ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বাঁধ মেরামতে তরুণ যোদ্ধাদের সাফল্য

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২২, ৩ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
বাঁধ মেরামতে তরুণ যোদ্ধাদের সাফল্য

কয়রায় বেড়িবাঁধ মেরামতে স্বেচ্ছাশ্রমে স্থানীয়দের সঙ্গে কাজ করছেন তরুণ যোদ্ধারা

‘আমাদের তরুণ যোদ্ধারা কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরিয়ে দিয়েছে প্লাবিত এলাকার মানুষের মধ্যে। তাদের নিরলস পরিশ্রমে ভেঙে যাওয়া বাঁধের ১১ স্থানে অস্থায়ীভাবে মেরামত কাজ শেষ হয়েছে। মন থেকেই ধন্যবাদ জানাই সব তরুণ যোদ্ধাদের।’

ভয়াল সুপার সাইক্লোন ‘আম্ফান’র আঘাতে লণ্ডভণ্ড হওয়া খুলনার উপকূলীয় উপজেলা কয়রার ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ মেরামতে তরুণ-যুব সমাজের ভূমিকাকে এভাবেই তুলে ধরেছেন স্থানীয় সংবাদকর্মী হারুন-অর-রশীদ। তিনি তার ফেসবুক আইডিতে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এসব তরুণ যোদ্ধাদের।

এদিকে, তরুণ যোদ্ধাদের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে স্থানীয় বাসিন্দাদের অংশগ্রহণে ইতোমধ্যেই আলোচিত হরিণখোলাসহ কয়রার ১১টি বেড়িবাঁধ মেরামত করা সম্ভব হয়েছে। তবে, ২/১টি বাঁধ নদীতে জোয়ারের পানির তোড়ে পুনরায় ধসে গেছে এবং আরও কয়েকটি ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে।

এর আগে ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আঘাতে কয়রা উপজেলার হরিণখোলাসহ ১৪টি পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে যায়। এতে ৪২টি গ্রাম প্লাবিত হয়।

কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম শফিকুল ইসলাম এলাকাবাসীর উদ্যোগে এ পর্যন্ত ১১টি স্থানে বাঁধ মেরামত করা সম্ভব হয়েছে বলে নিশ্চিত করে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে বাঁধ ভাঙার পর থেকে স্থানীয়দের নিরলস পরিশ্রমে বেশিরভাগ মোরামত শেষ করা হয়েছে। এতে সাময়িকভাবে পানি প্রবেশ ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। এবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে বড় জোয়ারে ওই বাঁধ আবারও ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বাঁধ মেরামতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

সংবাদকর্মী হারুন-অর-রশীদ তার ফেসবুক পোস্টে আরও উল্লেখ করেন, ‘যারা পেছনে থেকে শক্তি ও সাহস জুগিয়েছেন তাদের জানাই অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। বিশেষ করে আমাদের এমপি ও কয়রা উপজেলা পরিষদের বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যানকে। যারা কয়রার মানুষের দুর্দশা লাঘবে তরুণদের কাজে উৎসাহ ও প্রেরণা জুগিয়েছেন। যেসব তরুণ যোদ্ধা দুর্গত মানুষকে উদ্ধারে দিনরাত কাজ করেছেন- তারা হলেন কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের নেতা ইমতিয়াজ উদ্দীন, স্বাধীন সমাজ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আবু সাঈদ খান, মানব কল্যাণ ইউনিটের প্রতিষ্ঠাতা আল আমীন ফরহাদ, হিন্দু-বৌদ্ধ- খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ধীরাজ রায়, তরুণ ছাত্রনেতা ইমরান হোসেন জাকি প্রমুখ। অসুস্থ থাকা স্বত্বেও বাঁধ মেরামতে এগিয়ে এসেছেন তরণ ছাত্রনেতা শরিফুল আলম টিংকু। এভাবে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সমৃদ্ধ হয়ে উঠুক আমাদের কয়রা উপজেলা। আসুন মানুষের জন্য রাজনীতি করি।’

একই পোস্টের কমেন্টসে ইমরান হোসাইন নামে একজন লিখিছেন, ‘আসুন মানুষের জন্য রাজনীতি করি...এটাই আমাদের একমাত্র চাওয়া।’ মোস্তফা ইমরান রাজু লিখিছেন, আলহামদুলিল্লাহ। এই তরুণদের জন্য শুভকামনা। এরাই  কয়রার আগামী, এরাই বদলে দেবে কয়রাকে।’ সেলিম রেজা বকুল লিখেছেন, ‘তরুণ যোদ্ধাদের জন্য প্রাণঢালা ভালোবাসা।’ আনোয়ার হোসাইন লিখিছেন, ‘এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার সময় তার। আমরা তোমাদের সঙ্গে আছি।’

এভাবেই অনেকের প্রশংসার জোয়ারে ভাসছেন তরুণ যোদ্ধারা।

অপরদিকে, ঘুর্ণিঝড় আম্ফানে ভেঙে যাওয়া স্থানীয় হাজতখালি ও গাজীপাড়া বেড়িবাঁধ এখনো মেরামত করা সম্ভব হয়নি। বিপুল সংখ্যক মানুষ বস্তাভর্তি মাটি ফেলে বাঁধ দু’টি ক্লোজ করার চেষ্টা করেও সফল হতে পারেনি। ১ জুন দুপুরে জোয়ারের পানি বেড়ে বাঁধ দুটির ক্লোজিং পয়েন্ট ধ্বসে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে থাকে। ফলে উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের পূর্ব ও পশ্চিম হাজতখালি, গাজীপাড়া, কাটকাটা, কাটমারচর, কাশিরহাটখোলা, গাববুনি এলাকাবাসী উৎকণ্ঠায় রয়েছে।

পাউবোর সেকশন কর্মকর্তা সেলিম মিয়া বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ভেঙে যাওয়া কয়রার সব বেড়িবাঁধ মেরামতে পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রয়োজনীয় বাঁশ, বল্লি, বস্তা, পেরেক সহ অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ করেছে। স্থানীয় হাজার হাজার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ মেরামত কাজে অংশগ্রহণ করেন।

উত্তর বেদকাশি ইউপি চেয়ারম্যান সরদার নুরুল ইসলাম কোম্পানি বলেন, হাজতখালি বেড়িবাঁধ ও গাজীপাড়ার একাংশ মেরামত করার পর জোয়ারের পানির চাপে ভেঙে গেছে। এ দুটি বাঁধ মেরামত করতে আবারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান খান বলেন, হরিণখোলা বাঁধটি সংস্কারের দায়িত্ব নিয়েছে সেনা বাহিনী। আশাকরি দ্রুত বাঁধটি পুরোপুরিভাবে মেরামত করা শেষ হব। এছাড়া অন্যান্য বাঁধগুলোও মেরামতের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

কয়রার হরিণখোলা বাঁধটি মেরামত করতে গিয়ে হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়ে ঈদের জামাত আদায় বিষয়টি আলোচিত হয়। এ বিষয়ে বিতর্কের অবসানের লক্ষে জেলা প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

 

নূরুজ্জামান/এসএম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়