরি করবে।’

সব মিলিয়ে নানামুখী কাজ করতে গিয়ে কেমন অভিজ্ঞতা হয়েছে? জানতে চাইলে নানজীবা বললেন, ‘মিশ্র অভিজ্ঞতা। সহযোগিতা আমাকে একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেলেও অসহযোগিতা আমাকে ১০ ধাপ পিছিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। অনুপ্রেরণা ও তিরস্কার দুটোই পেয়েছি। আগে নেগেটিভ বিষয়গুলো কষ্ট দিত। এখন মনে হয় আমার অর্জন ও ব্যর্থতা দুটোই আমার। তাই এখানে অন্য মানুষের কোনো ভূমিকা নাই। খারাপ সময়ে সুসময়ের বন্ধুরা আসেনা এটা মাথায় রেখেই চলতে হবে।’

নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকার কথা জানিয়ে নানজীবা বলছিলেন, ‘আমি খুব একরোখা। আমি সবার মতামত শুনি বিচার করি কিন্তু সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আমি সেটাই করব যেটা আমার কাছে ভালো মনে হয়। কারণ জীবনটা আমার, অন্য আরেকজন আমাকে যতটুকু জানে তার থেকে আমি আমাকে ভালোমতো চিনি। তাই আমি বলি আমাকে বোঝাতে আসা আর মরুভূমিতে গিয়ে ধুলা ঝাড়ু দেওয়া একই কথা।’

নানজীবা ভবিষ্যত পরিকল্পনা ও স্বপ্ন তুলে ধরে বলেন, ‘সম্প্রতি  অস্ট্রেলিয়ান শিক্ষাবিষয়ক সংস্থা ‘স্টাডিনেট’ বাংলাদেশ শাখার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করছি। সাড়ে ৬ ঘণ্টা সেসনা ১৫২ এয়ারক্রাফট দিয়ে আকাশে উড়েছি। আমার স্বপ্ন আকাশ ছোঁয়ার। বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা সত্যিই আনন্দের। এই সমাজ নারীদের আইটেম গার্ল, নায়কের নায়িকা ও পুরুষের সঙ্গী হিসেবে দেখে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। তাই সময় এসেছে নারীদের নেতৃত্ব দেওয়ার মাধ্যমে নিজকে প্রমাণ করার।’




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়